আবর্জনায় ভরাট খাল-নালা
১৮ মে ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম
ভরাট হয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ খাল-নালা। তাতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। গত কয়েক দিনের হালকা বৃষ্টিতেও নগরীর অনেক এলাকায় সড়কে পানি জমে গেছে। ফলে প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষায় পানিবদ্ধতায় সম্পদের ক্ষতি ও জনদুর্ভোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীকে পানিবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষায় গত কয়েক বছরে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে কোন প্রকল্পই এখনও বাস্তবায়ন করা যায়নি। কবে এসব প্রকল্পের সুফল মিলবে আর বন্দরনগরী পানিবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে তা কেউ বলতে পারছে না।
পানিবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার এ মেগা প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তাতে কতটুকু সুফল পাওয়া যাবে-তা নিশ্চিত করে বলছেন না কেউ। সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্পের আওতায় বড় বড় খালগুলো খনন ও সংস্কার করে পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে নালা-নর্দমা থেকে নিয়মিত ময়লা-আর্বজনা পরিষ্কার করা না হলে বৃষ্টির পানি এসব খালে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই আশপাশের এলাকাগুলো প্লাবিত হবে। তাতে তেমন সুফল মিলবে না।
বাস্তবে এখন তা-ই হচ্ছে। এক পশলা বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমছে। কারণ, নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেগুলো আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব নালা হয়ে বৃষ্টির পানি দ্রæত খালে যেতে না পারায় পানিবদ্ধতা হচ্ছে। এসব খাল, নালা পরিষ্কারের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের হলেও তারা এ ব্যাপারে নির্বিকার। মহানগরীর চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে বড় বড় খাল, নালাগুলোতে এখন আবর্জনার স্তুপ জমেছে। ভরাট হয়ে যাওয়া এসব খাল, নালায় ঘাসসহ হরেক রকম আগাছা জন্মেছে। ভরাট খাল রূপ নিয়েছে কাঁচা সড়কে। লোকজন হেঁটে এসব খাল পার হচ্ছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের লাগোয়া নালা, নর্দমার অবস্থাও একই রকম। প্রতিদিন টনে টনে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নালায়। বর্জ্যরে বেশিরভাগই পলিথিন। এসব আবর্জনা জমছে বড় নর্দমা ও খালে।
ফলে খাল, নালা ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, বড়পুল, পতেঙ্গা, ইপিজেড, চকবাজার, বাদুরতলা, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, মাদারবাড়ি, ফিরিঙ্গিবাজার, এনায়েত বাজার, জামাল খান, রেয়াজুদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার খাল, নালা ভরাট হয়ে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, বর্জ্য বিশেষ করে পলিথিনে নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে যাচ্ছে।
প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে এসব খাল, নালা থেকে আবর্জনা ও মাটি অপসারণ করা হলেও এবার তেমনটা চোখে পড়ছে না। সীমিত আকারে কোন কোন এলাকায় নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। জানা গেছে, বর্ষার আগ মুহূর্তে খাল, নালা থেকে ককশিট পলিথিনসহ আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও সীমিত বাজেটের কারণে তা ফলপ্রসু হচ্ছে না। এ কার্যক্রমে প্রতি ওয়ার্ডে মাত্র ৭ লাখ টাকা করে খরচ করা হচ্ছে যা চাহিদার বিপরীতে খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলররা। কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, ছোট নালা থেকে ময়লা পরিষ্কার করা হলেও বড় খাল, নালায় কোন অভিযান নেই। এতে চাক্তাই খাল, মহেশখাল, হিজরা খাল, চশমা খাল, বির্জা খাল, মির্জা খালসহ নগরীর প্রধান প্রধান খালগুলো ময়লা ভাগাড়ই থেকে গেছে।
সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। একসময় রাতের বেলা বর্জ্য অপসারণ করে নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হতো। এখন সে অবস্থা নেই। দিনের বেলা ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে। আবার বেশিরভাগ সড়কে বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এসব বর্জ্য গিয়ে পড়ছে নালা-নর্দমায়। অনেকে বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনাও সরাসরি নর্দমায় ফেলছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটাও চলছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে নেমে আসা কাদা বালিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নালা-নর্দমা।
সম্প্রতি পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ আয়োজিত এক সভায় প্রকল্প কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রকল্পের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল শাহ মো. আলী। এতে বলা হয়, প্রকল্পের ৭৬.২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নগরীতে মোট ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ১৫টি খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ- প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণসহ সার্বিক সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যে আরও কমপক্ষে সাতটি খালের কাজ শেষ হবে। বাকিগুলোর কাজ পরবর্তী অর্থবছরের মধ্যে শেষ হতে পারে।
১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়ালের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। ৪৫টি ব্রিজ ও ৬টি কালভার্টের সবগুলোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। সড়কের পার্শ্ববর্তী ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কারের পাশাপাশি ১০.৭৭ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে। বড় খালের মুখে ৫টি রেগুলেটর নির্মাণের কাজও শেষেরপথে। ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপের মধ্যে ১৩টি স্থাপন করা হয়েছে। খালপাড়ের রাস্তা ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং ৫০ কিলোমিটার ফুটপাতের মধ্যে ৫.৫০ মিটারের কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত এ প্রকল্পে তিন হাজার ১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
এছাড়া সিডিএ আলাদাভাবে আরও একটি প্রকল্পে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীরবর্তী ১২টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৩টি রেগুলেটর নির্মাণের কাজ করছে। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পানিবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত দুই দশমিক নয় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ
৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা
ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ
অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য
আ.লীগ নেতাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দিলেন যুব মহিলী লীগ নেত্রী
পরিচয় লুকানো ঢাবি শিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক কায়েম?
‘হিন্দুপ্রধান’ জম্মু দিয়ে বিজেপির পক্ষে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মির জেতা কি সম্ভব?
গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ
আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম
মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী
কলাপাড়ায় নবজাতককে রেখে পালিয়ে গেলেন মা
প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের গলায় পরাজয়ের মাল্য
সিলেটে একদিনে ৫ থানার ওসি বদলি
সংখ্যালঘু কমিউনিটি থেকে ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগের দাবি
তেজগাঁও থানার হত্যা মামলা ইনু-মেনন-পলক-দীপু মনি, মামুন-রুপা-শাকিল গ্রেপ্তার
নিজ বাড়িতে কোয়াড নেতাদের আমন্ত্রণ জানালেন বাইডেন
ফিরলেন লিটনও, সঙ্গী পাচ্ছেন না শান্ত
থিতু হয়ে ফিরলেন সাকিব