সিলেট নগরীর ভোটের মাঠ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে খুবই উর্বর। দলমত নির্বিশেষে তার প্রতি মানুষের আস্থা। কোন কাজে মনস্থির করলে বাধা-আপত্তি, লোভ-লালসা স্পর্শ করতে পারে না তাকে। জনকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ। সাদাসিদে জীবনের অনন্য এক প্রতিচ্ছবি তিনি। সেকারণে বিগত ২০১৮ সালের ১০ জুনের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরানকে। সেই বিজয়ের পেছনে একমাত্র কারণ ছিল ভোটারদের আন্তরিক ভালোবাসা। অথচ কামরানকে জয়ী করতে ইলেকশন ইনঞ্জিনিয়ারিং এর তথ্য ছিল মুখে মুখে। নির্বাচনের দিন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল দাপট আর তার দলীয় অনুসারিরা ছিল কোনঠাসা, অসহায়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কামরানকে বিজয়ী করার মাস্টার প্লান নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের রচিত সব ছক ভেস্তে দিয়ে নাটকীয় ভাবে বিজয় নিশ্চিত করে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। শুধু মেয়র নয়, অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে লাভ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ। আসন্ন সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে প্রথমেই এক দফা বাধাপ্রাপ্ত হন। তবে তিনি নির্বাচনে আসবেন কি, আসবেন না, তার ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন আগামী ২০ মে। সেকারণে ২০ মে দিকে মুখিয়ে আছেন নগরবাসী।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সিসিকে প্রার্থী না হলেও নতুন চমক নিয়ে লন্ডন থেকে ফিরছেন আরিফ। হাই কমান্ডের নির্দেশনা মেনে সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী না হয়ে তার এই ত্যাগ স্বীকারে দল তাকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে। আগামীতে আরিফকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করার আশ্বাস দিয়েছেন তারেক রহমান। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে সিলেটের একটি আসনে আরিফকে প্রার্থী করবে বিএনপি।
এদিকে, ২০ মে’র অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় গত বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে তারেক রহমান নেতৃবৃন্দকে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতকর্মীরা। তারেক রহমানের এ নির্দেশনায় নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে আরিফের। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, আরিফ দলের জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। সেই ত্যাগের মূল্যায়ন দল না করলেও ব্যক্তি আরিফ নিজেই একটি ব্র্যান্ড হিসেবে সিলেটের রাজনীতিক অধ্যায়ের এক ইতিহাস হয়ে থাকবেন। সেই অবস্থানের বিচারেই দলের এমন কঠোর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০ মে তিনি কী সিদ্ধান্ত জানাবেন নগরবাসীকে এটাই এখন দেখার বিষয়।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে আরিফুল হক সিসিকের একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ছিলেন। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের আশীর্বাদ হয়ে তিনি সিলেটের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। সেসময় তাকে ‘ডিপ্লোম্যাটিক লিডার’ হিসেবে আখ্যা দেন সাইফুর। ওই সময় সিটি করপোরেশনের নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের শাসনামলেই তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র হন। ২০১৮ সালে ফের কামরানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ।
সেই আরিফকে মোকাবেলার জন্য সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে নিয়ে আসা হয়েছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। আনোয়ার ছিলেন পরাজিত কামরানের সিপাহসালা। সিলেট নগরীর মাঠি মানুষের সাথে আনোয়ারের চেনা-জানা আরিফের তুলনায় নগন্য হলেও আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সম্পর্ক ও প্রশাসনিক পর্যায়ে তার যোগাযোগ অত্যন্ত গভীর ও আন্তরিক। দেশের চলমান রাজনৈতিক পেক্ষাপটে এই দুটি পর্যায়ে যার কানেকশন যতই ঘনিষ্ট তিনি ততই সফল ও গুরুত্বপূর্ণ। আরিফ নির্বাচনে না আসলে আনোয়ার বিজয়গাঁথা কেবল সময়ের ব্যাপার। তবে আরিফ নির্বাচনে আসলে সেই পথ মসৃন হবে না সহজ তা সময়ের অপেক্ষা।