অঙ্গিকার করার পরও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় গাজীপুর আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে চিরস্থায়ী বহিষ্কার করতে সুপারিশ করেছে দলটির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলী। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

আগামী ২৫মে হতে যাওয়া গাজীপুরের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে সেখানকার বহিস্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিজে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহ খানকে। তবে নিজের সঙ্গে নিজের মা জায়েদা খাতুনকেও প্রার্থী করেন জাহাঙ্গীর আলম। ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু হাইকোর্টেও তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। ফলে এখন মায়ের নির্বাচনি প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। পরে চলতি বছরের জানুয়ারীতে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের ওই বৈঠক সূত্রে জানায়, আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকে আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মূলত আলোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর বাইরে দলের সাংগঠনকি কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়। সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনার মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। যার মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়টি প্রধান্য পায়। তখন সম্পাদকমন্ডলীর বেশ কয়েকজন সদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে চিরস্থায়ীভাবে বহিস্কার করার বিষয়ে সুপারিশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ওবায়দুল কাদেরের কাছে। তখন ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সিটি করপোরেশনের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর আলম এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটূক্তি করার জন্য তাঁকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে ক্ষমা চাওয়ায় তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এখন তিনি আবার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। শুধু তিনি নন, তাঁর মাকেও প্রার্থী করেছেন। নিজের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর তিনি মায়ের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সেখানে দলের বিপক্ষেও কথা বলছেন। এ জন্য তাঁকে দল থেকে চিরতরে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়টি প্রথমে উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বারবার সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাঁকে দল থেকে চিরস্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, বারবার ক্ষমা করার পরও দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। আর যাতে তিনি ক্ষমা চাইতে না পারেন, এমন ব্যবস্থা হওয়া দরকার। সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যরা এতে একমত হন।

জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ইনকিলাবকে বলেন, তার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমি একটি অভিমত দিয়েছি, যে তার কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যাতে সে আর দলীয় শৃঙ্খলা ভাংতে না পারে। কারণ সে ক্ষমা চাওয়ার পরও দলীয় কোন শৃঙ্খলা মানছিল না। সে বিষয়ে সম্পাদকমন্ডলীও একমত হয়েছে। সম্পাদকমন্ডলীর সুপারিশ দলীয় সভাপতির কাছে পাঠানো হবে। নেত্রীই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য ইনকিলাবকে জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়টি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জানাবেন।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে। এখন এই বৈঠক না হওয়ায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে সম্পাদকমন্ডলীর সুপারিশ পাঠানো হবে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।