বাইডেন মতবাদ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ
২০ মে ২০২৩, ১০:৩৯ পিএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
১৯৪০ এবং ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ^যুদ্ধের বিশৃঙ্খলা থেকে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এর চালেঞ্জগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য এটি পরাশক্তিগুলির মধ্যে শান্তি বজায় রেখে আসছিল এবং কয়েক দশকের প্রবৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে শত কোটি লোককে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছিল। এখন মুক্ত বাজার এবং বৈশ্বিক শৃঙ্খলার ওপর ভিত্তি করে সেই বিশ^ ব্যবস্থা বহাল রাখার মার্কিন প্রতিশ্রুতি বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠেছে। ঘরোয়া রাজনীতিতে ক্ষতিকর পক্ষপাতিত্ব সরকারের প্রতি মার্কিন জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের আর্থিক সঙ্কট মার্কিন বাজারের উপর আস্থা নষ্ট করেছে এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা তার বৈশি^ক গণতন্ত্র বিস্তারের দাবি এভং নেতৃত্বকে ক্ষুণœ করেছে।
আজ বেশিরভাগ দেশ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার মার্কিন আহ্বানে অনুসরণ করতে অস্বীকার করছে। এবং চীনের উত্থান মার্কিন রাজনীতিবিদদের ভূ-রাজনীতিতে আরও স্বার্থপর ও বিচ্ছিন্নতাবাদী পদ্ধতি গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। দ্য ইকোনমিস্টের সাথে একটি সাক্ষাতকারে প্রবীণ রাষ্ট্রনায়কদের জ্যেষ্ঠতম রাষ্ট্রনায়ক হেনরি কিসিঞ্জার, যিনি এই মাসে ১শ’ বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন, সতর্ক করেছেন যে, চীন এবং আমেরিকা সংঘর্ষের পথে রয়েছে। উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্রধারী এবং অতি বিপজ্জনক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেছেন, ‘উভয় পক্ষই নিজেদেরকে নিশ্চিত করেছে যে, অপরপক্ষ একটি কৌশলগত বিপদের প্রতিনিধিত্ব করে।’ কিসিঞ্জার উদ্বিগ্ন যে, ঠিক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের মতো পরাশক্তিগুলো আবারো বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
২০২১ সালে ওভাল অফিসে আসার পর থেকে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য রক্ষা এবং সংঘাতের ঝুঁকি কমাতে একটি নতুন কৌশল তৈরি করেছেন। তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান সম্প্রতি মধ্যবিত্তের সমৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে একত্রিত করে একটি নীতি প্রস্তাব করেছেন। বাইডেন প্রশাসন এখন চীনের বিরুদ্ধে সুর নরম করে চীনের অর্থনীতি থেকে ‹বিচ্ছিন্ন› হওয়ার পরিবর্তে ‹ঝুঁকিহীন› নীতি প্রণয়নের কথা বলছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন, আফ্রিকান ঋণ এবং এমনকি ইউক্রেন ইস্যুকে চীনের সাথে সমঝোতার পথ খুঁজে পেতে চায়। গত ১০ এবং ১১ মে সালিভান তার চীনা প্রতিপক্ষের সাথে আট ঘন্টা বৈঠক করেছেন, যা কয়েক মাসের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ।
অপেক্ষাকৃত কম লক্ষ্যভ্রষ্ট নেতৃত্ব (ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর) বিশ^জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করবে, এমনকি বাইডেন প্রশাসন কয়েকটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিয়ম ভঙ্গ করলেও, এটি চীনের সাথে সম্পর্ককে কৌশলগত পরিপক্কতার সাথে পরিচালনা করবে। সতর্কতা হিসেবে দেশটি চীনকে আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে তার সামরিক বাহিনীতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে থাকবে। বাইডেন ঠিকই বলেছেন যে, চীনা আধিপত্য থেকে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিকে অবশ্যই নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তবে, ট্রাম্প বছরের বিশৃঙ্খলার পর বাইডেনের নতুন মতবাদ কতটুকু সফল হবে, তা এই সপ্তাহে জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রতীয়মাণ হবে।
সালিভান সমবায় বাণিজ্যের সাথে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং সহযোগিতার সাথে একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা একত্রিত করতে চান। তবে চীনের নেতারা মনে করেন যে, এই কৌশলটির উদ্দেশ্য চীনকে দমিয়ে রাখা। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেম্য আরও শক্তিশালী হবে, যদি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত না হয়, যদি ট্রাম্প-যুগের শুল্ক এখনও কার্যকর না থাকে এবং যদি এর রাজনীতিবিদরা চীন ইস্যুতে বাড়াবাড়ির দিক থেকে উপর একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে না চান। বাণিজ্য চুক্তির অভাব সবকিছুকে কঠিন করে তোলে। এআই তো দূরের কথা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্যও কোনও ব্যবস্থা নেই এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের অস্ত্রাগার বর্তমানের প্রায় চারগুণ হবে।
বাইডেন ইউক্রেনকে সমর্থন করছেন এবং এশিয়ায় ন্যাটো ও মিত্রদের পুনরুজ্জীবিত করছেন। তবুও যুক্তরাষ্ট্রে অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ এবং এর বাজারে প্রবেশাধিকার দিতে অনাগ্রহ এর প্রভাবকে হ্রাস করেছে। এদিকে, ইউরোপ ভর্তুকি প্রতিযোগিতার আশঙ্কা করছে এবং চীনের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ইউরোপের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের কাছে জার্মানির অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে দ্বিগুণ উন্মুক্ত। বৈশ্বিক শৃঙ্খলার অবক্ষয় চীনের উদীয়মান অর্থনীতির দ্বারা বৈদেশিক নীতিতে লেনদেনের একটি নতুন পদ্ধতির আলিঙ্গনকে ত্বরান্বিত করেছে।
আজ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং শত্রুরা জানে যে, বাইডেন প্রশাসনের বিশৃঙ্খলা ২০২৪ সালের নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। মার্কিনিদের বোঝাতে হবে যে, আরও আশাবাদী, ইতিবাচক-সমষ্টি তাদের স্বার্থের সেই চাবিকাঠি, যা তাদের দেশকে শক্তিশালী রাখবে, একটি উন্নত বৈদেশিক নীতি উন্মুক্ত করবে এবং এটিকে বাণিজ্য, জলবায়ু, এআই ও আরও অনেক কিছুর উপর নতুন বৈশ্বিক নিয়ম তৈরিতে সাহায্য করার সৃডোগ দেবে, যারে ওপর পুরানো এবং নতুন মার্কিন মিত্ররা নির্ভর করতে পারে। কেবলমাত্র এই ধরনের একটি পুনরুজ্জীবিত বৈশ্বিক ব্যবস্থাই চীনকে মোকাবেলা করার জন্য সর্বোত্তম মার্কিন প্রতিরক্ষা হিসিবে কাজ করতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, বাইডেন মতবাদ মাকিণ নেতৃত্বের পতন ঠেকাতে এবং তাই দেশটির ঘুণে ধরা রাজনীতি একটি উদারপন্থী মোড়ল হিসাবে এর ভূমিকাকে সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা