পানি বিদ্যুতের হাহাকার
১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৪ পিএম
চট্টগ্রামে জনজীবন বিপর্যস্ত ঈদের আগে লাটে উঠেছে মার্কেট শপিংমলের ব্যবসা
গ্রীষ্মের তীব্র খরতাপের সাথে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রামে পানি, বিদ্যুৎ সঙ্কট চরমে উঠেছে। নগরজুড়ে চলছে পানি, বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। তাপদাহে এমনিতেই মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তার উপর রাতে-দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। চরম কষ্টে পড়েছেন রোজাদারেরা। বিদ্যুতের সাথে পাল্লা দিয়ে পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাসা বাড়িতে খাওয়ার পানি নেই। মসজিদে নেই ওজুর পানি। ঈদের বাকি আর মাত্র কয়দিন। অথচ তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে মার্কেটে ক্রেতা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে মার্কেট, শপিংমলে।
গত তিন দিন ধরে বৃহত্তর চট্টগ্রামে তীব্র লোডশেডিং চলছে। একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ। গ্যাস ও জ¦ালানি সাশ্রয়ে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র দিনভর বন্ধ রাখা হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় এ মহাবিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদনে ধস নেমেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর এ বেহাল অবস্থায় উৎপাদন কমে গেছে। তাতে শোচনীয় হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতে দিনে দফায় দফায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় সব মিলিয়ে এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টার মত বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলেছে। রাতের বেলায়ও পরিস্থিতি তেমন উন্নতি হয়নি। তীব্র গরমে ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।
শনিবার বিকেলে হাটহাজারী পাওয়ার গ্রিডে অগ্নিকাÐের পর পুরো চট্টগ্রাম কয়েক ঘণ্টার জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পিডিবির কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশ^াস দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। মহানগরীর কোন কোন এলাকায় টানা দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় চলছে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া খেলা। বিদ্যুতের অভাবে কল কলকারখানায় উৎপাদনের চাকা থমকে গেছে। অফিস আদালত, ব্যাংক বীমায় স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মক বিঘিœত হচ্ছে। স্থির ফ্যানের নিচে গরমে হাসফাস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাসা বাড়ির চিত্রও একই রকম। গরমে শিশু এবং বৃদ্ধরা চরম সঙ্কটে পড়েছেন।
গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং সেই সাথে পানি সঙ্কট চরমে উঠেছে। ঘরে ঘরে চলছে পানির হাহাকার। প্রচÐ গরমে ঘামে নাস্তানাবুদ হয়ে গোসল করার সুযোগও পাচ্ছেন না অনেকে। মসজিদে নেই ওজুর পানি। বাসা থেকে ওজু করে আসতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়াসার পানির উৎস হালদা নদীতে লোনা পানির আগ্রাসন ও কর্ণফুলী নদীতে শেওলা জমে যাওয়ায় দৈনিক পানি উৎপাদন কমেছে ১৫ কোটি লিটার। তার উপর লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদনে রীতিমত ধস নেমেছে। এ অবস্থায় রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে ওয়াসা। এর ফলে নগরীর অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং দূরবর্তী এলাকায় পানি সরবরাহ মিলছে না। কোন কোন এলাকার গ্রাহকেরা দুই থেকে তিন দিনেও পাচ্ছে না ওয়াসার পানি। পানি সংকটের কারণে পবিত্র রমজানে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
ওয়াসার প্রকৌশলীরা বলছেন, একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে এসব প্রকল্পের সুফল মিলছে না। নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ কোটি লিটার। পবিত্র রমজানে এ চাহিদা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু ওয়াসার পানি উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৩৬ কোটি লিটার। এর ফলে দিনে ২০ থেকে ২৫ কোটি লিটার ঘাটতি হচ্ছে। এ কারণে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
উৎপাদন কমে যাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলেছে। আগ্রাবাদ, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর, পাহাড়তলী, শেরশাহ, জামালখান, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ, পাথরঘাটা, এনায়েত বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট চলছে। গ্রাহকরা বলছেন, অনেকে পানি ধরার জন্য রাত জেগে অপেক্ষা করছেন। লাইনে ওয়াসার পানি আসলেও বিদ্যুৎ না থাকায় মোটর চালানো যাচ্ছে না। তাতে পানি মজুদ করা যাচ্ছে না। বহুতল ভবনগুলোতে পানি সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। বাসা বাড়িতে প্রয়োজন মেটাতে অনেকে বোতলজাত পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অসহনীয় গরমে বিদ্যুৎ এবং পানি সঙ্কট নগরীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। মহানগরীর চেয়ে জেলা উপজেলায় বিদ্যুৎ সঙ্কট আরও চরম আকার ধারণ করেছে। সর্বত্রই দুর্যোগ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে কেনাকাটায়। নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তার প্রভাবে ঈদ বাজারে ক্রেতার আকাল চলছে। কেনাকাটাও তেমন জমে উঠেনি। শেষ সময়ে বেচাকেনা জমবে এমন প্রত্যাশা ছিল ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের। কিন্তু টানা তিন দিনের লাগাতার লোডশেডিংয়ে সেই আশায়ও গুঁড়েবালি। বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেটে কিছু ক্রেতা থাকলেও সাধারণ মার্কেটগুলোতে তীব্র গরমে ক্রেতার দেখা মিলছে না। এ অবস্থায় চরম হতাশায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ এবং পানি সঙ্কটের অবসান কবে হবে সে ব্যাপারেও কোন আশাবাদ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইলন মাস্কের ডানপন্থী নেতাদের সমর্থন নিয়ে যুক্তরাজ্যে বিতর্ক
থেমে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাসের ধাক্কায় এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত ২, আহত ৫
সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
৭ বিয়ে নিয়ে যা বললেন সোহেল তাজ
তিউনিসিয়ায় দুই নৌকাডুবিতে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু
লাস ভেগাসে সাইবারট্রাক বিস্ফোরণ: বিশেষ বাহিনীর সেনার আত্মহত্যা
৮ ডিগ্রিতে নামলো তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ
আরিচা-কাজিরহাট ফেরি ৬ ঘণ্টা পর আবার চলাচল শুরু
আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতা বহিষ্কার
দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার অভিযানের প্রস্তুতি, বিক্ষোভে উত্তাল দেশ
ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
গাজায় চিকিৎসা সংকট সমাধানে ডব্লিউএইচও প্রধানের আহ্বান
ঢাবি শিবিরের নতুন সভাপতি ফরহাদ, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম
সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত