কক্সবাজার-মিয়ানমারে ‘মোখা’র আঘাত
১৩ মে ২০২৩, ১১:২৬ পিএম | আপডেট: ১৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
অতি প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত শুরু হয়েছে। এটি প্রথমে আঘাত হানে কক্সবাজারের বিপরীত দিকে মিয়ানমার উপকূল দিয়ে। উত্তর মিয়ানমারের কিয়াকপু-সিটুই (সাবেক আকিয়াব বন্দর) এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপের মাঝ বরাবর দিয়ে ‘মোখা’ আজ সকাল থেকে আছড়ে পড়ছে। চট্টগ্রামের উপকূলেও ‘মোখা’র ঝড়ো-ঝাপটা এসে পড়ে। অবশেষে সাগরেই ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আরো শক্তিশালী হয়ে ‘সুপার সাইক্লোনে’ রূপ নিয়েছে! যার গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১০ থেকে ২২০ কি.মি.। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪০ কি.মি. উঠছে! গতিবেগ ২২০ কি.মি. থেকে ঊর্ধ্বে উঠলে সেটি ‘সুপার সাইক্লোন’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ভারতের আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) ঘূর্ণিঝড় বিজ্ঞানী ড. আনন্দ কুমার দাশ ‘মোখা’র গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে গতরাতে সবশেষ বুলেটিনে জানান, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানকালে ‘মোখা’র সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে ঘণ্টায়Ñ প্রথমে সর্বোচ্চ ২শ’ থেকে ২১০ কি.মি., যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৩০ কি.মি. এবং দ্বিতীয় ধাপে গতিবেগ আরো বেড়ে ঘণ্টায় ২১০ থেকে ২২০ কি.মি., যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪০ কি.মি. উঠে। আজ সকালে গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২শ’ থেকে ২১০ কি.মি., যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৩০ কি.মি. উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এরপর গতিবেগ কিছুটা কমে ১৮০ থেকে ১৯০ কি.মি., যা দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কি.মি. হতে পারে। ‘মোখা’র অগ্রভাগ ধেয়ে আসার পরই বৃহত্তর চট্টগ্রাম উপকূলভাগে শুরু হয় দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া। প্রায় সাড়ে ৪শ’ কি.মি. সাইজের ‘মোখা’ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে ছয় থেকে দশ ঘণ্টা এমনকি আরও বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে। গতকাল সারাদিন দেশের উপকূলভাগে মেঘলা আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও গুমোট আবহাওয়ায় জনমনে শঙ্কা-আতঙ্ক বেড়েই চলে। উপকূলবাসী তুফানের দুর্যোগ বিপর্যয় থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ্ চেয়ে ফরিয়াদ করছেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও পর্যটন শহর কক্সবাজারের জনজীবনের চাকা থমকে গেছে। সমুদ্র উপকূল-চর-দ্বীপাঞ্চল, পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভুতুড়ে, যেন আতঙ্কপুরি। সমগ্র কক্সবাজার জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি আছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে বলবৎ রয়েছে ৮ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র গতিবেগ উঠেছে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। যা দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২শ’ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ‘মোখা’র গতি ও শক্তি কখনো হ্রাস কখনো বৃদ্ধি হচ্ছে। ‘মোখা’ হঠাৎ কোন দিকে মোড় নেবে এ নিয়ে কৌতুহল ভয়-শঙ্কা সর্বত্র। ‘মোখা’র প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলভাগ, চর, দ্বীপাঞ্চলে ৮ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস এবং নোয়াখালী-চাঁদপুর-ভোলা-পটুয়াখালী-বরগুনাসহ দক্ষিণ উপকূলের একাংশে ৫ থেকে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র বর্ধিত প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪ মিলিমিটার থেকে ৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (৮৯ মি.মি.র ঊর্ধ্বে) বৃষ্টিপাত হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। ‘মোখা’র পিঠে প্রায় সারা দেশে আজ থেকে হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। উজানে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচল ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস আছে। অতি বর্ষণে ভারতের উজানের ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) দিল্লি দফতরের আবহাওয়া ও ঘূর্ণিঝড় বিজ্ঞানী ড. আনন্দ কুমার দাশ সর্বশেষ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অত্যধিক প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ অনেকটা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ‘মোখা’ গত ৬ ঘণ্টায় আগের চেয়ে গতি বাড়িয়ে ঘণ্টায় ১৯ কি.মি. বেগে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে। তষনও এটি কক্সবাজার থেকে ৫৮০ কি.মি. ও মিয়ানমারের সিটুই (সাবেক আকিয়াব) থেকে ৪৯০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আরো উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ রোববার দুপুরের মধ্যে উত্তর মিয়ানমারের সিটুই’র (সাবেক আকিয়াব বন্দর) কাছে কিয়াকপু এবং কক্সবাজারের মাঝামাঝি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ‘অত্যধিক প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ আকারে তখন ‘মোখা’র বাতাসের গতিবেগ হতে পারে প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৭০ থেকে ১৮০ কি.মি. পর্যন্ত। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে দুই শ’ কি.মি. উঠতে পারে। আবহাওয়া বিভাগের (বিএমডি) বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি.’র মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কি.মি.। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করে। গুমোট আবহাওয়ার সাথে থেমে থেমে বৃষ্টি, দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকে। ‘মোখা’ আসার আগেই অনেক এলাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান