প্রধান বিচারপতির নজরে আনলেন ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম
২৪ মে ২০২৩, ১১:৩৬ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের দেয়া বক্তব্যের বিষয়টি প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিতে এনেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগের ডায়াসে দাঁড়ান তিনি। এসময় ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলাম গত রোববার দেয়া ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যটি পড়ে শোনান আদালতকে। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনসহ সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্য তুলে ধরে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘তিনি (ব্যারিস্টার তাপস) বলেছেন, মনটা চায় আবার ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসি। যেখানে মুগুর দেয়ার সেটাও জানি। একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম। কেওয়াই মশিউজ্জামান (বারের গত নির্বাচনের সাব কমিটির প্রধান)কে আমরা মনে করতাম, ওরে বাবা, কী জানি ফেরেস্তা আসছে! সবচেয়ে বড় চোর হলো মশিউজ্জামান! যে সকল সুশীলরা আমাদের বুদ্ধি দিতে যাবেন, সেই সকল সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেব...!’
একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামকে বলেন, ঠিক আছে। আমরা পত্রিকার প্রতিবেদনটা পড়ি, দেখি।
এসময় আদালত কক্ষে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রূহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, শাহ আহমেদ বাদল, সৈয়দ মামুন মাহবুব, আবেদ রাজা, মোহাম্মদ আলী, মো: আক্তারুজ্জামানসহ শতাাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আদালত থেকে বের হয়ে ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
প্রসঙ্গত: গত ২১ মে সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটরিয়ামে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্য সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সেখানে তিনি বলেন, একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম। মনটা চায় আবার ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসি। যেখানে মুগুর দেয়ার সেটাও জানি। মশিউজ্জামান (বারের গত নির্বাচনের সাব কমিটির প্রধান) কে আমরা মনে করতাম, ওরে বাবা, কী জানি ফেরেস্তা আসছে! সবচেয়ে বড় চোর হলো মশিউজ্জামান। যে সকল সুশীলরা আমাদের বুদ্ধি দিতে যাবেন, সেই সকল সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেব।
ব্যারিস্টার তাপস তার বক্তব্যে আরও বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ গঠনের আগেও অনেক বড় বড় আইনজীবী নেতা ছিলেন। কিন্তু যখন এই সংগঠন গঠন করা হয় তখন; কিন্তু এইসব বিজ্ঞ, খ্যাতনামা, প্রাজ্ঞ, বড় বড় নেতাদের বাদ দিয়ে আমাদের মতো ছোট আইনজীবীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ গঠন করা হয়। সুতরাং এগুলো ভুললে চলবে না।
সবাই খালি ইতিহাস ভুলে যায়। ইতিহাস ভুললে চলবে না। ইতিহাসের নির্মম পরিহাস হলো ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। কিন্তু ইতিহাস থেকে যারাই শিক্ষা গ্রহণ করে তারাই সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, নেয়, নিয়ে চলে। ওরা ৯ বছর চুরি করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। আমাদের মাঝে বিভেদ, অনৈক্য, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চুরির মাধ্যমে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারা দাম্ভিকতা করত। আমরা এতটা নিচু চিন্তা করতে পারিনি। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয় তারা। এই নির্বাচনের আগের নির্বাচনে আমাদের সেই ভুল ভেঙেছে। আমরা হাতেনাতে ধরেছি তাদের চুরি। হাতেনাতে চুরি ধরাতেই তারা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, মশিউজ্জামানকে আমরা মনে করতাম, ওরে বাবা, কি জানি ফেরেস্তা আসছে। সবচেয়ে বড় চোর হলো মশিউজ্জামান। একটা ভ-। একটা রাজাকারের দালাল। এই মশিউজ্জামানকে আমরা মনে করতাম কী বিশাল এক ফেরেশতাতুল্য। উনি যা বলবেন তাই হবে। আমাদের ন্যায্য দাবি ছিল। আইনগত দাবি ছিল। আমাদের সম্পাদক প্রার্থী আব্দুন নুর দুলাল তিনি হাতেনাতে তাদের চুরি ধরেছেন। ৬শ’ ব্যালট পেপার গায়েব। ৩১শ’ ভোট পড়েছে। তারা বলে ২৬শ’ ভোট পড়েছে। ৫শ’ ভোট গায়েব। আমরা যখন এগুলো তুলে ধরেছি, কঠোর হয়েছি, সোচ্চার হয়েছি, তখন তাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে। আমরা বলেছি, সবার সামনে ব্যালট পেপার এনে গণনা করো। যা ফলাফল হবে আমরা তা মেনে নেবো। সে সময় আমাদের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নুর দুলাল সে অধিকার পাননি। তারা ভোট গণনা বন্ধ করে দিয়ে ৪১ দিনের একটি নাটক সাজালো। প্রতিপক্ষ সম্পাদক প্রার্থীর চোখের ইশারায় ভোট গণনা না করে মশিউজ্জামান চলে গেলেন। তাপস বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের কার্যক্রম সম্পন্ন না করে কোনোভাবেই যেতে পারে না। কিন্তু তিনি তাই করেছেন। যোগসাজশে তারা এ কার্যক্রম করেছেন। এখন তারা বড় বড় কথা বলেন। এবারের নির্বাচনে তারা যে ন্যক্কারজনক কাজ করেছেন, একজন সভাপতি প্রার্থী যেভাবে ব্যালট ছিনতাইয়ে লিপ্ত হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে কোনো সভাপতি প্রার্থীকে তাও আবার মাথায় টুপি দিয়ে, কত রকম ভ-ামি। মাথায় টুপি দিয়ে ব্যালট ছিনতাই করে। ভ-। ব্যালট চোর। ওরা যে দল করে সেই দল গণতন্ত্র চোর, সংবিধান চোর। ভোট চোর। ৯ বছর চোরেরা লুণ্ঠন করেছে। আমরা আর তা হতে দেব না। এ চোরদের স্থান আর সুপ্রিম কোর্টে হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের মাঝেই আবার কেউ কেউ সুশীল হয়ে যায়। নির্দেশনা দিয়ে রাজনীতি হয় না। ক্যামেরা আছে, অনেক কিছু বলা যাবে না। তা নাহলে একটা গল্প শোনাতাম। যাইহোক, এ সুশীল আমাদের দরকার নেই। আমাদের সংগঠনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কেউ যদি সুশীল হতে চায়, তাহলে তাকে সুশীল পর্যায়ে আমরা পৌঁছে দেব। আমার দরকার ত্যাগী, পরীক্ষিত, আদর্শবান নেতাকর্মী। আমার সুশীল দরকার নেই। আমাকে শিক্ষা দেয়ার দরকার নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শিক্ষা দেয়ার দরকার নেই। আমরা যথেষ্ট শিক্ষা গ্রহণ করে এসেছি। সেই পাকিস্তান আমল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছি বাঙালি জাতিকে।
আমাদের শিক্ষা দেয়ার দরকার নেই। কে শিক্ষা দিবে আমাদেরকে? সুতরাং কেউ যদি সুশীল হয় আমরা মনে করব আপনারা ওই পক্ষ। আপানারা আমাদের পক্ষের না।
তাপস বলেন, আমি নগর ভবন থেকে শুনি যে আমার নেতাকর্মীদের গায়ে হাত দেয়া হয়। মনটা চায় ইস্তফা দিয়ে আবার ফিরে আসি। একজন চীফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম। সুতরাং এগুলো শুনলে খুব কষ্ট লাগে। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতাকর্মীরা আহত হবে, তাদের গায়ে হাত দেবে, এটা কোনোভাবে সহ্য করা যাবে না। মহিলা আইনজীবীদের অপদস্ত করবে, আর আমরা আইনজীবী হিসেবে এখানে বসে থাকব। এটা হয় না। চোরদের গ্রেফতার করে হাজতে ঢোকাতে হবে। এখানে আইনমন্ত্রী আছেন। আমি তার কাছে দাবি করব, অচিরেই এইসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হোক। আর না হলে তাদের এ বিচারাঙ্গনে যদি পাওয়া যায় সমুচিত জবাব দেব। আমরা লিখতেও জানি। এজলাসে বলতেও জানি। আর যেখানে যা মুগুর দরকার, সেটাও জানি। আর যেসকল সুশীলরা আমাদের বুদ্ধি দিতে যাবেন, সেই সকল সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেব।
তাপস আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যখন যুদ্ধে ছিলাম তখন আমাদের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। আমরা যখন উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যাচ্ছি, পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে চাইলাম, আমাদের কালিমা দিয়ে অর্থ দেবে না বলল, অপবাদ দিলো যে- পারলে করো দেখি। তোমরা তো গরিব। তোমাদের তো অর্থ নেই। শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় বানিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। বীর বাঙালি আমরা কারও কাছে মাথানত করি না। এখন ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের আবার হুঙ্কার দেয়। তারা ভুলে গেছে জননেত্রী শেখ হাসিনা কারও হুঙ্কারে চলে না। হুমকি-ধমকিতে, কোনো স্যাংশন, কোনো নিষেধাজ্ঞায় আমরা পিছপা হবো, আমাদের দাবায়া রাখতে পারবাÑ এই ধারণা অমূলক। একদমই কল্পনাপ্রসূত। কোনো নিষেধাজ্ঞা, কোনো স্যাংশন কোনো কিছুই বাঙালি জাতির এই অগ্রযাত্রা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অগ্রযাত্রাকে আর কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দেশসেরা ব্র্যান্ডগুলোকে পুরস্কৃত করলো বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম
হাড়িদিয়া যুব সমাজ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় শরিফ একাদশ চ্যাম্পিয়ন
কালীগঞ্জে আড়ম্বরপূর্ণ জুবিলী উপলক্ষে দুইদিন ব্যাপী উৎসব
বেগমগঞ্জে জুমার নামাজ শেষে ফেরার পথে বিএনপি কর্মিকে গুলি ও জবাই করে হত্যা
নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই দেশে পরিপূর্ণ সংস্কার হবে: আমিনুল হক
সাংবাদিক বশিরসহ জনবাণী’র সম্পাদকের উপর হামলার ঘটনায় ডিআরইউ-র্যাকের উদ্বেগ
রামগতিতে ভিক্ষুকের জমি রেজিস্ট্রি না দেয়ায় লাশ দাফনে বাঁধা
র্যাকের সভাপতি আলাউদ্দিন আরিফ, সাধারণ সম্পাদক তাবারুল
রাষ্ট্রদূত হলেন সেনাবাহিনীর ২ সিনিয়র কর্মকর্তা
ব্রাহ্মণপাড়ায় আলোচিত শফি উল্লাহ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১
ফরিদপুরের ধলার মোড়ে ৮ম ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত
খালেদ মুহিউদ্দীনকে কী পাঠ পড়ালেন ড. আলী রীয়াজ
জানুয়ারিতে আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
আটঘরিয়ায় বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলোচনা সভা ও মিছিল
আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
মহাবিশ্বের সুদূর পারে মিলল অতিকায় মহাসাগরের সন্ধান
‘সচিবালয়ে আগুন প্রমাণ করে দুস্কৃতিকারীরা সক্রিয়, সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে’
নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পণ্যবাহী ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
মাহমুদুর রহমান’কে হত্যাচেষ্টা মামলার অগ্রগতি শুন্য
সচিবালয়ে আগুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত: ইউট্যাব