পানাহারে হালাল হারাম ও স্বাস্থ্যের যত্ন
২১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৭ পিএম
রমজান মসের সিয়াম সাধনায় প্রধান বিষয় ছিল খাদ্য ও পানীয় নিয়ন্ত্রণ। রোজাদারকে একটানা এক মাস সকাল থেকে সন্ধ্যা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। আমাদের শরীরের যাবতীয় রোগ শোকের মূলে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য ও পানীয়। ডায়বেটিসসহ মারাত্মক রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাবের বর্তমান যুগে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্যে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা যুক্তি দিয়ে বুঝানোর প্রয়োজন হয় না। রমজান প্রমাণ করে, খাদ্য বা পানীয়সহ যে কোনো কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপে প্রধান ভূমিকা ইচ্ছাশক্তির। ধুমপান, পানে জর্দা, এমনকি অনিয়ন্ত্রিণ চা পানে অভ্যস্ত লোকেরা কথা কথায় অভ্যাসকে দায়ী করেন। অথচ এ ধরনের অনেক লোককে দেখা যায় রমজানে দিনের বেলা এসব থেকে বিরত থাকেন। ইফতারের পরক্ষণে আবার এগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তা প্রমাণ করে, দোষ অভ্যাসের নয়; বরং ইচ্ছাশক্তির। তাদের নিজের কাছে প্রশ্ন করা দরকার, রোজার দ্বারা মন্দ অভ্যাসগুলো যদি বর্জন করতে না পারলাম তাহলে উপবাস পালন দ্বারা কী লাভ হল।
ইফতারের খাদ্যতালিকা নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার। ছোলা পেয়াজুসহ ভাজাপোড়া তৈলাক্ত খাবারের মহাধুমধাম হয় ইফতারে। এর প্রতিকার অবশ্যই হতে হবে। মহামারি হিসেবে ছড়িয়ে থাকা এই প্রবণতায় আমরা নিজেরাও অনেকটা আক্রান্ত। এর বিরুদ্ধে জাতীয় সচেতনতা সৃষ্টি হতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও রমজান ও সিয়াম সাধনা নিয়ে গবেষণা করে। সবার প্রতি অনুরোধ, সামনের বছর রমজানের আগেই ইফতারের খাদ্যতালিকায় কী কী জিনিস থাকা দরকার এবং কোনটি কতখানি ক্ষতিকর তার স্বাস্থ্যগত ব্যাখ্যা জাতির সামনে তুলে ধরলে এই আপদ দূর করা অসম্ভব নয়। আমাদের ছোটবেলায় ধুমপান অত্যন্ত ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। প্রচার মাধ্যমে ধুমপান সম্পর্কে সতর্কতা প্রচারের ফলে অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ইফতারের খাদ্যতালিকার বেলায়ও স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়গুলো যথার্থভাবে তুলে ধরলে সুফল অব্যশই পাওয়া যাবে।
একটি বর্ণনায় পড়েছিলাম, ইসলামের প্রথম যুগে মদীনায় বাইরের একজন চিকিৎসক গিয়েছিল। কিছুদিন অবস্থানের পর কোনো রোগীর দেখা না পেয়ে অবাক হন। জিজ্ঞাসা করেন, এদেশে কোনো রোগী পাওয়া যায় না কারণ কী। লোকেরা বলল, আমরা ক্ষুধার্ত না হলে খাই না আর খেতে বসলে ক্ষুধা থাকতে থাকতে খাওয়া শেষ করি। এটি আমাদের নবীজির শিক্ষা। একারণে আমরা সহজে রোগাক্রান্ত হই না।
‘আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি খাবার খেত প্রচুর পরিমাণে; লোকটি ইসলাম গ্রহণের পর দেখা গেল খুব অল্প পরিমান খাবার গ্রহণ করে। বিষয়টি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে তিনি বললেন, ব্যাপার হল মুমিন খাবার খায় এক আঁতে আর কাফের খাবার খায় সাত আঁত পূর্ণ করে। -(বুখারী, হাদীস নং ৫৩৯৭)
এই হাদীস থেকে বুঝা যায়, ইসলামী চিন্তা চেতনা ও অনুশাসন অলক্ষে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে। জন্মের পর থেকে আমরা মুসলমান, আমাদের চিন্তা চেতনায় শুদ্ধতার অভাবে ইসলামের অনেক কিছু আমরা খুঁজে পাই না; কিন্তু সমাজতাত্তি¡ক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে আমরা স্বীকার করতে বাধ্য হব যে, হালাল খাবার এবং রমযানে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের যে তালিম আমাদের সমাজে বিদ্যমান তার দ্বারা আমরা অবশ্যই উপকৃত। আমাদের মাঝে হারাম হালালে বাছবিচার করার যেটুকু সচেতনতা এখনো বিদ্যমান তার পেছনে রয়েছে পারিবারিক শিক্ষা ও রমজানের সাধনার মতো অভ্যাস গড়ার অনুশীলন।
বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির কবি ইরান সফরে গিয়েছিলেন। ইরান ইরাক যুদ্ধ তখনো শেষ হয়নি। আমি তখন রেডিও তেহরানের চাকরি ছেড়ে দেশে চলে আসব। বর্ধিত কদিন ছুটির সুযোগে তেহরানের পাঁচতারা হোটেলে মান্যবর কবির সঙ্গে ছিলাম। দেশে তিনি বাম ঘরাণার বুদ্ধিজীবি হিসেবে পরিচিত। বললেন, মোল্লারাও এত ভালো হতে পারে আপনার সাথে না থাকলে বুঝতে পারতাম না। তার লাগেজের বাইরে একটি মগ দেখে জিজ্ঞাসা করলাম। বললেন, এসব হোটেলে বাথরুম সেরে পানি নিয়ে পরিষ্কার হওয়ার ব্যবস্থা থাকে না, তাই বিদেশ সফরে সাথে মগটা নিয়ে যাই। ভাবলাম, পারিবারিক যে শিক্ষা ছোটবেলায় রপ্ত করেছেন তার প্রভাবে এখনো অলক্ষে তার মনে পাকি না পাকির চেতনা কাজ করছে। প্রশ্ন হল, বর্তমানে বাড়িঘর নির্মাণে যেভাবে হাই কমোড সংস্কৃতির বিস্তার ঘটছে এবং তাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অভ্যস্ত করছি তাতে তাদের মধ্যে কি পাকি নাপাকির স্পর্শকাতরতা থাকবে এবং মুসলমান হিসেবে জীবনযাপন করতে পারবে।
বিয়ে বাড়িতে খাবার টেবিলে খবর ছড়িয়ে পড়ল, কবুতরের রোষ্ট এর সাথে কাকের রোস্টও পরিবেশন করা হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রাবাসের হোস্টেলে যদি বলা হয়, খাসির মাংসের সাথে শিয়ালের মাংসও দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই সবাই সেই খাবার বর্জন করবে। এর কারণ ছোটবেলা থেকে আমাদের সমাজে লালিত হালাম হারামের চেতনা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হালাল খাবারের যে কদর তা বিবেচনায় আনলে আমরা বুঝতে পারব ইসলামের ছায়াতলে পারিবারিক পরিন্ডলে হালাল খাদ্যের যে অভ্যাস আমরা রপ্ত করেছি তার গুরুত্ব কতখানি।
পানাহারে যাকিছু মানুষের স্বাস্থের পক্ষে বা মানবীয় স্বভাবের জন্য ক্ষতিকর তা হারাম করা হয়েছে। হিং¯্র মাংসাসি বন্য বা সামুদিক জন্তু জানোয়ার বা নাপাকি খেয়ে বাঁচে এমন পশুপাখি হারাম হওয়ার পেছনে ইসলামের দর্শন হল, তাতে শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষতি নয়, মানবীয় চরিত্রও ধ্বংস হয়। গায়ে আঁশ বা পাখনা নাই এমন মাছ হারাম হওয়ার পেছনেও একই যুক্তি। কাজেই স্বাস্থ্যরক্ষা ও চরিত্র সচেতনতা উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে হালাল পানাহারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে অবিভাবকদের। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম অবহেলা ভবিষ্যত প্রজন্মকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে বুঝার জন্য একটি উদাহরণ দিয়ে লেখা শেষ করছি।
জাপানে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বন্ধুরা খেতে বসেছে রেস্তোঁরায়। একজন আগে বেড়ে শুকরের মাংস পাতে তুলে নিলে বন্ধুরা বলল, এ কি করছ? জবাব দিল, জাপানীদের কাছে চাকরি করতে এসেছি। তাদের টাকা যদি হালাল হয়, তাদের খাবার কেন হারাম হবে। বন্ধুরা বলল, টাকা আর খাবার কী এক জিনিস। টাকা বা খাদ্য হালাল হারাম হওয়ার সাথে বিজাতি বিধর্মীর কী সম্পর্ক। তাহলে যাও, সাপ, কেঁচো, ইঁদুর বেজি, সব নিয়ে প্রাণ ভরে খাও। নিশ্চয়ই খাবে না। কাজেই হারাম খাওয়ার জন্য কুযুক্তির আশ্রয় নিও না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন