বাজেট এখন অনাথ, আইএমএফ তার পালক পিতা
১৫ মে ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের বাজেট এখন অনাথ আর আইএমএফ তার পালক পিতা। আইএমএফ যখন কোনো দেশে কর্মসূচি নিয়ে যায়, তখন সেই দেশের অর্থনীতির ওপর এক কর্তৃত্ব আরোপ করে বা আরোপের চেষ্টা করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেয়ার পর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বৈষম্য আরও প্রকট হবে বলেও উল্লেখ করেছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আগে থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। এখন আইএমএফের শর্ত পরিপালনে প্রয়োজনীয় খাতে ভর্তুকি তুলে দেয়া হলে এ বৈষম্য আরও বেড়ে যেতে পারে।
গতকাল ‘আইএমএফের সময়কালে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে’ শীর্ষক সিপিডি-নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে, তার শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভর্তুকি হ্রাস। এ ছাড়া আইএমএফ বাড়তি কর আদায়ের কথা বলেছে। ব্যাংকের সুদহার উন্মুক্ত বা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছে আইএমএফ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আইএমএফ যখন কোনো দেশে কর্মসূচি নিয়ে যায়, তখন অনেক সময় সে দেশে বৈষম্য বেড়ে যায়। তারা যেসব শর্ত দেয়, তার কারণেই এটি হয়। এমনকি আইএমএফের নিজস্ব গবেষণায় এটা উঠে এসেছে। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে, তার শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভর্তুকি হ্রাস। এ প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ভর্তুকি অনেক সময় ভালো হয়, আবার খারাপও হয়। বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে, তা দিয়ে সার ও ডিজেলের মতো খাতেও ভর্তুকি বাড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া আইএমএফ বাড়তি কর আদায়ের কথা বলেছে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এর সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু কাদের কাছ থেকে সেই কর আদায় করা হবে, সেটাই বড় কথা। এ ছাড়া দেশে কর আদায়ের আদর্শ ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি। দেশের অনেক মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে বিপুল সম্পদ লাভ করছেন। সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, সেখান থেকে কর আদায় করা উচিত। ব্যাংকের সুদহার উন্মুক্ত বা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছে আইএমএফ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে এটা করাই উচিত। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দেন, দেশে সুদহার বৃদ্ধির অভিঘাত পড়ে মূলত এসএমই খাতে, সে দিকেও খেয়াল রাখা উচিত বরে তিনি মত দেন। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অনেক সময় প্রচারের অভাবে গরিব মানুষের নজরে আসে না। সে জন্য তারা সেগুলোর সুবিধা নিতে পারেন না। এ ছাড়া খাদ্য সহায়তার জন্য যত কার্ড দেয়া হয় তা অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অনেক সময় প্রচারের অভাবে গরিব মানুষের নজরে আসে না। সে জন্য তারা সেগুলোর সুবিধা নিতে পারেন না। এ ছাড়া খাদ্য সহায়তার জন্য যত কার্ড দেয়া হয় তা অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি চাল দেয়ার কর্মসূচি নিয়ে সবাই অবগত নয়। এটা কীভাবে কাজ করছে আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি চাহিদামতো চালের সরবরাহ নেই। অনেক চালের বস্তা ওজনে কম, মুখ খোলা। চালের মান ভালো না। পরিমাণে দেওয়া হয় কম। গরিব মানুষের সংযোগ হয়নি। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু উর্দু ভাষাভাষী মানুষ দেশে বসবাস করেন। এসব মানুষসহ অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের জন্য বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বড় কর্মকর্তার (অফিসার) বড় গাড়ি, বড় বাড়িÑএসব জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। এখন সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন চলছে। তিনি বলেন, সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলাই ভালো। আসল কথা হচ্ছে দরিদ্ররা বঞ্চিত। তারা কীভাবে বঞ্চিত হয় আমি দেখেছি। পদ্ধতিগত কারণে তারা বঞ্চিত। সরকারি বরাদ্দ সব সময় তাদের কাছে পৌঁছায় না।
এম এ মান্নান বলেন, আমরা আইএমএফ’র ওপর নির্ভরশীল নই, তারা ঋণ দিতে কোনো শর্ত দেয়নি। তিনি বলেন, তবে তারা কিছু প্রয়োজনীয়তা বলে দেয়, যেমন- ঋণে সুদ কত, কত বছরে পরিশো ধকরবো-এসব। মন্ত্রী বলেন, আইএমএফের সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক কী? তারা সহযোগী, বাজেট আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে আইএমএফ’র কিছু শর্ত থাকে। প্রয়োজনে হাত পাতি, দেয়ার দায়িত্ব আইএমএফের। অনেকে বলে দাতাগোষ্ঠী, এ শব্দের আমি ঘোরবিরোধী। কারণ তারা উন্নয়ন সহযোগী, আমরা ঋণ নিয়ে থাকি এবং সুদ আসলে পরিশোধ করি। বাজেটে উন্নয়ন সহযোগীদের অবদান মাত্র ২ শতাংশ। দারিদ্র্য প্রসঙ্গে এমএ মান্নান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আমাদের দরিদ্ররা বঞ্চিত। পদ্ধতিগতভাবে তারা বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছে। আমি গ্রামে যাই সরকারি মালামাল নিয়ে, এগুলো কোথায় যায় জানি না। এটা খুঁজে বের করাও কঠিন। রিজার্ভ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ৩০ বিলিয়ন ডলার মন্দ নয়। এটার খবর একসময় কেউ রাখতো না। ৫০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ একসময় হয়েছিল, তাই এটা নজরে আসছে।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের