তাপদাহের পিছে ঘূর্ণিঝড়
০৮ মে ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি আন্দামান সাগরে গতকাল একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হচ্ছে, শক্তি সঞ্চয় করছে। এদিকে এপ্রিল মাসজুড়ে এবং এ যাবৎ টানা অনাবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক খরতাপে বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির মাঝেই বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ের ঘনঘটা তৈরি হয়েছে। এর বাড়তি প্রভাবে দেশজুড়ে অসহ্য গরম আরও উসকে উঠেছে। সর্বত্র বিরাজ করছে হাঁসফাঁস অবস্থা। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল পুরো এই তিন বিভাগের ২৪ জেলাসহ ৪৩টি জেলা অর্থাৎ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক রুক্ষ খটখটে আবহাওয়ায় তাপপ্রবাহ আরও বিস্তারের আভাস দেয়া হয়েছে। অন্তত আরো তিন দিন থাকতে পারে গরমের দাপট। আপাতত মেঘ-বৃষ্টির সুখবর নেই।
তাপদাহের পিছে পিছে লঘুচাপের সঙ্গেই এবার চোখ রাঙাতে শুরু করেছে সম্ভাব্য সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়। যার নাম হতে যাচ্ছে ‘মোকা’, ‘মোখা’ কিংবা ‘মোচা’। বৈশি^ক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থা ও গবেষকরা আগেই শঙ্কার সাথে জানান, আসন্ন ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ-ভারত উপকূলে আঘাত হানতে পারে আসছে সপ্তাহে। গতকাল আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তায় জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ক্রমেই ঘনীভূত হতে পারে। তবে লঘুচাপের জন্য আপাতত সমুদ্র বন্দরে সঙ্কেত দেখাতে হচ্ছে না।
সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় গরমের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ আবারও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে উঠে গেছে। রাজধানী ঢাকায়ও দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির আশপাশে। এমনকি রাতের তাপমাত্রাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮-এর ঊর্ধ্বে। ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র গত ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা স্থানভেদে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি বেড়ে গেছে।
ধূলোবালি, ধোঁয়াসহ নানামুখী ভয়াবহ দূষণ, জনসংখ্যার চাপ, ‘ইট-পাথর-লোহা-কংক্রিটের বস্তি’ হিসেবে কথিত নগর রাজধানী ঢাকায় দুপুরবেলায় প্রকৃত তাপানুভূমি (রীয়াল ফীল) ৪৪ থেকে ৪৭ ডিগ্রির পর্যায়ে! সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহ বিস্তারের এবং আরো অন্তত ২ থেকে ৪ দিন অব্যাহত থাকারই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। দেশের কোথাও নেই মেঘ, ছিটেফোঁটা বৃষ্টি। ভ্যাপসা গরমে-ঘামে, দিনে বা রাতে কোথাও নেই স্বস্তি। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
অসহ্য তাপপ্রবাহ, শুষ্ক আবহাওয়া, খরা-অনাবৃষ্টির বৈরিতায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই জ্বর-কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া, শ^াসকষ্ট, আমাশয়, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে মানুষ অসুস্থ। শিশু, বয়োবৃদ্ধদের ভোগান্তি বেড়েছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় তীব্র। তাপদাহে কাহিল ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমজীবী, নিম্নআয়ের লোকজন, রিকশা-ভ্যান চালকরা। তাদের কষ্ট-দুর্ভোগ বাড়লেও আয়-রোজগার কমে গেছে। গরমে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন অনেকে গলা ভেজাতে রাস্তাঘাটে খোলা জায়গায় বেচাকেনা হওয়া হরেক রকম শরবৎ, পানীয় পান করছে। আর ডেকে আনছে রোগের বিপদ।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল সমগ্র তিন বিভাগসহ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলাসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে ও বিস্তার লাভ করতে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা বাড়তে পারে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, এপ্রিল ও মে এমনিতেই উষ্ণ মাস। তার উপর গেল এপ্রিল মাসে সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশই কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবার মে মাসেও খরা-অনাবৃষ্টির ধারাবাহিকতা চলছে। মৌসুমের এ সময়ে কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি, বজ্রসহ যে ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে তাও নেই। বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ু আসতে এখনও অনেক দেরি। বঙ্গোপসাগর থেকে শীতল বায়ুপ্রবাহও আসছে না। এসব কারণে গরম তীব্র থেকে তীব্রতর এবং অসহনীয় হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং আবহাওয়ারাজ্যে ‘এল নিনো’র পরিবর্তে সম্প্রতি ‘লা নিনা’ অবস্থার কারণে এলোমেলো, রুক্ষ, বৈরী, অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশসহ বৈশি^ক আবহাওয়া।
চুয়াডাঙ্গায় ৪১, ঢাকায়ও ৩৯.৪ ডিগ্রি! : মে মাস তথা বৈশাখে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকায়। গতকাল রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আগের দিন ছিল ৩৭ দশমিক ৭। রাতের সর্বনিম্ন পারদও ২৮-এ উঠে গেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ ডিগ্রি সে.। যা তীব্র তাপপ্রবাহের পর্যায়ে।
তাছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও বিভিন্ন অঞ্চলে ছিলÑ নেত্রকোনা ও কুষ্টিয়ায় ৪০.৫, রাজশাহীতে ৪০.৩, বান্দরবানে ৩৯.৯, যশোর ও পাবনায় ৩৯.৮ ডিগ্রি সে.। দেশের অধিকাংশ জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে স্থানভেদে ৪১ এবং রাতের তাপমাত্রাও ২৫ ডিগ্রির ঊর্ধ্বে ছিল।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলা ও আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, নেত্রকোনা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ওসমানী হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে বরখাস্ত
রোমাঞ্চকর মিলান ডার্বিতে ইন্টারের হার
ইন্টারনেটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় চীন
মধ্যরাতে রাজধানীর সড়কে সড়কে সেনা চেকপোস্ট
বিপন্ন মেরু ভালুককে গুলি করে হত্যা, তোপের মুখে আইসল্যান্ডের পুলিশ
বাড়িতে ঢুকে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
নদীতে মেহেদী রাঙা হাতে ‘আই লাভ ইউ’ লেখা যুবতীর লাশ উদ্ধার
গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, সমালোচনার ঝড়
বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল দ. আফ্রিকা
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে