যুক্তরাষ্ট্র ও জি৭’র আধিপত্য এখন ইতিহাস

Daily Inqilab ফাইনান্সিয়াল টাইম্স‘

২৫ মে ২০২৩, ১১:৫১ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১১:৫১ পিএম

বিদায় জি ৭, স্বাগত জি ২০› এটিই ছিল ওয়াশিংটনে ২০০৮ সালে গ্রæপ অফ ২০-এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়ে দ্য ইকোনমিস্টের একটি নিবন্ধের শিরোনাম। নিবন্ধে যুক্তি দেয়া হয়েছিল যে, এটি বিশ^ শৃঙ্খলার একটি সিদ্ধান্তম‚লক পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে। আজকের বিশে^ সেই সমষ্টিক বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থার আশা, যা ২০০৯ সালের এপ্রিলে জি ২০-এর লন্ডন শীর্ষ সম্মেলনে শিখরে পৌঁছেছিল, তাও বাষ্পীভ‚ত হয়ে গেছে। 
ইউক্রেন যুদ্ধ, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বিশ্ব অর্থনীতি, আবহাওয়া পরিবর্তন, জ¦ালানীশক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তি সহ পরিবেশ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, ব্যবসা ও খাদ্য নিরাপত্তা, জনশক্তি, শিক্ষা, ডিজিটাল ব্যবস্থা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি; লিঙ্গ বৈষম্য, মানবাধিকার, শরণার্থী, অভিবাসন, গণতন্ত্র, সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে চীন, আফগানিস্তান ও ইরানের সাথে সম্পর্ক সহ একটি বিস্তৃত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পশ্চিমা আধিপত্য ধরে রাখা সম্ভবপর বলে আর মনে হচ্ছে না। ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জি৭’র ক্রয় ক্ষমতা ৪৪ শতাংশ  থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে সমস্ত উচ্চ-আয়ের দেশগুলির মধ্যে তা ৫৭ থেকে ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে। এদিকে বিশ^ বাজারে চীনের অংশীদারিত্ব ৭ থেকে ১৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটি এখন অর্থনৈতিক পরাশক্তি। এর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (ব্রিক্স) মাধ্যমে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলিতে একটি বিশাল বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতা হয়ে উঠেছে। কিছু উদীয়মান এবং উন্নয়নশীল দেশের কাছে বর্তমানে চীন জি৭’র চেয়েও গুরুত্বপ‚র্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। জাপানে জি৭’র বৈঠকে ভারত, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে ১৯টি দেশ দৃশ্যত ব্রিক্সে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে, যার মধ্যে ইতিমধ্যে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ব্রিক্স এখন একটি প্রাসঙ্গিক বিশ্বজনীন গোষ্ঠি হয়ে ওঠার পথে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। স্পষ্টতই, যা এর সদস্যদের একাট্টা করেছে, তা হল যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মর্জির উপর নির্ভরশীল না হওয়ার ইচ্ছা, যারা গত দুই শতাব্দী ধরে বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছে। সর্বোপরি, বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ নিয়ে জি৭ কতদিন তা চালিয়ে যেতে পারে (বা উচিত)?
কখনও কখনও বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে হয়। জি৭ সদস্যদের রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র রক্ষা করা ও তার সীমান্ত রক্ষা করা, এই মুহুর্তে যেমন ইউক্রেনে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তবে ইউক্রেনের টিকে থাকাটা পশ্চিমকে একাই নির্ধারণ করতে হবে। অর্থনীতির দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাচ্ছে এটাও একটা ভালো ব্যাপার যে, ‘ডিকাপলিং’ বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার একটি ক্ষতিকর বাজে কথাটি এখন ‘ঝুঁকিমুক্ত করা’তে পরিবর্তিত হয়েছে। 
তবে, এখন এটি করা অনেকের কল্পনার চেয়েও অনেক কঠিন হবে। একটি আরও চিন্তার বিষয় হল, পরিবর্তত পরিস্থিতিতে কিভাবে বিশ্ব অর্থনীতি পরিচালনা করা হবে। ক্রমবর্ধমান বিভক্ত বিশ্বে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক কি জি৭ শক্তির ঘাঁটি হতে চলেছে? যদি তাই হয়, তাহলে কীভাবে এবং কখন তারা আজকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় নতুন প্রতিষ্ঠানগুলি পেতে চলেছে? চীন এবং তার মিত্ররা যে সংস্থাগুলি তৈরি করছে, তাদের সাথে তারা কীভাবে সমন্বয় করবে? কোটা এবং অংশীদারিত্বের সামঞ্জস্য করতে বাস্তবতা স্বীকার করা এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তির বিশাল পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেওয়া কি ভাল হবে না?
চীনকে দমানো যাবে না। তাহলে ঋণ আলোচনায় প‚র্ণ অংশগ্রহণের বিনিময়ে দেশটিকে কথা বলার ব্যাপক সুযোগ দেওয়া হবে না কেন? একইভাবে, কেন চীনকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ঘুম ভাঙানো হবে না যে, এটি চীনকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিবেচনা করার আশা আর করতে পারে না? এবং অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, এই সমস্ত কিছুর বাইরে, ‘ঝুঁকিমুক্ত’ করার যে কোনও আলোচনা বিশে^র জন্য দুটি বৃহত্তম হুমকি তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে না। হ্যাঁ, জি৭ অবশ্যই তার ম‚ল্যবোধ এবং তার স্বার্থ রক্ষা করবে। কিন্তু এটি বিশ্বকে এচ্ছত্রভাবে শাসন করতে পারে না, যদিও বিশ্বের ভাগ্য এর সদস্যদের ওপরও বর্তাবে। তাই সহযোগিতার পথ খুঁজে বের করতে হবে। 

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

১৫ বছর পর বন্ধ হলো বেইজিং এলজিবিটি সেন্টার

১৫ বছর পর বন্ধ হলো বেইজিং এলজিবিটি সেন্টার

সাগরে চীনকে প্রতিরোধে ফিলিপিন্স কৌশলের মূল খেলোয়াড় ভিয়েতনাম

সাগরে চীনকে প্রতিরোধে ফিলিপিন্স কৌশলের মূল খেলোয়াড় ভিয়েতনাম

পঙ্গপালের আক্রমণে বিশাল ক্ষতিতে আফগান কৃষকরা

পঙ্গপালের আক্রমণে বিশাল ক্ষতিতে আফগান কৃষকরা

‘পাকিস্তানে আজ নৈরাজ্য, বেকারত্ব সাধারণ ব্যাপার’

‘পাকিস্তানে আজ নৈরাজ্য, বেকারত্ব সাধারণ ব্যাপার’

চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.২৯ শতাংশ

চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.২৯ শতাংশ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

কানাডায় ছুরিকাঘাতে শিখ নারী খুন

কানাডায় ছুরিকাঘাতে শিখ নারী খুন

মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ

মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ

সংঘাত নয় শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই : প্রধানমন্ত্রী

সংঘাত নয় শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই : প্রধানমন্ত্রী

মার্কিন ভিসা নীতিতে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে

মার্কিন ভিসা নীতিতে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে

কিসের জাদুতে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে

কিসের জাদুতে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে

মার্কিন ভিসা নীতি বিএনপির ওপরই বড় চাপ সৃষ্টি করেছে

মার্কিন ভিসা নীতি বিএনপির ওপরই বড় চাপ সৃষ্টি করেছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘ বিশেষ প্রতিবেদক শ্যুটারের উদ্বেগ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘ বিশেষ প্রতিবেদক শ্যুটারের উদ্বেগ

বাজেটের পর জ্বালানির দাম সমন্বয়

বাজেটের পর জ্বালানির দাম সমন্বয়

টিভিতে দেখুন

টিভিতে দেখুন

মেয়র তাপসকে গ্রেফতার দাবি

মেয়র তাপসকে গ্রেফতার দাবি

বাফুফেকে পদত্যাগপত্র পাঠালেন ছোটন

বাফুফেকে পদত্যাগপত্র পাঠালেন ছোটন

নেইমারহীন ব্রাজিলে নতুনের ছড়াছড়ি

নেইমারহীন ব্রাজিলে নতুনের ছড়াছড়ি

লেস্টারের অবনমন টিকে রইল এভারটন

লেস্টারের অবনমন টিকে রইল এভারটন

আজ ট্রফির জন্য লড়বে মোহামেডান-আবাহনী

আজ ট্রফির জন্য লড়বে মোহামেডান-আবাহনী