৩২ মাসে সর্বনিম্ন এলসি এপ্রিলে
১৭ মে ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা বিধিনিষেধ ও ডলার সঙ্কটের কারণে গত এপ্রিলে আগের ৩২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম এলসি (ইম্পোর্ট লেটার অব ক্রেডিট) খোলা হয়েছে। এছাড়া ডলার সঙ্কটসহ গত কয়েকমাসে এলসি খোলা কমে যাওয়ায় এপ্রিলে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে গত ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে মাত্র ৪ দশমিক ৩০ বিলিয়নের আমদানি এলসি খোলা হয়। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৪৯ শতাংশ কম। এরচেয়ে কম এলসি খোলা হয়েছিল ২০২০ সালের আগস্টে। করোনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে তখন কিছুটা স্থবিরতা থাকায় ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়নের এলসি খোলা হয় সেসময়। এছাড়া গত এপ্রিলে আমদানি এলসি সেটেলমেন্ট করা হয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়নের। এরচেয়ে কম পেমেন্ট করা হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসে। সে মাসে ৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি পেমেন্ট করা হয়। এদিকে এলসি যাও খোলা হচ্ছে তার অধিকাংশ বড় ব্যভসায়ী ও দেশের প্রভাবশালীদের। তাই বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যভসায়ী ও অন্যান্যরা।
এলসি কম খোলার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ইমরানুল হক বলেন, প্রথমত এপ্রিলে ঈদ উপলক্ষে ব্যাংকের কার্যদিবস অন্য মাসের তুলনায় কম ছিল। গত মাসে এলসি ওপেনিং কম হওয়ার এটি একটি কারণ। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের সঙ্কট আছে, তাই ব্যাংকগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক। এসব কারণেই এলসি খোলা কমেছে। বর্তমানে ব্যাংক চ্যানেলে ডলার সঙ্কটের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রফতানি আয় কমার ধারায় আছে। এছাড়া এপ্রিলে ঈদের মাস হওয়া সত্ত্বেও রেমিট্যান্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কম এসেছে। ফলে ব্যাংক চ্যানেলে এখন চাহিদামতো আমদানি এলসি খোলার মতো ডলার নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, এলসি মার্জিন রাখাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শর্ত মানলেও ব্যাংকগুলো চাহিদামতো এলসি খুলছে না। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ঘুরতে হচ্ছে এলসি খোলার জন্য। এসব কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মোট ৫৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়নের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ পরিমাণ প্রায় ২৭ শতাংশ কম। সেইসঙ্গে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এলসি সেটেলমেন্ট করা হয়েছে ৬২ দশমিক ৪০ বিলিয়নের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম।
সরকারের আমদানিতে কড়াকড়ি ও বিশ্ববাজারের রেটের সঙ্গে আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্যাশ টু ক্যাশ পর্যবেক্ষণের ফলে এলসি ওপেনিং কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইমপোর্ট এলসি কম খোলার কারণে দেশের অর্থনীতিতে নানামুখী প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল র’ ম্যাটেরিয়ালের আমদানি কম হলে দেশের উৎপাদনখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারলে বাকি খাতগুলো যেমন: পরিবহন, বিপনন থেকে শুরু করে কনজিউমার লেভেল পর্যন্ত এর প্রভাব পড়ে। এছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে। কারণ, ইমপোর্ট ডিউটি, ট্যাক্স, ভ্যাট থেকে সরকারের আয় কমে যায়। সেইসঙ্গে বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়। সবকিছু মিলে আবার ইনফ্লেশনকে ট্রিগার করে, যেটি পণ্যের সাপ্লাই কমে যাওয়ার কারণে হয়। এই ইনফ্লেশন কিন্ত বাইরে থেকে আমদানি করা নয়, নিজেদেরই তৈরি করা বলে উল্লেখ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এপ্রিলে ৫৭ শতাংশ কমেছে টেক্সটাইল ও লেদার মেশিনারিজের মতো ক্যাপিটাল মেশিনারিজের এলসি খোলার পরিমাণ। এছাড়া কম্পিউটার বা মোটরসাইকেলের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারির এলসি খোলা কমেছে ৪৬ শতাংশ। টেক্সটাইল ফেব্রিক ও কেমিক্যালের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল র ম্যাটেরিয়ালের এলসি খোলা কমেছে ৩২ শতাংশ। সিমেন্ট, স্ক্র্যাপ ভেসেলের মতো ইন্ডারমিডিয়েট পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৩১ শতাংশ, চাল ও গমের মতো ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে ১৮ শতাংশ।
এ প্রেক্ষিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিতে পারে জানতে চাইলে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বীকার করে নিতে হবে এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেয়া, মাল্টিপল এক্সচেঞ্জ রেট করাসহ যে পদক্ষেপগুলো ডলার সঙ্কট কাটানোর জন্য নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো খুব একটা কার্যকর হয়নি। এসব সিদ্ধান্তের কারণে রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিড কমে গেছে। বিশেষ করে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটকে বাজারের হাতে ছেড়ে না দিলে সামনে সংকট আরো বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের এফবিসিসিআই পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বলেছেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মোটামুটিভাবে এলসি খুলতে পারছে। তবে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু একদমই পাচ্ছে না। কাজেই ছোট ব্যবসায়ীরা যদি টিকে থাকতে না পারে, তাহলে সবাই সমস্যা ভোগ করবেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
হেরেই চলেছে ঢাকা, পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙল সিলেট
মুকসুদপুরে ক্যালেন্ডার বিতরনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ আহত ২০ জন
১০ জেলায় শৈত্যপ্রবাহসহ সারাদেশে তীব্র শীত
আ.লীগ ক্রীড়াঙ্গনেও ব্যাপক দলীয়করণ করেছিল : মির্জা ফখরুল
নালিতাবাড়ীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযানে ড্রেজার মেশিন ও পাম্প জব্দ
ছাগলনাইয়ায় এসএসসি ব্যাচ-২০০০’র বন্ধুদের মেজবান ও মিলনমেলা
রাতের আধারে দুস্থ রোগীদের শীতবস্ত্র দিলেন ইউএনও
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল : চিকিৎসক
ঝগড়ার সময় স্ত্রীকে বাপের বাড়ী চলে যেতে বা মন ইচ্ছামতো চলতে বলা প্রসঙ্গে।
ফারুক হাসানের উপর হামলা ও আসামিদের জামিন পাওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় : খসরু
মানিকগঞ্জে ওয়ারেন্টের ৫ আসামী গ্রেফতার
আশুলিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পিঠা উৎসব
সন্ধান মিললো ফ্যাসিস্ট গণহত্যার শিকার আরও ৬ শহীদের লাশ!
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু হত্যার বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ
ছাগলনাইয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
কেরানীগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হাতে নিহত ১
ত্রিশাল সরকারি নজরুল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহন
বিএআরএফ'র ইজিএম ও ফ্যামিলি ডে অনুষ্ঠিত
‘আলেমদের নেতৃত্বে চলবে দাওয়াতে তাবলিগ খুনীদের নেতৃত্বে নয়’
কলাপাড়া গ্রাজুয়েট ক্লাবের উদ্যোগে ৫০০ শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ