যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে এগিয়ে এরদোগান
১৫ মে ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র, মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা ও পূর্বাভাস, দেশের ইসলামবিরোধী ও ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যবদ্ধ লড়াই, কুর্দি ও ভূমিকম্প গেম খেলেও হারানো গেল না তুরস্কের ক্যারিশম্যাটিক ও সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতা এরদোগানকে। ৫০ শতাংশ +১ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন রান-অফে গড়ালেও তিনি যে পশ্চিমা সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একাই একশ’ তা আবারও প্রমাণ করলেন। দেশটির সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল (ওয়াইএসকে) ঘোষণা করেছে যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২৮ মে একটি রান-অফ ভোটে যাবে, কারণ কোনো প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ অর্জন করতে পারেননি। বর্তমানে, প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান ৪৯.৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন এবং বিরোধী প্রার্থী নেশনস অ্যালায়েন্সের কামাল কিলিচদারোগ্লু ৪৪.৮৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এদিকে, এটিএ অ্যালায়েন্সের সিনান ওগান ৫.১৭ শতাংশ এবং মুহাররেম ইনসে ০.৪৪ শতাংশ পেয়েও রেস থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরদোগান এবং কিলিকদারোগ্লুর মধ্যে রানঅফ হবে, কারণ দুজনেই সর্বোচ্চ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৮৮.৮৪ শতাংশের রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁঁছছে। একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে প্রথম রাউন্ডে জিততে ৫০ শতাংশ +১ ভোট পেতে হবে। যেহেতু কেউই তা পাননি, ফলে আগামী ২৮ মে শীর্ষ দুই প্রতিযোগীর মধ্যে একটি রান-অফ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৯৯.৯৯ শতাংশ ব্যালট গণনা করে, এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন পিপলস অ্যালায়েন্স ৬০০ আসনের পার্লামেন্টে ৩২১টি আসন পেয়েছে। এর মধ্যে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ২৬৬টি, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ৫০টি এবং নিউ ওয়েলফেয়ার পার্টি ৫টি আসন পেয়েছে।
বিরোধী জোট পার্লামেন্টে ২১৩টি আসন পেয়েছে, কিরিচদারোগ্লুর রিপাবলিকান পিপলস পার্টি ১৬৯টি ও গুড পার্টি ৪৪টি আসন পেয়েছে। জোটের অন্য চারটি দলের প্রতিনিধিত্বকারী প্রার্থীরা রিপাবলিকান পিপলস পার্টির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং তারাও সংসদে প্রবেশ করবে। লেবার অ্যান্ড ফ্রিডম অ্যালায়েন্স, যাদের তালিকায় কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীরা রয়েছে, তারা ৬৬টি আসন পেতে পারে। আরও দুটি নির্বাচনী জোট - এটিএ জোট এবং ইউনিয়ন অব সোশালিস্ট ফোর্সেস- সংসদে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইস্তাম্বুল থেকে আল জাজিরার রিপোর্টার সিনেম কোসেওগ্লু বলেছেন যে, এরদোগানকে কুর্দি ভোট ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে যারা শান্তি প্রক্রিয়া ভেঙে যাওয়ার আগে তাকে সমর্থন দিয়েছিল। ‘কুর্দিদের সাথে শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ার পর, কুর্দিরা প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিল। (২০১৬) অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পরে সরকারের নিরাপত্তা-ভিত্তিক নীতিগুলিও কুর্দিদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল,’ কোসেওগ্লু ব্যাখ্যা করেছেন।
‘দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে যেখানে কুর্দি অধ্যুষিত শহর রয়েছে, সেখানে ভোট সিএইচপি-র পক্ষে গেছে। এরদোগানেরৃওই ভোট দরকার,’ তিনি বলেন। তৃতীয় প্রার্থী সিনান ওগান (এটিএ) এ নির্বাচনে দুর্দান্ত ফল করেছেন (৫.২০ শতাংশ ভোট) যা কেউ আশা করেনি, এখন তিনি কাকে সমর্থন দেবেন সেটিও দেখার বিষয়। ‘দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত, এটি সমস্ত আলোচনায় থাকবে,’ তিনি যোগ করেছেন। বিশ্লেষকরা বলেন, সিনান ওগান কিরিচদারোগ্লুকে সমর্থন দেবেন- এমন ঘোষণা তিনি দেননি। তবে তার দল একসময় একে পার্টির সাথে অ্যালায়েন্সের অংশ ছিল, কাজেই কিছু না বললেও তার সমর্থন যে এরদোগানের পক্ষে যাবে তা বলাই বাহুল্য।
এদিকে, রানঅফে জয়ী হবেন, এমন প্রত্যয় জানিয়ে কিরিচতারোলু তার সমর্থকদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। এরদোগানের পার্টি ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণায় হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু এরদোগান নির্বাচনপূর্ব জরিপ ও অনুমানগুলোর চেয়ে ভালো ফল করেছেন আর সমর্থদের উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় আত্মবিশ্বাসী ও লড়াকু মেজাজ নিয়ে হাজির হয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। তার মনোভাবে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, পশ্চিমারা যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন নির্বাচনের মাঠে এরদোগান হচ্ছেন একজন পাকা খেলোয়াড়।
তুরস্কের জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ ইসলামপন্থি বলে মনে করা হয়। আর ৬৫ শতাংশই ইসলামবিরোধী ও সেক্যুলার। তবে ভোটের ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। দেশের ৮১টি প্রদেশের বেশ কিছুতে কিলিচদারোগ্লুর ভাল করলেও অধিকাংশ এলাকাতেই ভালো করেছেন এরদোগান। বিশেষ করে কুর্দি এলাকায় একচেটিয়া তার বিরুদ্ধে ভোট পড়বে বলে মনে করলেও নির্বাচনের ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। মাত্র ৩ মাস আগে যেসব এলাকা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, পশ্চিমা মিডিয়ার অপপ্রচার ছিল, সেখানে এরদোগান হারবেন। কিন্তু সেখানকার মানুষ তাদের মত দিয়েছেন জনপ্রিয় নেতা এরদোগানের পক্ষেই।
এরদোগান বলেছেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ২৬ লাখ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছি। আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশের সময় এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা করছি আমরা।’ নির্বাচনের ফলাফলে রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা তুরস্কের গভীর রাজনৈতিক বিভক্তি প্রতিফলিত হয়েছে। এ ভোটের ফলে এরদোগানের ক্ষমতাসীন জোট পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে আর তা রানঅফ ভোটে তাকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি নিউজ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি