ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
২১ মাসে সর্বনিম্ন নিষ্পত্তি

৩২ মাসে সর্বনিম্ন এলসি এপ্রিলে

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৭ মে ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা বিধিনিষেধ ও ডলার সঙ্কটের কারণে গত এপ্রিলে আগের ৩২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম এলসি (ইম্পোর্ট লেটার অব ক্রেডিট) খোলা হয়েছে। এছাড়া ডলার সঙ্কটসহ গত কয়েকমাসে এলসি খোলা কমে যাওয়ায় এপ্রিলে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে গত ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে মাত্র ৪ দশমিক ৩০ বিলিয়নের আমদানি এলসি খোলা হয়। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৪৯ শতাংশ কম। এরচেয়ে কম এলসি খোলা হয়েছিল ২০২০ সালের আগস্টে। করোনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে তখন কিছুটা স্থবিরতা থাকায় ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়নের এলসি খোলা হয় সেসময়। এছাড়া গত এপ্রিলে আমদানি এলসি সেটেলমেন্ট করা হয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়নের। এরচেয়ে কম পেমেন্ট করা হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসে। সে মাসে ৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি পেমেন্ট করা হয়। এদিকে এলসি যাও খোলা হচ্ছে তার অধিকাংশ বড় ব্যভসায়ী ও দেশের প্রভাবশালীদের। তাই বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যভসায়ী ও অন্যান্যরা।

এলসি কম খোলার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ইমরানুল হক বলেন, প্রথমত এপ্রিলে ঈদ উপলক্ষে ব্যাংকের কার্যদিবস অন্য মাসের তুলনায় কম ছিল। গত মাসে এলসি ওপেনিং কম হওয়ার এটি একটি কারণ। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের সঙ্কট আছে, তাই ব্যাংকগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক। এসব কারণেই এলসি খোলা কমেছে। বর্তমানে ব্যাংক চ্যানেলে ডলার সঙ্কটের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রফতানি আয় কমার ধারায় আছে। এছাড়া এপ্রিলে ঈদের মাস হওয়া সত্ত্বেও রেমিট্যান্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কম এসেছে। ফলে ব্যাংক চ্যানেলে এখন চাহিদামতো আমদানি এলসি খোলার মতো ডলার নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, এলসি মার্জিন রাখাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শর্ত মানলেও ব্যাংকগুলো চাহিদামতো এলসি খুলছে না। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ঘুরতে হচ্ছে এলসি খোলার জন্য। এসব কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মোট ৫৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়নের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ পরিমাণ প্রায় ২৭ শতাংশ কম। সেইসঙ্গে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এলসি সেটেলমেন্ট করা হয়েছে ৬২ দশমিক ৪০ বিলিয়নের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম।

সরকারের আমদানিতে কড়াকড়ি ও বিশ্ববাজারের রেটের সঙ্গে আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্যাশ টু ক্যাশ পর্যবেক্ষণের ফলে এলসি ওপেনিং কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইমপোর্ট এলসি কম খোলার কারণে দেশের অর্থনীতিতে নানামুখী প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল র’ ম্যাটেরিয়ালের আমদানি কম হলে দেশের উৎপাদনখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারলে বাকি খাতগুলো যেমন: পরিবহন, বিপনন থেকে শুরু করে কনজিউমার লেভেল পর্যন্ত এর প্রভাব পড়ে। এছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে। কারণ, ইমপোর্ট ডিউটি, ট্যাক্স, ভ্যাট থেকে সরকারের আয় কমে যায়। সেইসঙ্গে বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়। সবকিছু মিলে আবার ইনফ্লেশনকে ট্রিগার করে, যেটি পণ্যের সাপ্লাই কমে যাওয়ার কারণে হয়। এই ইনফ্লেশন কিন্ত বাইরে থেকে আমদানি করা নয়, নিজেদেরই তৈরি করা বলে উল্লেখ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এপ্রিলে ৫৭ শতাংশ কমেছে টেক্সটাইল ও লেদার মেশিনারিজের মতো ক্যাপিটাল মেশিনারিজের এলসি খোলার পরিমাণ। এছাড়া কম্পিউটার বা মোটরসাইকেলের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারির এলসি খোলা কমেছে ৪৬ শতাংশ। টেক্সটাইল ফেব্রিক ও কেমিক্যালের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল র ম্যাটেরিয়ালের এলসি খোলা কমেছে ৩২ শতাংশ। সিমেন্ট, স্ক্র্যাপ ভেসেলের মতো ইন্ডারমিডিয়েট পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৩১ শতাংশ, চাল ও গমের মতো ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে ১৮ শতাংশ।

এ প্রেক্ষিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিতে পারে জানতে চাইলে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বীকার করে নিতে হবে এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেয়া, মাল্টিপল এক্সচেঞ্জ রেট করাসহ যে পদক্ষেপগুলো ডলার সঙ্কট কাটানোর জন্য নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো খুব একটা কার্যকর হয়নি। এসব সিদ্ধান্তের কারণে রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিড কমে গেছে। বিশেষ করে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটকে বাজারের হাতে ছেড়ে না দিলে সামনে সংকট আরো বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের এফবিসিসিআই পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বলেছেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মোটামুটিভাবে এলসি খুলতে পারছে। তবে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু একদমই পাচ্ছে না। কাজেই ছোট ব্যবসায়ীরা যদি টিকে থাকতে না পারে, তাহলে সবাই সমস্যা ভোগ করবেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা