ধানের দাম আরো কমছে দিশেহারা কৃষক
২৪ মে ২০২৩, ১০:৩৬ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বাজারে সব কিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও একমাত্র ধানের দাম প্রতিনিয়ত কমছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। বোরো ধানের ভরা মৌসুমে বাজারে ধানের দাম কমতে থাকায় কৃষক এখন দিশেহারা। সরকার ৩০ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের ঘোষণা দিলেও তা এখনো শুরু হয়নি। আর এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে কম দামে ধান কিনে মজুদ করছে বলে অনেক কৃষকের অভিযোগ।
এবারের বোরো মৌসুম ছিল কৃষকদের জন্য সর্বোচ্চ খরচের বছর। খরার কারণে জমিতে সেচ দিতে হয়েছে বেশি। সেচযন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম রেকর্ড পর্যায়ে। একই সঙ্গে বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। অথচ সীমাহীন খরচের এই মৌসুম শেষে ধানের কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছেন না কৃষক। উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে তাদের দাবি।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এ বছর প্রতি মণ বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকার বেশি। অবশ্য কৃষকের দাবি এক মণ ধান উৎপাদনে তাদের খরচ হয় ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকার মতো। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমের শুরুতে বোরো ধান বিক্রি হয়েছে এলাকাভেদে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা (মোটা ধান) মণ দরে। কাঁচা ধানের দাম ছিল আরো কম। সরু জাতের ধানের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকা। এ দামে ধান বিক্রি করে মণপ্রতি দেড় থেকে ২শ’ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এ অবস্থায় চলতি সপ্তাহে ধানের দাম আরো কমে গেছে। এখন বাজারে মোটা জাতের ধান ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক এখন হতাশ।
কৃষকরা বলছেন, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার মধ্যে, যা এ বছর সেচ, সার, কীটনাশক ও মজুরি বাড়ায় দাঁড়িয়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ডিজেলের দাম বাড়ায় সেচ খরচ বেড়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। সারের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া বীজ ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে চড়া দামে। ধান পরিচর্যা, কাটা, শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহনসহ অন্য সব ধরনের খরচও বাড়তি। কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বাড়লেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। ধান বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কম দামে।
জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, এ জেলায় ধানের বাজার নিম্নমুখী। এক সপ্তাহ আগেও ধান যে দামে বিক্রি হচ্ছিল তা থেকে মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমেছে। সেচ খরচ, সার ও কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিক সংকটের মধ্যেও ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকরা হতাশ।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল, বড়ইতলী, পাকার মাথা ও কালাই শহরের পাঁচশিরা বাজারে প্রতিদিনই ধান কেনাবেচা হয়। এসব বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোল্ডেন আতপ ধান ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা, কাটারি ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা, জিরা ধান ১০০০ থেকে ১১০০ ও সুভলতা ধান ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে ধানের দাম মণপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা কমেছে।
সদর উপজেলার গঙ্গাদাসপুর গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, সপ্তাহখানেক আগেও কাটারি ধান ১২৫০ থেকে ১২৯০ টাকা, জিরা ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা ও সুভলতা ধান ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বড়ইতলীর ধান ব্যবসায়ী হাসান উদ্দিন বলেন, গত মৌসুমের ধান-চাল এখনো মজুত থেকে গেছে। মিলাররাও এখনো নতুন ধান কেনা শুরু করেননি। এ জন্য ধানের বাজার নিম্নমুখী।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, ধানের দাম কমে যাওয়ার কারণ হলো উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় ধান পুরো না পাকতেই কৃষকরা কেটে ফেলছেন। এসব ধানের দাম কম পাওয়া যাচ্ছে। ধানের বাজারে কিছুটা সিন্ডিকেটও কাজ করে। তবে আমাদের বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।
নওগাঁতেও কমছে ধানের দাম। এ জেলার সদর দুবলহাটি ইউনিয়নের প্রতাপদহ গ্রামের কৃষক খালেক বলেন, এবার সার ও সেচের খরচ বেশি হওয়ায় ধার করে ধান চাষ করতে হয়েছে। বিঘাপ্রতি দুই হাজার টাকা সারের জন্য ও সেচে আরো হাজার টাকা বেশি লেগেছে। ধান কাটতে একজন শ্রমিককে মজুরি দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। সঙ্গে তিন বেলা খাবার। এখন ধান বেচে সেটা পরিশোধ হচ্ছে না। এ এলাকায় প্রতি মণ মোটা ধান (কাঁচা) বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। এত কম দামে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। লোকসান হচ্ছে। পাওনাদারের তাগাদায় বাধ্য হয়ে কম দামে বাজারে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার দুগিয়া গ্রামের কৃষক সেলিম বলেন, সরকার ধান ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও তা এখনো শুরু করেনি। এ ছাড়া যে নিয়মে সরকার ধান কিনে তাতে প্রকৃত কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারে না। সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরাই তাদের নিজেদের আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় কর্মীদের মাঝে ধান বিক্রি করে। তারপরও সরকার ঘোষিত মূল্যে ধান কেনা শুরু করে ব্যাপারিরা বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান কেনে। সরকার ধান না কেনায় ব্যাপারিরা এখন সিন্ডিকেট করে কম দামে ধান কিনে মজুত করছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সাংবাদিক বশিরসহ জনবাণী’র সম্পাদকের উপর হামলার ঘটনায় ডিআরইউ-র্যাকের উদ্বেগ
রামগতিতে ভিক্ষুকের জমি রেজিস্ট্রি না দেয়ায় লাশ দাফনে বাঁধা
র্যাকের সভাপতি আলাউদ্দিন আরিফ, সাধারণ সম্পাদক তাবারুল
রাষ্ট্রদূত হলেন সেনাবাহিনীর ২ সিনিয়র কর্মকর্তা
ব্রাহ্মণপাড়ায় আলোচিত শফি উল্লাহ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১
ফরিদপুরের ধলার মোড়ে ৮ম ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত
খালেদ মুহিউদ্দীনকে কী পাঠ পড়ালেন ড. আলী রীয়াজ
জানুয়ারিতে আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
আটঘরিয়ায় বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলোচনা সভা ও মিছিল
আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
মহাবিশ্বের সুদূর পারে মিলল অতিকায় মহাসাগরের সন্ধান
‘সচিবালয়ে আগুন প্রমাণ করে দুস্কৃতিকারীরা সক্রিয়, সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে’
নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পণ্যবাহী ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
মাহমুদুর রহমান’কে হত্যাচেষ্টা মামলার অগ্রগতি শুন্য
সচিবালয়ে আগুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত: ইউট্যাব
মির্জাপুরে ঘর ভেঙে দিয়ে সরকারি জমি উদ্ধার
নামাজ পড়ে সাইকেল উপহার পেলো ৫৬ শিশু
দৌলতদিয়ায় আগুনে গবাদি পশুসহ বাড়ি পুড়ে ছাই
ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চাই সমমর্যাদার ভিত্তিতে: আলতাফ হোসেন চৌধুরী
মাদারীপুরে ২ পক্ষের সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ১০