ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১
তত্ত্বাবধায়কই বাঁচার একমাত্র পথ : সরকারকে মির্জা ফখরুল

জেলা পর্যায়ে ৪ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৩ মে ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ১৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে শুধু সমুদ্রে ঝড় নয় রাজনীতিতেও ঝড় উঠেছে। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই আপনাদের বাঁচার পথ। আমরা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। তিনি বলেন, যেটা প্রতিষ্ঠিত সত্য, দেশে-বিদেশে সবখানে যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনই বাঁচার একমাত্র পথ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন না দিলে, সে নির্বাচন রুখে দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গায়েবি মামলায় গ্রেফতার, নির্যাতনের প্রতিবাদসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে ঢাকাসহ সারাদেশে মহানগর-জেলায় ৪ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল সমাবেশে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন দেখতে চান? ‘না’ জবাব এলে তিনি বলেন, তাহলে নির্বাচন রুখে দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা, বিএনপি বারবার ক্ষমতায় এসেছি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা দীর্ঘকাল ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করছি। আপনারাও (আওয়ামী লীগ) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। সে আন্দোলনে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন, মানুষ মেরেছিলেন। এখন আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুরোপুরি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য মানুষ মারছেন।

সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা এক দাবি, দফা এক দাবি এক’ এই শ্লোগান তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই দাবিতে আমাদের নতুন কর্মসূচি। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়। আমাদের এই আন্দোলন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সরকারকে পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য, নি¤œ আদালতে আবার আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে আবার কারাগারে প্রেরণ, গায়েবি মামলা দিয়ে নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা, পুলিশ হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবিতে এই কর্মসূচি হবে।

৪৭ বছর পর জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর মূল কারণ হলো- জনগণের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। একই কায়দায় তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে করেছিল। এভাবে নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে কোনো ধানাই-পানাই করে বা কেরিকাটা করে লাভ হবে না। ইনশাআল্লাহ জনগণের বিজয় হবে।

মাঝখানে ২ সপ্তাহের বিরতির পর আবারও রাজধানীতে বড় ধরণের শোডাউন করলো বিএনপি। এরআগে গত ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছিল বিএনপি। গতকাল ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে অসংখ্য নেতাকর্মীর ঢল নেমেছিল। দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এবং গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীর কর্মসূচি হলেও ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন। একদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়, বিজয়নগর, অন্যদিকে ফকিরাপুল ও আরামবাগ মোড় এবং আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বেলা আড়াইদার দিকে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই দেশে উচ্চ আদালত জামিন দেয় কিন্তু নি¤œ আদালত তা বাতিল করে দেয়। যেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে ককটেল ফাটানোর মামলা দেওয়া হয়। এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। সেজন্যই আবারও গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের সমাবেশ। আজকে রিক্সাওয়ালা সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। দিন আনে দিন খায় এমন লোকেরা আজকে অসহায়। এই সরকার শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভরছে। সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা কেটে বিদেশে পাচার করছে। প্রত্যেকটি খাতে সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। হজের বিমান ভাড়াও তারা বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, এই সরকার তিনটি দেশ সফর করেছে। কিন্তু কোনো অর্জন নেই। সবার সঙ্গে মিটিংয়ে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এসেছে। কারণ বিদেশীরা দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন দেখতে চায়। দেশে-বিদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারা নির্বাচন করতে গেলে রুখে দেওয়া হবে। আমরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় দেখতে চাই। এই দাবিতেই আমরা দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন করছি। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ৩৯ লাখ মানুষকে আসামি করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছে। ৭১ সালের মতো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুন:প্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মো. আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব মো. রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শিরিন সুলাতানা, আব্দুল খালেক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, অঙ্গসংগঠনের সাদেক আহমেদ খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জিলানী, হাসান জাফির তুহিন, সুলতানা আহম্মেদ, আনোয়ার হোসাইন, আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুর রহিম, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।

নতুন কর্মসূচি:
সমাবেশে যুগপৎ আন্দোলনের ৪ পর্বের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ১৯ মে শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ২৮ জেলা ও মহানগর, ২০ মে শনিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ২১ জেলা ও মহানগর, ২৬ মে শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ১৯ জেলা এবং ২৭ মে শনিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ১৫ জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশ হবে।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম