ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
ইমরান খানের সাথে সশস্ত্রবাহিনীর সংঘাত

পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে থাকা মঙ্গলজনক নয়

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২২ মে ২০২৩, ১১:৩৫ পিএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৩, ১১:৩৫ পিএম

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যের লড়াই দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। একদিকে, অন্যতম বিশ^সেরা ক্রিকেটার থেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া খান, অন্য দিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, যিনি ব্যক্তিগতভাবে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করেন এবং এমন একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন, যারা পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কৌশলে ইমরান খানকে ২০২২ সালের এপ্রিলে সংসদীয় অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করার পর থেকে তিনি নিরলস প্রতিবাদ করে আসছেন। এটি খানের জন্য একটি কঠিন লড়াইয়ে পরণিত হয়েছে, যেখানে সামরিক বাহিনীকে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং পাকিস্তানের নেতৃত্বে বসানোর জন্য তাদের প্রিয়জনকে বেছে নেওয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

দেশবিভাগের পর থেকে পাকিস্তানের জেনারেলরা দেশ পরিচালনায় আরও বেশি জড়িত হয়েছেন এবং দেশটির বেসামরিক নেতারা তাদের সমর্থনের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল। দেশের ৩১ জন প্রধানমন্ত্রীর কেউই পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা ততক্ষণ সরকারী পদে টিকে থাকেন, যতক্ষণ তারা সেনাবাহিনীর নির্দেশ মতো চলেন। খানের অভিযোগ করেছেন যে, তাকে মার্কিন মদদে সেনাপ্রধান এবং খানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে হেনস্থা করছেন। তার এই অভিযোগ জনগণের মধ্যে ব্যাপক সহানুভূতি তৈরি করেছে। এর মধ্যে তাকে হত্যার চেষ্টায় গুলি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে এবং এই মাসের শুরুর দিকে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। উইলসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‹সাধারণত এই সংঘাতগুলিতে সেনাবাহিনী বিজয়ী হয়, তবে সশস্ত্র বাহিনীর আত্মরক্ষামূলক ভূমিকা, যাতে তারা বছরের পর বছর ধরে ছিল না, কে জানে এই সংঘর্ষ কোন দিকে নিয়ে যাবে।’

বর্তমান পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) সরকার হতাশা নিয়ে দেখছে যে, ইমরান খানের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, এমনকি দুর্নীতি থেকে সন্ত্রাস পর্যন্ত অসংখ্য মামলার শিকার হওয়ার পরেও। পাকিস্তানের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার খানের দুর্নীতি বিরোধী এবং কল্যাণমুখী কার্যক্রম তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। সরকার বা সেনাবাহিনী তাকে নিয়ে যাই করুক না কেন, পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মধ্যে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মাসের শুরুতে খানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ সমাবেশে পাকিস্তানি আদিল খান বলেন, ‹ইমরান খান আমাদের সিংহ এবং একজন মহান নেতা যিনি পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেন।› তবে, সেনাবাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বের জেরে, তিনি আরও আইনি মামলায় পড়তে পারেন, তার দলের শীর্ষ পর্যায়ে বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে এবং তার মিত্রদের বিভক্ত করার প্রচেষ্টা ঘটতে পারে। যদিও ইমরান খান এই মাসের শুরুতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন, যখন সুপ্রিম কোর্ট সন্ত্রাসবাদ এবং দুর্নীতির অভিযোগে তার গ্রেপ্তারকে বেআইনি বলে রায় দিয়েছিল, তবুও এটি অস্থায়ী বলে প্রমানিত হতে পারে। কারণ, এপর্যন্ত সেনাবাহিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা একটি বিপজ্জনক আকাঙ্খা হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।

যদিও পাকিস্তানের এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন, তবে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি রাজনীতি থেকে অযোগ্য ঘোষিত হবেন, যা তার সাম্প্রতিক পূর্বসূরি নওয়াজ শরিফের ক্ষেত্রেও ঘটেছে, যিনি সেনাবাহিনীর সাথে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন। খানের আশঙ্কা যে, এই অক্টোবরে নির্ধারিত নির্বাচন যদি আদৌ অনুষ্ঠিত হয়, তাহলেও তা তাকে কারাগার থেকে অবলোকন করতে হবে। ইমরান খানের বাসভবন ঘেরাও ও পুনরায় গ্রেপ্তারের সম্ভবনার ফলে পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভ সামরিক শক্তির প্রয়োগকে আরও প্ররোচিত করেছে। এর ফলে, যা উদ্ভূত হয়েছে তা হল, দুটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে বিস্তৃত সংঘর্ষ। বিচার বিভাগের একটি অংশ-খানের পক্ষে এবং সেনাবাহিনী যে দলগুলিকে সমর্থন করে, তাদের বিরুদ্ধে। কুগেলম্যান বলেন, ‘সপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্তে বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব নিরুৎসাহিত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারা চায় না যে, খানের ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ থাকুক, এবং এর অর্থ হল, আরেকটি গ্রেপ্তার ঘটতে পারে, অথবা তাকে পদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করার চেষ্টা করা হতে পারে।’

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দেশটির ক্ষমতার অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধচারণ করলে খারাপ পরিণতি ঘটে। এই সমস্যার সমাধান না হলে, এটি দেশটিকে পঙ্গু করে দেবে, যার অর্থনৈতিক ধ্বস ইতিমধ্যে ৪০ কোটি পাকিস্তানিকে দারিদ্র্যে নিমজ্জিত করেছে। এমনকি পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনও প্রকাশ্যে এর বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে। প্রাক্তন সৈন্যরা ব্যাপকভাবে বরেণ্য হতে পারেন, কিন্তু তাদের আমলাতন্ত্রের দখল নেওয়ার প্রবণতা এবং পর্দার আড়ালে থেকে পাকিস্তানের রাজনীতি পরিচালনার প্রচেষ্টা সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। এতে একটি দীর্ঘ প্রাতিষ্ঠানিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের অর্থ সংকট এড়াতে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক তহবিল নিয়ে আলোচনার জন্য এখন একটি নির্বাচনী ইশতেহার সহ ভাল সরকারের প্রয়োজন। দ্য গার্ডিয়ানের শনিবারের সম্পাদকীয়তে যেমনটি বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানে এখন সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে একটি বেসামরিক সরকার থাকার চেয়ে বরং বেসামরিক সরকারের অধীনে একটি সামরিক বাহিনী থাকলে দেশটির জন্য মঙ্গজনক হবে।’ সূত্র:দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য গার্ডিয়ান।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান