খালেদ মুহিউদ্দীনকে কী পাঠ পড়ালেন ড. আলী রীয়াজ

Daily Inqilab সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সঙ্গে আলোচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের একটি টকশো ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। টকশোতে আলী রীয়াজের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল, যা ইচ্ছা তাই লেখা যেত। ফ্যাসিস্ট আমলে যেভাবে সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা হত এখনও কি ঠিক তেমনটাই করা হচ্ছে না?

 

খালেদ মুহিউদ্দীনের এই প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত দারুন ও যথাযথভাবে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো ও আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (এআইবিএস) প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ। খালেদ মহিউদ্দীনকে তিনি যে পাঠ শিখিয়েছেন তা ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। অন্যদিকে লাইভ টক শো ঠিকানা অনুষ্ঠানে ফ্যাসিস্ট আমলের সাথে বর্তমান শাসনামলকে তুলনা করায় ব্যাপক তোপের মুখে পড়েছেন খালেদ মুহিউদ্দীন।

 

অনুষ্ঠানে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপের প্রশ্নে আপনাকে অনেকবার কলম ধরতে হয়েছে। আমরাও ছোট কলমে ধরেছি। কিন্তু এখন কি পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন দেখেন? যারা ১৫ বছর সুবিধা নিয়েছে তাদের জায়গায় কি আপনি একটা নতুন গোষ্ঠী দেখেন না?- যারা কথায় কথায় ফ্যাসিবাদের পক্ষে জুলাই-আগস্টে কোথায় ছিলেন?- এরকম একটা ট্যাগ দেয়। একটা প্রশ্ন করার জন্য পাঁচটা ট্যাগ এবং একই শেখ হাসিনা স্টাইলে।

 

ড. আলী রীয়াজ বলেন, এই ধরনের প্রশ্ন আমার খুব পছন্দের। প্রশ্ন কোথায় ছিলেন? এটা কে কোথায় ছিল সেটা তার ভূমিকা দিয়ে বোঝা যাবে, বোঝা গেছে। এটা আপনি খুঁজে বের করুন। আমাকে কেউ যদি বলে কোথায় ছিলেন? তো কোথায় ছিলাম এটা আপনি খুঁজে বের করেন আমি কোথায় ছিলাম। প্রশ্নটা হচ্ছে, আপনি যে পরিস্থিতির কথা বলছেন সেই পরিস্থিতিটা হচ্ছে, বিভিন্ন রকম অপ্রতিকার ঘটনাগুলো ঘটছে যেগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে তাইতো? "তো সেটা উদ্বেগজনক আবার একটা ইতিবাচক দিক আছে, এই যে আপনি আমি বলে ফেলতে পারলাম। বাংলাদেশের মধ্যে মানুষ বলতে পারছে যে, এই পরিস্থিতি হচ্ছে। দুই বছর আগে তো সেটা বলা যেত না" বলেন তিনি।

 

তখন খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, আমরা তো বলছি স্যার। এই দুই বছর আগে বলা যাচ্ছে এই কথা তো ঠিক না।আমরা তো বলছি। আমরা বলছি যে, এই প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করতে হবে। এই প্রধানমন্ত্রী কি সমালোচনার উর্ধে নাকি। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো সেই ভূমিকা পালন করেছে। এসময় তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকার প্রমাণে রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বালিশকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলে আনেন।

 

খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, আপনিও তো স্যার প্রথম আলোতে লিখেছেন। কোনটা আপনি লিখেন নাই? জবাবে তিনি বলেন, আপনি জানতে চান। আমার একটা বই আছে অটোক্রেটাইজেশন সম্পর্কে যেটা বাংলাদেশের কোন পাবলিশারের পক্ষে ছাপা সম্ভব হতো? যেটা রাকলেস থেকে ছাপা হয়েছে। ২০১৯ এর জুলাই মাসে 'ভোটিং ইন এ হাইব্রিড রিজিম' যেটা প্যালগ্রাম থেকে বের হয়েছে। আপনার কি মনে হয় ঢাকার কোন পাবলিশার সেটা ছাপতে পারে? অমুক বলেন তমুক বলেন ছাপতে পারতেন? আমি পারি নাই। আপনারা পেরে থাকতে পারেন আমি পারি নাই। আমাকে ফরেন এফেয়ার্সে লিখতে হয়েছে। আমাকে ডিপ্লোমেটে জানুয়ারি মাসে লিখে দেখাতে হয়েছে যে, জুডিশিয়ার কিভাবে ওয়েপেনাইজ করা হয়েছে।

 

আলী রীয়াজ বলেন, এই যে আপনি বলছেন যে, সবই আপনারা বলতে পারতেন। আপনি যে যুক্তিটা দিয়েছেন এটা ভয়াবহ যুক্তি। একটা ফ্যাসিজমের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনার যুক্তিটা খুব খুব ভয়াবহ যুক্তি। আপনি ডিফাইন করতে গিয়ে যা করছেন সেটা খুব খারাপ হচ্ছে। কারণ কি জানেন? আপনি আমাকে বলুন, বাংলাদেশে যখন নির্বাচন হয়েছে ২০১৪ সাল, ১৮ সাল ও ২৪ সাল। বলুন তো, কয়টা সংবাদপত্র বলতে পেরেছে যে, এইটা কমপ্লিটলি একটা ইলেজিটিমেট গভমেন্ট। আমাকে একটা একটা উদাহরণ দেন।

 

মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমানের সাথে বছর তিনেক আগে গণমাধ্যমের উপর স্টাডি করে দেখিয়েছি, কিভাবে স্বার্থের কারণে সংশ্লিষ্ট হয়ে সংবাদপত্র, গণমাধ্যমগুলো কি ভূমিকা পালন করছে না। স্যারের দুইটা কলাম লেখাকে যদি আপনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে বিবেচনা করেন আমি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হিসেবে তা বিবেচনা করতেছি না। খালেদ মহিউদ্দিন আবারো একপর্যায়ে বলেন, আমাদের প্রশ্ন স্যার আপনি পরিস্থিতির পরিবর্তনটা দেখেন কিনা?

 

জবাবে ড. আলী রীয়াজ বলেন, হ্যাঁ পরিবর্তন দেখতে পাই। তার অর্থ এই নয় যে, পরিবর্তন ১৮০° হয়ে গেছে এবং সমস্ত রকম স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত আমি কিন্তু তা বলছি না। আপনি বলুন যে, গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকাগুলো কি তখন ছিল না? ছিল। তো তাইতো তখন কতটা বলতে পেরেছে সেটা আপনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থার উদ্যোগে কোন পত্রিকা-টেলিভিশন দখলের ঘটনা ঘটে নাই? আপনি কি তখন লিখতে পেরেছেন? আপনি পেরেছেন কিনা আমি জানিনা। আপনার বলতে বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যম লিখতে পেরেছি?


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বসে নেই: পিনাকী ভট্টাচার্য
আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়
জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি
নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা
আরও

আরও পড়ুন

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বসে নেই: পিনাকী ভট্টাচার্য

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বসে নেই: পিনাকী ভট্টাচার্য

৪১ বছর ইমামতি করা ইমামকে রাজকীয় বিদায়

৪১ বছর ইমামতি করা ইমামকে রাজকীয় বিদায়

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিদেশি কর্মী, ভিসা নিয়ে বিতর্ক

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিদেশি কর্মী, ভিসা নিয়ে বিতর্ক

আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

মাদারীপুরের মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

মাদারীপুরের মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিবে: মিজানুর রহমান আজহারী

বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিবে: মিজানুর রহমান আজহারী

টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে নেপাল গেল সৈয়দপুরের দল

টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে নেপাল গেল সৈয়দপুরের দল

আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়

আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়

পর্তুগালে জাসাসের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

পর্তুগালে জাসাসের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

আজারবাইজানের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করলেন রুশ বিমান প্রধান

আজারবাইজানের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করলেন রুশ বিমান প্রধান

প্রকাশ্যে এলো হানি-বাদশার দ্বন্দ্ব, গুরুতর অভিযোগ হানির

প্রকাশ্যে এলো হানি-বাদশার দ্বন্দ্ব, গুরুতর অভিযোগ হানির

বন্ধ হয়ে গেলো গাজার শেষ হাসপাতালটিও

বন্ধ হয়ে গেলো গাজার শেষ হাসপাতালটিও

মনমোহন সিংহ,ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া এক সাহসী ও দৃঢ় সংকল্পের নেতা

মনমোহন সিংহ,ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া এক সাহসী ও দৃঢ় সংকল্পের নেতা

জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি

জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি

নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা

নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা

সচিবালয়ের কাগজ ভেবে দুটি ট্রাক আটকালো জনতা

সচিবালয়ের কাগজ ভেবে দুটি ট্রাক আটকালো জনতা

মাত্র সাত মাসেই হাফেজ হলেন ১০ বছরের আব্দুল্লাহ

মাত্র সাত মাসেই হাফেজ হলেন ১০ বছরের আব্দুল্লাহ

সিরিয়ায় আসাদের পতন, ঘরে ফিরছে ৩০ হাজার শরণার্থী

সিরিয়ায় আসাদের পতন, ঘরে ফিরছে ৩০ হাজার শরণার্থী

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত

ভুল তথ্যে চায়ের দোকানে ফায়ার সার্ভিস, অথচ পানের বরজ পুড়ে ছাই

ভুল তথ্যে চায়ের দোকানে ফায়ার সার্ভিস, অথচ পানের বরজ পুড়ে ছাই