ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

গাজীপুর সিটি জয়ে কাজ করবে যে সমীকরণ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২০ মে ২০২৩, ১০:৩৫ পিএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম

আর মাত্র ৪ দিন পরেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাজীপুরের প্রার্থীরা। বিএনপি বিহীন এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে কঠিন চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। স্থানীয় ভোট বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের এ নির্বাচনে জয়ে প্রধান নিয়ামক হতে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের নতুন ভোটারা। তারা এতে বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে নগরের কাউন্সিল প্রার্থীরা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ওই নির্বাচনে জয়লাভ আওয়ামী লীগের জন্য এ বড় এসিট টেস্ট হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে গাজীপুর নির্বাচনের ভোট বিশ্লেষণকারীরা বলছেন, এ নির্বাচনে নতুন ভোটার, শ্রমিক, বস্তিবাসী, আঞ্চলিক ভোটার, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সমর্থন, উন্নয়নবঞ্চিত ভোটার, কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতা ও সংখ্যালঘু ভোটের হিসাব-নিকাশ জয়-পরাজয় নির্ধারণ করতে পারে।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিটি কর্পোরেশন গাজীপুর সিটি। সেই সিটিতে চলছে ভোটের আয়োজন। এবার সিটি নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি ও জামায়াত। মাঠে আছে জাতীয় পার্টিসহ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন আজমত উল্ল্যাহ খান। বিএনপি নির্বাচনের বাইরে থাকায় আলোচনায় বিতর্কিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। আজমত উল্লা খান আর মেয়র জাহাঙ্গীরের মায়ের মধ্যেই ভোটের লড়াই চলছে। আগামী মঙ্গলবার এই সিটিতে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন। তাই প্রধান দুই প্রার্থীই এখন ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছে। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের বাইরে বেশ কিছু ভোট টানবেন। তার মূল ভরসা আসলে সাধারণ ভোটাররা। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মোট মেয়র প্রার্থী আটজন। ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ২৪৩ জন ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ৭৮ জন।

দলের স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বলছেন, রাজনীতি করেই চুল পাকিয়েছেন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান। কিন্তু তাকে টাফ চ্যালেঞ্জ দিতে পারেন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। কারণ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে যারা কাজ করছে তারা মূলত টাকার জন্যই। এরা আসলে আওয়ামী লীগ করে না, তারা জাহাঙ্গীর লীগ করে। তবে জাহাঙ্গীর আলম যখন আওয়ামী লীগ করত, তখন এরা আওয়ামী লীগ করলেও এদের অধিকাংশের দলে পদ-পদবি ছিল না।

গাজীপুর আওয়ামী লীগের মাঠ নেতারা বলছেন, গাজীপুর আওয়ামী লীগে রাজনীতিতে আজমত উল্লা খানের লম্বা ক্যারিয়ার রয়েছে। কিন্তু তার জন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে বেশ কয়েকটি। দলীয় পদে থাকার সময় আওয়ামী লীগের বাইরে দলীয় একটি ‘বলয়’ তৈরি করেন জাহাঙ্গীর আলম। যাদের অনেকে এক সময় বিএনপি-জামায়াতে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে এখন জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গেই রয়েছেন। এবারও যদি আজমত উল্লাহর জন্য চ্যালেঞ্জ আসে তা আসবে জাহাঙ্গীর আলমের আগে সেই ‘বলয়’ থেকে। ওই বলয়ের লোকেরা জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করছে।

এ বিষয়ে গাজীপুর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, ক্ষমতার আওয়ামী লীগ, নব্য আওয়ামী লীগ এক হয়ে এবারের নির্বাচনে আজমত উল্লা খানের বিপক্ষে কাজ করতে শুরু করেছেন। সে বিষয়টিই এবার নির্বাচনে তথাৎ গড়ে দেবে। তাদের গেম মেকার হবে টাকা। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের টাকা আছে। মানুষকে সহযোগিতা করেছে। নিজের রাজনৈতিক বলয় তৈরির স্বার্থে অনেক টাকা খরচ করেন। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে আদর্শিক কমিটমেন্ট না থাকলে তাদের সকল যোগ্যতাই অযোগ্যতা হয়ে যায়। যার উদাহরণ জাহাঙ্গীর। শুধু পেতে চায়। ছাড় দিতে চায় না।

নগরীর তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যমে এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি নির্বাচন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সম্বনিত টিম প্রতিদিনই কোনো না কোনো কেন্দ্রীয় গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ভোটারদের ঘরে পৌঁছার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দলীয় সাপোর্টে ভোটের মাঠে বেশ এগিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীনের মনোনীত আজমত উল্লা খান। তবে নিজের অনুসারীদের নিয়ে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে প্রতিদিনই প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়রে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন। মূলত মায়ের ভোটের কাজগুলো জাহাঙ্গীর নিজের হাতেই করছে নিজের অনুসারীদের নিয়ে। সিটির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে নিজের দখলে। কোনাবাড়ী ও শ্রীপুরে গার্মেন্টস, স্কুল, কলেজ ও নানা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থাকায় এসব ভাসমান ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টায় এগিয়ে রয়েছের জাহাঙ্গীরের মা। তবে অন্য এলাকাগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীরা শক্ত অবস্থানে থাকায় সেখানে আজমত উল্লার ভোট ব্যাংক ভারী হতে পারে। তবে সর্বশেষ নতুন ভোটার ও ভাসমান ভোটার যারা রয়েছে, তাদের যে আকর্ষণ করতে পারবে তারাই জয় পাবে।

গাজীপুর ভোট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার গাজীপুর সিটিতে নতুন ভোটার বেড়েছে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পোশাক কারখানার শ্রমিক। ফলে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে নতুন ভোটাররা বড় ফ্যাক্টর হবেন। নতুন ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনসহ অন্য মেয়র প্রার্থীরা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল জেলা হওয়ায় শিল্পকারখানায় চাকরির সুবাদে অন্যান্য জেলার হাজার হাজার মানুষ এ জেলায় এসে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, যাদের বেশিরভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক। ফলে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের প্রধান ফ্যাক্টর বিবেচিত হন শ্রমিকরা। তাদের পক্ষে টানতে নানা কৌশল ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী ইশতেহারে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়ে শ্রমিকদের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান ও নানা কল্যাণমুখী প্রতিশ্রুতির কথা বলছেন মেয়র প্রার্থীরা। এ সিটিতে অনেক মাদ্রাসা থাকায় হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমানও জোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সমান তালে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজউদ্দিন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন থানা এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

শুক্রবার ভোটের মাঠে নিজের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ ও আধুনিক নগর গড়তে হলে নৌকার কোনো বিকল্প নাই। গাজীপুরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। আমি আশা করি, গাজীপুরবাসী স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেবেন। এখন আর নিজের প্রতিপক্ষ কেউ নেই বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে সমানভাবে পাল্লা দিয়ে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জায়েদা খাতুন দিনভর নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মাকে বিজয়ী করতে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর নিজেদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থীর পক্ষে কর্মকৌশল তৈরি করে প্রতিদিন মাঠে নামছেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা