ভারতের রাকেশ বাংলাদেশে হোসেন পরিচয়ে মাদকের কারবারে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

২৩ মে ২০২৩, ১১:২৭ পিএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

মাত্র ১০ বছর বয়সে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে রাকেশ শীল। প্রথমে সেলুনের দোকানে চাকরি নেয়। সেখান থেকে বাস চালকের সহকারী। এই পরিচয়ের আড়ালে সীমান্ত এলাকায় জড়িয়ে পড়ে মাদকের কারবারে। সীমান্তে ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে গড়ে তোলে সিন্ডিকেট। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ কয়েকটি এলাকায় গড়ে তোলে মাদকের সাম্রাজ্য। ধর্ম পরিবর্তন না করে হোসেন নাম ধারন করে সে।
অবশেষে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে এই ভারতীয় মাদক কারবারি। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় দু’টি পিকআপে তল্লাশি চালিয়ে র‌্যাব ৭২ কেজি গাঁজাসহ রাকেশ ও তার ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার ওই সাতজনের মধ্যে রাকেশ শীল ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বাংলাদেশে এসে হোসেন নামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানিয়ে রাকেশ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মাদক কারবারিদের কাছ থেকে গাঁজা এনে বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করতো।
সোমবার রাতে লোহাগাড়ার পাকা রাস্তার মাথা এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা হলেন- রাকেশ শীল ওরফে হোসেন (৩৫), আলী হোসেন (২৭), আমান উল্লাহ (২৬), মো. ইদ্রিস (৩৮), আব্দুর জব্বার (৩৮), নুরুল কাদের ভুট্টো (২৫) এবং মনির উদ্দিন (৩৫)। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, গাঁজার চালানটি মূলত রাকেশ শীলের। মাত্র দশ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালে সে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। প্রথমে নোয়াখালী এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দরটিলায় সেলুনে কাজ করতো।
২০১৩ সালের দিকে রাকেশ বন্দরটিলা এলাকায় গাড়ির হেলপারের কাজ নেয়। এরপর লোহাগাড়ার চুনতি এলাকার এক মেয়েকে বিয়ে করে। সেই ঠিকানা ব্যবহার করে মো. হোসেন নামে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে। সে হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছে। ধর্ম পরিবর্তন করেনি। রাকেশ মূলত মাদক বিক্রেতাদের কাছে হোসেন নামে পরিচিত। ভারতীয় বংশেদ্ভিূত হওয়ায় ফেনী-কুমিল্লার সীমান্ত এলাকার মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ আছে। সেই যোগাযোগ এবং গাড়ির হেলপারের চাকরিকে কাজে লাগিয়ে সে সীমান্ত এলাকা থেকে গাঁজা ফেনসিডিল এনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সরবরাহ করতো। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে চট্টগ্রামে বিক্রি করতো।
চট্টগ্রামে সীতাকু-ের অপরাধপ্রবণ জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় রাকেশ পরিবার নিয়ে বসবাস করে। জঙ্গল সলিমপুরে তার মাদকের আখড়া আছে। চান্দগাঁওয়ের মোহরা এলাকায়ও একাধিক মাদকের আখড়া আছে তার। এর আগে জঙ্গল সলিমপুরে তিনবার অভিযান চালিয়েও রাকেশকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। কারণ হোসেন নামে মাদক ব্যবসায়ীরা ছাড়া আর কেউ তাকে চিনতো না। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলায় তিনটি মাদক আইনের মামলা আছে।
র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা জানান, র‌্যাবের বিভিন্ন অভিযানে মাদক সম্রাট রাকেশের মাদকের একাধিক চালান আটক হয়। তিন বার তার আস্তানা এবং পাচারকালে গাড়িসহ মাদকের চালান আটক হলেও সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। কারণ চালাক রাকেশ ধরা পড়ার ভয়ে নেপথ্যে থেকে মাদক পাচার করতো। ক্রমাগত অভিযানের মুখে একের পর এক তার চালান ধরা পড়ে যাওয়ায় এবার সে নিজেই সরাসরি মাদক পাচারে নেমে পড়ে। দীর্ঘদিন থেকে নজরদারির কারণে অবশেষে তাকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।
রাকেশের আদি নিবাস ও জন্মস্থান ভারতের ত্রিপুরায়। সেখানে তার বাবা মা মারা যাওয়ার পর তার বয়স যখন দশ বছর তখন সে অন্য একজনের হাত ধরে বাংলাদেশ চলে আসে। বিগত ১০ বছর রাকেশ তার পরিবার নিয়ে সীতাকুন্ড থানাধীন জংগল সলিমপুর ইউনিয়নের ছিন্নমূল এলাকায় বসবাস করে আসছে।
র‌্যাব জানায়, ভারতীয় হওয়ায় তার ভারতীয় বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। এই সুযোগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে নিজে জনবল নিয়োগ দিয়ে মাদক আখড়া চালু করে। ধীরে ধীরে তার মাদক ব্যবসা ফুলে-ফুঁপে উঠলে সে কক্সবাজারেও গাঁজা ও ফেন্সিডিল সরবরাহ শুরু করে। আর সেখান থেকে ইয়াবার চালান এনে চট্টগ্রামে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি শুরু করে। রাকেশ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি,আমরা বসে নেই : পিনাকী ভট্টাচার্য
আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়
জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি
নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা
আরও

আরও পড়ুন

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি,আমরা বসে নেই : পিনাকী ভট্টাচার্য

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি,আমরা বসে নেই : পিনাকী ভট্টাচার্য

৪১ বছর ইমামতি করা ইমামকে রাজকীয় বিদায়

৪১ বছর ইমামতি করা ইমামকে রাজকীয় বিদায়

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিদেশি কর্মী, ভিসা নিয়ে বিতর্ক

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিদেশি কর্মী, ভিসা নিয়ে বিতর্ক

আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

মাদারীপুরের মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

মাদারীপুরের মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিবে: মিজানুর রহমান আজহারী

বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিবে: মিজানুর রহমান আজহারী

টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে নেপাল গেল সৈয়দপুরের দল

টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে নেপাল গেল সৈয়দপুরের দল

আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়

আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়

পর্তুগালে জাসাসের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

পর্তুগালে জাসাসের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

আজারবাইজানের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করলেন রুশ বিমান প্রধান

আজারবাইজানের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করলেন রুশ বিমান প্রধান

প্রকাশ্যে এলো হানি-বাদশার দ্বন্দ্ব, গুরুতর অভিযোগ হানির

প্রকাশ্যে এলো হানি-বাদশার দ্বন্দ্ব, গুরুতর অভিযোগ হানির

বন্ধ হয়ে গেলো গাজার শেষ হাসপাতালটিও

বন্ধ হয়ে গেলো গাজার শেষ হাসপাতালটিও

মনমোহন সিংহ,ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া এক সাহসী ও দৃঢ় সংকল্পের নেতা

মনমোহন সিংহ,ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া এক সাহসী ও দৃঢ় সংকল্পের নেতা

জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি

জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি

নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা

নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা

সচিবালয়ের কাগজ ভেবে দুটি ট্রাক আটকালো জনতা

সচিবালয়ের কাগজ ভেবে দুটি ট্রাক আটকালো জনতা

মাত্র সাত মাসেই হাফেজ হলেন ১০ বছরের আব্দুল্লাহ

মাত্র সাত মাসেই হাফেজ হলেন ১০ বছরের আব্দুল্লাহ

সিরিয়ায় আসাদের পতন, ঘরে ফিরছে ৩০ হাজার শরণার্থী

সিরিয়ায় আসাদের পতন, ঘরে ফিরছে ৩০ হাজার শরণার্থী

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত

ভুল তথ্যে চায়ের দোকানে ফায়ার সার্ভিস, অথচ পানের বরজ পুড়ে ছাই

ভুল তথ্যে চায়ের দোকানে ফায়ার সার্ভিস, অথচ পানের বরজ পুড়ে ছাই