কালীগঞ্জে ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি
২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৫৯ পিএম
ধান গাছ দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু শীষে একটি ধান অবশিষ্ট নেই। সবুজ পাট গাছের কান্ড আছে কিন্তু মাথা নেই। গত সোমবার বিকালে বয়ে যাওয়া হঠাৎ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে এভাবেই ঝিনাইদহের কয়েকটি ইউনিয়নের মাঠে সহাস্রাধিক হেক্টর জমির উঠতি ইরি ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের পশ্চিমে কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের এলাঙ্গী, নওদা গ্রাম, ও বলাবাড়িয়াসহ কয়েকটি গ্রাম এবং পূর্বে শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের শিমলা ও পাতবিলা গ্রাম এবং পূর্বে যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া ও স্বরুপপুর গ্রামের আংশিকসহ সহাস্রাধিক হেক্টর জমির ইরি ধান নষ্ট হয়েছে। একইসাথে মাঠের পাট, কলা, আম লিচু ও সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড তাহদাহের মধ্যে বয়ে যাওয়া ঝড় বৃষ্টি কৃষক ও সাধারণ মানুষসহ প্রাণীকুলের জন্য আর্শিবাদ হলেও উল্লেখিত এলাকায় ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত জানাতে পারেনি জেলা কৃষি অফিস। কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার বিকাল ৩টায় বয়ে যাওয়া কালাবৈশাখী ঝড় এবং সাথে শিলাবৃষ্টি বয়ে যায়। এতে যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া ও স্বরুপপুর মাঠের সামান্য অংশ থেকে শিলাবৃষি শুরু হয়। শিলাবৃষ্টি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যায়। এসময় পার্শবর্তী কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন ও কালীগঞ্জ উপজেলার শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের মাঠ থাকা শত শত কৃষকের উঠতি ইরি ধানসহ পাট ও কলার। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষক কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ের ধলা গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, আমার ৫ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছিলাম। ধান পেকে সোনালী রং ধারণ করেছে। আজকালই কাটার কথা ছিল কিন্তু শিক্ষাবৃষ্টি আমার সব শেষ করে দিয়েছে। ধার দেনা করে চাষ করেছিলাম এখন একটি ধানও পাব না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ের ছোট ঘিঘাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক এমদাদ হোসেন জানান, আমরা চার ভাই চলতি ইরি মৌসুমে ৯ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। আজ অথবা কাল ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার হঠাৎ বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে আমাদের ১০ বিঘা জমির ধান সব পড়ে গেছে। ধানের শীষ আছে কিন্ত একটি ধানও নেই। ৯ বিঘা জমিতে এখন ৯ মন ধানও হবে না।
একই ইউনিয়নের বড় ঘিঘাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক মাইনুর রহমান জানান, দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। আজই কাটার কথা ছিল কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে আমার জমির একটি ধান আর অবশিষ্ট নেই।
উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্য্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, বিকাল তিনটার একটু আগে আকাশে কালো মেঘ জমে বজ্রপাত শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘরের উঠান ভরে যায়। শিলাবৃষ্টতে আমার ইউনিয়নের মাঠে থাকা উঠতি পাকা ধান, কলা ও ফলসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এ নিয়ে কৃষিকর্মকর্তারা কাজ করছেন।
ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা জহুরুল হক জানান, আমার ইউনিয়নের মাঠে চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি ধানের চাষ হয়েছিল। ঈদের দু’এক দিন আগে ধান কাটা শুরু হয়। ৯৫ ভাগ ধান মাঠে দন্ডয়মান ছিল। গত সোমবারের হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে মাঠে থাকা প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ধান গাছ দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু শীষে একটি ধানও অবশিষ্ট নেই। যদিও কৃষকরা বলছেন, ইউনিয়নের সব গ্রামের উঠতি ধানের প্রায় ৮০ শতাংশ শিলাবৃষ্টিতে ঝরে গেছে।
উপজেলার শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের পাতবিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল ওহাব জানান, শিলাবৃষ্টিতে আমার এক বিঘা জমিতে এখন ৮ থেকে ১০ মন ধান পাওয়া যাবে। মাঠের বাকি জমিতেও ধানের একই অবস্থা। একই সময় মাঠের পাট, কলা ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
কৃষক মিজানুর রহমান জানান আমার ২০ বিঘা জমিতে কলার চাষ ছিল। আর কয়েকদিন পরে কলার কাদি কাটা শুরু হবে। তার আগেই ঝড়ে আমার জমির অর্ধেক গাছ পড়ে গেছে।
শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মধাব চন্দ্র বিশ^াস জানান, গত সোমবারের শিলাবৃষ্টিতে ইউনিয়নের শিমলা ও পাতবিলা গ্রামের মাঠে প্রায় ২০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সাথে ২০ শতাংশ কলা ও পাট নষ্ট হয়েছে। কিছু কিছু জমির পাট গাছ শিলায় শতভাগ কাটা পড়েছে বলে যোগ করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম রনি জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের মাঠে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা আজগার আলী জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মাঠে আছি। এখনি বলতে পারছি না কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে শিলাবৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় কৃষক এমন ক্ষতি হয়েছে যা বর্ণনা করার মত না বলে যোগ করেন এ জেলা কৃষি কর্মকর্তা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি
ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক