খুলনার নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে
২২ মে ২০২৩, ১১:০২ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
খুলনায় হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে বিএনপি। অধিকাংশ নেতাকর্মীরই সময় কাটছে মামলায় হাজিরা দিতে আদালতের বারান্দায় নয়তো আত্মগোপন অবস্থায়। প্রতিটি মামলার ‘অজ্ঞাত আসামি’ হয়ে গ্রেফতার আতঙ্ক সব সময় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের। প্রথম সারির বিএনপি নেতাদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে উচ্চ আদালদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে তাদের।
বড় কোনো সভা সমাবেশ থাকলেই কোন না কোন ভাবে পুলিশের বাধায় সংঘর্ষের সৃষ্টি হচ্ছে। গত ১৯ মে এমনই এক সংঘর্ষে ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন রয়েছেন। ২ এপ্রিল ৮৫৯ জনকে আসামি করে মামলা করে সদর থানা পুলিশ। ওই মামলায় ৫৯ জনকে আসামি করা হয় এবং বাকীদের অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
গত ২৭ এপ্রিল জামিন চাইতে গেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও খুলনা জেলা বিএনপির আহŸায়ক আমির এজাজ খানসহ ১৩ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। ১১ ফেব্রæয়ারি জেলার ডুমুরিয়া থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ আসামি করা হয় ১৩০ জনকে। গত বছর ৪ ও ৫ অক্টোবর ৬ টি মামলায় বিএনপির ৮৬৬ জনকে আসামি করা হয়। সেপ্টেম্বরের ১৩, ২০ ও ২১ তারিখে আরো তিনটি মামলা দেয়া হয় কয়েক শ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। গত বছর ২৭ মে সদর থানা পুলিশের আরেক মামলায় বিএনপির ৯০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ সব মামলা চলমান রয়েছে। যার প্রতিটি মামলায় নির্দিষ্ট তারিখে হাজিরা দিতে হয় এবং জামিন লাভ করতে হয়।
এ বিষয়ে খুলনা নগর বিএনপির আহŸায়ক অ্যাড. শফিকুল আলম মনা বলেন, খুলনায় আমাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এ মুহূর্তে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে রয়েছেন। পুলিশ বাদী হওয়া এ সকল মামলাগুলোর এজাহারে বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করা হলেও সব ঘটনাগুলোতেই পুলিশ বিনা উস্কানীতে প্রথমে নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। মামলায় হাজিরা দিতে গেলেও নেতাকর্মীরা সবসময় আতঙ্ক থাকেন, কোন সময় কারাগারে যেতে হয়।
পুলিশের মামলায় এমনও আসামি রয়েছে, যারা বেঁচে নেই। কাজেই সহজেই অনুমান করা যায়, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসকল মামলা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, হামলা মামলা করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা রাজপথ ছাড়িনি, ছাড়বও না।
গত ১৯ মে সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী খুলনায় আসেন। তিনি আহত নেতাকর্মীদের দেখতে যান। পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, খুলনায় পায়ে পাড়া দিয়ে সংঘাতের সৃষ্টি করেছে পুলিশ। এ জন্য দায়ী খুলনার পুলিশ প্রশাসন। খুলনার পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ওসি-প্রত্যেকে এ জন্য দায়ী। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ স্বজনেরা খুলনা অঞ্চলে বিভিন্নভাবে ক্ষমতা ভোগ করেন। তাঁদের মন পেতে পুলিশ প্রশাসন ন্যাক্কারজনক ভ‚মিকা পালন করেছে। শান্তিপূর্ণ একটি কর্মসূচিকে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বানচাল করে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, এটা এখন তাদের মন্ত্রীরা বিশ্বাস করেন না। আমরা এত দিন দুর্নীতি, অর্থ পাচার, বাজারের সিন্ডিকেটের কথা বলেছি। এখন তাদের মন্ত্রীরাই বলছেন, মন্ত্রীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমরা এত দিন নির্ভেজাল কথা বলেছি, তা প্রমাণিত হচ্ছে।
এদিকে, গতকাল সোমবার খুলনা জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অহেতুক আটক-গ্রেফতারের নামে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাড়িতে-বাড়িতে অভিযানে গিয়ে অবলা নারী ও অবুঝ শিশুদের সাথে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে পুলিশ। জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খানে এক বিবৃতিতে বলেছেন, খুলনার নয় উপজেলা এবং দু’টি পৌরসভায় বিনা মামলায় প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ১৯ মে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের নির্বিকারে গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল ও বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত জখম হয়েছেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী ও নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ ৪৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো তেরো শ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নিরীহ নেতকর্মীদের গ্রেফতার করে খুলনা সদর থানার ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে-যা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত আওয়ামী নীলনকশা। বিবৃতিতে তিনি হতাশ না হয়ে গ্রেফতার এড়িয়ে কৌশলী হতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি আহŸান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রদীপ নিভে যাওয়ার পূর্বে যেমন দপ করে বেশি জ্বলে উঠে- শেখ হাসিনার পতন অবশ্যম্ভাবী, সে কারণেই পুলিশকে রক্ষীবাহিনীর মতো ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টা করছে। কিন্তু জনবিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সে দিবাস্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সিংগাইরের তহরা হত্যা মামলা : শিক্ষক লালমুদ্দিনের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার
১৫ জানুয়ারি বিদায়ী ভাষণ দেবেন জো বাইডেন
’৭১ প্রশ্নে জামায়াতে নতুন আলোচনা, আসতে পারে সিদ্ধান্ত
ঘণকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে বিদেশি জাহাজ মোংলায়
চীন সফরে রেচেল রিভস , যুক্তরাজ্যের উন্নতির প্রতিশ্রুতি
দায়িত্ব পেলে আমরা ধর্ম ও দল দেখব না : জামায়াতের আমির
'মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কী'
বায়ুদূষণের শীর্ষে কলকাতা, ঢাকা দ্বিতীয়
তথ্য গোপন মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও নেই কোনও শাস্তি
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী কারেন বিদ্রোহীরা, প্রশাসন গঠনে চ্যালেঞ্জ
ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি
লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে নিহতের সংখ্যা ১১, সংকট আরও বাড়ছে
মেঘনায় বাল্কহেড-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২, একাধিক নিখোঁজ
গাজায় টেলিকম সেবা বন্ধের আশঙ্কা , জ্বালানি সংকটে জরুরি সেবা বিপর্যস্ত
সিরিয়ায় আসাদ অনুগত কর্মকর্তার জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস বন্ধ
ইয়েমেনে বিদ্যুৎ কেন্দ্র-বন্দরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলা
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ২১, মানবিক বিপর্যয় চরমে
ফেনীর মহিপালে এক শিশুসহ ৭ রোহিঙ্গাকে আটক