স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা
২০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৭ পিএম
বিআরটিসি এবং গণপরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে দ্বিগুন-তিনগুন
ভাড়া আদায়ের অভিযোগ : সদরঘাটের পুরনো চিত্র
রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে টিকিটের জন্য ‘হাহাকার নেই’
তবে যাত্রীদের দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে
রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে যাচ্ছেন। প্রতিদিন কয়েক লাখ করে মানুষ সড়ক, নৌ, রেল ও উড়োজাহাজে গ্রামে যাচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে রাজধানীর বাট টার্মিনালগুলোতে টিকেটের জন্য হাহাকার নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না টার্মিনালে। কমলাপুর রেলস্টেশনে চিরচেনা ভিড় নেই। শিডিউলের বিপর্যয় নেই। যাত্রীদের হট্টগোল নেই। মহাসড়কগুলোতে নেই দীর্ঘ যানজট। ঈদযাত্রা এবার স্বস্তিদায়ক। কিন্তু তীব্র দাবদাহে গরমের কারণে ঘরমুখো মানুষের সেই স্বস্তি মিলছে না। তীব্র দাবদাহে ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। গরমের কারণে যাত্রাপথেই অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাস, ট্রেন, লঞ্চে হাতপাখা নিয়ে উঠেছেন কেউ কেউ। লঞ্চেও গ্রামে ফিরছেন মানুষ পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে।
ঘরমুখী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্যবার ঈদযাত্রায় ঢাকার রাস্তায় যে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়, এবার তা কিছুটা কম। রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকলেও বাস, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়তে হচ্ছে না। ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিং, ঢাকা মানিকগঞ্জ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও প্রতিবছরের মতো ‘ভয়াবহ যানজট’ নেই। বাসের মালিকরা গলাকাটা ভাড়া আদায় করলেও যানজট না থাকায় ঈদ যাত্রা স্বস্তি রয়েছে। এমনকি সরকারি সংস্থা বিআরটিসি যাত্রীদের কাছ থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল ঢাকার বাইরে গেছে ২৯ লাখ ৯২৩ টি সিম। আর ঢাকায় এসেছে ১৩ লাখ ৩০৫টি সচল মোবাইল সিম।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় ঈদযাত্রীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, নগর গণপরিবহনে ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ রয়েছে। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সদরঘাট, মহাখালী ও গাবতলিমুখী পরিবহনে ভিড় সবচেয়ে বেশি। এসব স্টেশন থেকে কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউবা লঞ্চে চেপে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন। কোথাও রাস্তা ফাঁকা থাকলেও সিগন্যালগুলোয় যানজট লেগে যাচ্ছে। গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালীর বাস টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারগুলোতে ঈদযাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। একই চিত্র কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে। বাস কাউন্টারে দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, এবার ঈদের আগে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় কম। পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করা বিপুল সংখ্যক গাড়ি কিছুক্ষণ পরপর ২১টি জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। আর লঞ্চের কর্মচারীরা বলছেন, পদ্মা সেতু দিয়ে বাসের যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় লঞ্চের যাত্রী কিছুটা কমেছে।এবারের ঈদযাত্রায় তিন মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ ভোগান্তি ছাড়াই পার হচ্ছেন ঘরমুখী মানুষ। মহাসড়কগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেশি হলেও যানজট নেই। তবে চলমান দাবদাহ যানবাহনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভোগাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও এশিয়ান বাইপাস সড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানবাহনের তেমন কোনো চাপ দেখা যায়নি।এসব মহাসড়কে চলমান যানবাহনগুলোকে কোনো যানজটে আটকে থাকতে হয়নি। গাজীপুরের চন্দ্রা, যাত্রাবাড়ি শনির আখড়া, ঢাকা পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়ের ধোলাইপাড় এলাকায় কিছুটা যানজট দেখা গেলেও পুরো সড়ক ফাঁকা। তবে যাত্রীদের অভিযোগ প্রতিট রুটে বাসভাড়া দ্বিগুন-তিনগুন আদায় করা হচ্ছে।
জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর, মদনপুর, মোগরাপাড়া ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাব বিশ্বরোড ও গাউছিয়া এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে যানবাহনের চাপ ছিল। তবে বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপ কমেছে। এ সময় যাত্রীদের কেউ কেউ পরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। কাউন্টারগুলোর সামনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের প্রচÐ রোদ ও গরমে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
রাজধানীর টিকুটুলি থেকে কুমিল্লা ও চাঁদপুরের কয়েকটি বাস চলাচল করে। যাত্রীরা অভিযোগ করলেন প্রতিটি বাসে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আগে যে বাসের ভাড়া ছিল ৪শ টাকা সে বাসে ৬শ করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
বাস কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা এমদাদুল হক জানান, ঢাকার সায়দাবাদে গাড়ির চাপ আছে। ঢাকা থেকে বের হতেই বাসগুলো সময় নিচ্ছে। গরমে যাত্রীরা অস্থির। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়ক তিনটিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, ঈদযাত্রায় স্বাভাবিকের তুলনায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ একটু বেশি। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে, মঙ্গলবার সেখানে ৪৪ হাজার এবং বুধ ও বৃহস্পতিবার ৫০ হাজারেরও বেশি যানবাহন মেঘনা গোমতী টোল প্লাজা পাড় হয়েছে।
আরাফাত সুমন নামে এক বাসচালক বলেন, যানবাহনের চাপ রয়েছে। যাত্রাবাড়ি-শনিরআখড়া পর হলে যানজট তেমন নেই। হোসেন আলী নামের এক যাত্রী বলেন, ঈদের দুর্ভোগ এড়াতে আরও দুইদিন আগেই পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর আমি গ্রামের দিকে রওয়ানা দিয়েছি। মহাসড়কে অন্যবারের তুলনায় এবারের অবস্থা বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। আশা করছি, কোনো ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যস্থলে যেতে পারবো।
পরিবার নিয়ে সাইনবোর্ড থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন শাহরিয়ার দিপ্ত। কথা হলে তিনি বলেন, মহাসড়কে যানজট না থাকলেও তীব্র গরমে পরিবারের সবার অবস্থা খুব খারাপ। সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর তাড়াতাড়ি চলে এলেও মদনপুরে আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখানে যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে।
মাহিম আহমেদ নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, সবসময় ঈদ গ্রামের বাড়িতেই করা হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। মহাসড়কে যানজট না থাকায় এক প্রকার স্বস্তি কাজ করছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পরিস্থিতি তুলে ধরে ভুলতা হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, এই মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে ভুলতা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশের পাঁচটি টিম কাজ করছে। ভুলতা থেকে নরসিংদী পর্যন্ত পুলিশের বাড়তি সতর্কতা আছে। এ ছাড়া দুটি দল সার্বক্ষণিক সড়কে টহল দিচ্ছে। সড়কে যানবাহনের চাপ নেই। ঈদযাত্রাকে আরামদায়ক করার পাশাপাশি ঘরমুখী মানুষ যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে পুলিশ। এশিয়ান হাইওয়ের চান টেক্সটাইল, কাঞ্চন টোল প্লাজা ও কাঞ্চন সেতুর পশ্চিম পাশে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের তিনটি দল সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দায়িত্বে থাকা কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. শরফুদ্দিন বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। টিকিট কাউন্টারগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধেও তারা তৎপর আছেন। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। মদনপুর ও মোগরাপাড়ায় যানজট নিরসনে বিশেষ তদারকি করা হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল দিনভর। এতে মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়েছে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। পাশাপাশি মহাসড়কে যানবাহনের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় দীর্ঘ যানজটের তৈরি হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সাভারের কবিরপুর থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছাড়িয়েছে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের প্রায় ২০টি জেলার মানুষ যারা গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় বসবাস করেন তারা চন্দ্রা হয়ে ঈদে বাড়ি যান। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে যান ও যাত্রী উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের তৈরি হয়েছে। বাসগুলো মহাসড়কের পাশে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুস সাকিব খান জানান, হঠাৎ বাস ও যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুলিশের কয়েকশ সদস্য যান চলাচল নির্বিঘœ করতে কাজ করে যাচ্ছে। কিছুটা যানজট তৈরি হয়েছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে তা কেটে যাবে।
তবে ঈদ যাত্রার তৃতীয় দিনে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম প্রান্তে কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। মহাসড়কে কড়া নজরদারি থাকায় এবং ট্রাফিক নিয়মে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে ঈদ যাত্রায় তেমন কোনো সমস্যা পোহাতে হয়নি বলে জানান সড়ক সংশ্লিষ্টরা।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন ইয়াজদানি বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে প্রায় ৩৭ হাজার যানবাহন পার হয়েছে। যা গত ২৪ ঘণ্টার তুলনায় বেশি।
সেহরির পর থেকে যানবাহনের চাপ বাড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন চলাচল আবারো স্বাভাবিক হয়ে পড়ে। তবে কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গার্মেন্টস কর্মীরা ফিরতে শুরু করলে চাপ বাড়তে পারে। তবে পুলিশ প্রস্তুত আছে বলে জানান ওসি রওশন।
উত্তরাঞ্চলের ঈদযাত্রাকে সুশৃংখল করতে উত্তরবঙ্গের প্রবেশমুখে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার মহাসড়কে প্রায় ৮ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে মাইকিং করে চালকদের সচেতন করছেন। পাশাপাশি কেউ নিয়ম ভেঙ্গে ওভারটেক করার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিহত করা হচ্ছে। ফলে মহাসড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রওশন ইয়াজদানি বলেন, এ বছর মহাসড়কে জিকজাঁক লেন তৈরি করা হয়েছে। ফলে চাইলেই কোনো গাড়ি একটি লেন পরিবর্তন করতে পারবে না, কেউ ওভারটেক করতে চাইলেও মাইকে তাদের সচেতন করা হচ্ছে, রাস্তার প্রতিটি পয়েন্টে কঠোর নজরদারি থাকায় মহাসড়কে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি বলে জানান তিনি।
গাজীপুর থেকে পাবনায় ঈদ করতে আসা গার্মেন্টসকর্মী মোমেনা খাতুন বলেন, সকাল ৮টার দিকে গাজীপুরের মাস্টারবাড়ি থেকে রওনা হয়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল পৌঁছে গেছি। তবে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কম সময়ে পার হতে পারলেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবারিতে যানজটের কারণে প্রায় ঘণ্টা খানেক বসে থাকতে হয়েছে।
রংপুরের এস আর বাসের চালক মো. মিলটন হোসেন বলেন, মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারণ রাস্তায় গাড়ি বিকল হওয়া ও দুর্ঘটনা। তবে এবার কঠোর নজরদারি থাকায় কোথাও সেই ধরনের কোন সমস্যা হয়নি।
সদরঘাটের চিত্র : ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় অবশেষে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী সংকটে ভোগা দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলোতে যাত্রীচাপ বেড়েছে। হাজার হাজার যাত্রীবোঝাই করে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। সদরঘাট পুরনো চেহারা ফিরে পেয়েছে।
ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকটা স্বস্তি নিয়েই মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণের জেলাগুলোর মানুষকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সদরঘাট ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। নিয়মিতভাবে চলাচলকারী লঞ্চগুলো পাশাপাশি স্পেশাল ট্রিপ দেয়া লঞ্চগুলোও পূর্ণ যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যেখানে যাত্রীর অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ ছাড়তো না সেখানে এখন লঞ্চগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়ছে। খালি নেই লঞ্চগুলোর কেবিন, ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়।
এ ছাড়া বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী যাত্রীদের অনেকেই ঈদের আগের দিনের কেবিন বুকিং দিতে এসেছেন। আবার লঞ্চের ডেকে জায়গা করে নিতেও অনেকে আগেভাগে ঘাটে চলে এসেছেন।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামার মুহ‚র্তে যাত্রী চাপ বাড়তে থাকতে থাকে। যাত্রীদের বেশিরভাগই বরিশালগামী লঞ্চে ভিড় করছেন। এছাড়াও পটুয়াখালী বগা ইলিশা এসব রুটেও যাত্রী আসতে শুরু করেছে। এদিকে যাত্রী চাপ আর লঞ্চে ভিড় যেন সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলছে।
সদরঘাটের একাধিক লঞ্চের সুপারভাইজার আর টিকিট কাউন্টার থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রী সংখ্যাই বেশি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোই লঞ্চে যাচ্ছে। সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই যাত্রীর চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। টিকিট বিক্রির চাপে লঞ্চ সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলারই সময় পাচ্ছেন না।
এমডি পূবালী-১ লঞ্চে করে রাজধানীর বসিলার বাসিন্দা সোহেল রানা বরগুনায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে। তিনি বলেন, ঘাটে ভিড় এবং যাত্রী বেশি থাকলেও সময় মতো লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। আর ভিড় ঠেলে লঞ্চে উঠতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আহমেদ ঈদ করতে পরিবার নিয়ে পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তিনি জানান, এম ভি এ আর খান লঞ্চের টিকিট পেয়েছি। তবে ঘাটে অনেক লোকের ভীড়। লঞ্চে ঠিকভাবে উঠতে পারলেই হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, বরিশাল রুটে এতোদিন দুটি করে লঞ্চ চলতো, ঈদ উপলক্ষে চলছে ৮টি লঞ্চ। পটুয়াখালী রুটে চলাচল করতো একটি লঞ্চ, এ রুটেও চলছে ৮টি লঞ্চ। ভোলা, ইলিশা রুটে যাত্রী আসছে। সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, ঈদ যাত্রায় এবার কোনো ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আর যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ লঞ্চ চলবে। এসব লঞ্চের কেবিন বুকিং ও ডেকের টিকিট ঘাটে এসেই নিতে পারবেন।
কমলাপুর রেল স্টেশন : কমলাপুর রেলস্টেশনে চিত্র পাল্টে গেছে। কোনো হুড়োহুড়ি নেই। কড়া চেকিংয়ে স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা। ভেতরেও যাত্রীদের কোনো তাড়াহুড়ো নেই। ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছেন। নির্দিষ্ট সময় পর পর একের পর এক ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। শিডিউল বিপর্যয়ের অভিযোগ নেই। ঈদযাত্রায় এমন অভিজ্ঞতায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিমত, এবারের ঈদযাত্রায় ট্রেনে কোনো ধরনের দুর্ভোগ হয়নি। অনলাইনে টিকিট কাটায় তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। স্বস্তি নিয়েই গ্রামে ফিরতে পারছেন তারা। এবারই প্রথম ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ৭ এপ্রিল থেকে অনলাইনে শুরু হয় নিজের এনআইডির (জাতীয় পরিচয়পত্র) মাধ্যমে যাত্রীদের টিকিট প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় টিকিটের সঙ্গে এনআইডি মিলিয়ে তারপরেই প্ল্যাটফরমে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে যাত্রীদের। তিন স্তরে টিকিট চেকিং করা হচ্ছে। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকেই স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না নিরাপত্তা প্রহরীরা। তবে এবার ট্রেনের টিকেট সাধারণ যাত্রীদের ভাগ্যে কমই জুটেছে।
পাটুরিয়া ঘাট : চিরচেনা পাটুরিয়া ঘাট যেন অচেনা। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ না থাকায় এবারের ঈদ যাত্রায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে এই নৌরুটে যাতায়াতকারী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ২১টি জেলার মানুষ। নির্বিগ্নে ঈদ যাত্রার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে পদ্মা সেতু। সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুট যানজট এবং কোলাহলমুক্ত।
বৃহস্পতিবার সরজমিন পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, পর্যাপ্ত পরিমাণ ফেরি থাকলেও আলোচিত পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন এবং যাত্রীর চাপ নেই। ২০টি ফেরি, ৩৩ টি লঞ্চ এবং পাঁচটি ঘাট সচল যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের জন্য। সকালের দিকে ছোট গাড়ি, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেলের সামান্য চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে চাপ কমে গেছে। যানবাহন এবং যাত্রীরা ঘাটে আসা মাত্রই পদ্মা পাড়ি দিয়ে যাচ্ছে যে যার আপন ঠিকানায়। ঈদ যাত্রায় স্বস্তির কথা জানালেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। যশোরের রাজিব মিয়া জানালেন, ১৫ বছর ধরে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া হয়ে রাজধানী ঢাকা শহরে আসা যাওয়া করছি। এই প্রথমবারের মতো ঈদ যাত্রায় স্বস্তি পেয়েছি।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এই নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমে গেছে। ঈদের সময় তো এক ধরনের যুদ্ধ করে এই ঘাট পাড়ি দিতে হতো। এবার ঘাটে এসে পাঁচ মিনিট সময় লাগেনি ফ্রিতে উঠে গেলাম।
খুলনার জাকির হোসেন জানান, একবার ভেবেছিলাম পরিবার-পরিজন নিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে গ্রামের বাড়ি যাব। কিন্তু শুনেছি পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নো রুটে যানজট নেই। তাই সকালে ঢাকার মহাখালি থেকে রওনা হয়ে সকাল ১০ টায় পাটুরিয়া ঘাটে এসে পৌঁছাই। কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই নদী পার হতে পেরেছি।
এদিকে ঈদ যাত্রায় পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তি না থাকলেও আরিচা কাজিরহাট নৌরুট পাড়ি দিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের। দেশের উত্তর অঞ্চলের মানুষজন যমুনা সেতু ব্যবহারের পাশাপাশি নতুন চালু হওয়া আরিচ-কাজিরহাট নৌরুট দিয়ে রাজধানী ঢাকার যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু আরিচা কাজিরহাট নৌ রুটে মাত্র ছয়টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করায় আরিচা ঘাটে যানবাহনের চাপ পড়ে গেছে। মূলত ফেরি সংকটের কারণেই ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।
বিআইডবিøউটিসি আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম মো. খালেদ নেওয়াজ জানিয়েছেন, ঈদে যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘেœ নিয়ে পারাপারের জন্য পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুটে ২০টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যানবাহন ও যাত্রী কম থাকায় ১৮টি ফেরি চলাচল করছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বোয়ালমারীতে পর্ণোগ্রাফির চক্রের ২ সদস্য আটক, প্রায় বারো লাখ টাকা খোয়ালেন প্রবাসীর স্ত্রী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নিখোঁজের একদিন পর বৃদ্ধের মরদেহ মিলল পুকুরে
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কে ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
বুধবার রাতে সচিব নিবাসেও আগুন লেগেছিল
শৈলকুপায় নিহতের ঘটনায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর গুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা
মধ্যরাতে আগুন লেগেছিল সচিব নিবাসেও
গোয়েন্দা সংস্থা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে : রিজভী
ফুলপুরে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন
সচিবালয়ের ৮ তলায় মিলল কুকুরের দগ্ধ মরদেহ, চাঞ্চল্যের সৃষ্টি
সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরা পল্লীতে ফ্রিজ থেকে উদ্ধার হলো হরিণের মাংস
ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা সম্পন্ন
প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজে রজতজয়ন্তী উদ্যাপন
‘সচিবালয়ে আগুনের পেছনে আওয়ামী দোসরদের ষড়যন্ত্র রয়েছে’
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড : প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি ফখরুলের
আটঘরিয়া-চাঁদভা হাড়লপাড়া সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে দুর্ভোগে পথচারীরা
পুড়ে যাওয়া ২ মন্ত্রণালয় দেখে আসিফ মাহমুদ: ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে’
দেশে ফিরলেন মিজানুর রহমান আজহারী, অংশ নেবেন মাহফিলে
আরেকটি বিধ্বংসী দ্বিশতক হাঁকালেন রিজভি
অবৈধ শিসা তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর
সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন , বন্ধ দাপ্তরিক কাজ