মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র কাবা অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ
২৬ মে ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

আল্লাহর পবিত্র ঘর খানায় কাবা জিয়ারতের মৌসুম সন্নিকটে। সারা বছর ধরে মুসলমানগণ এ মৌসুমের অপেক্ষা করে হজ পালনের নিমিত্তে। প্রত্যেক সমর্থবান মুসলমানের উপর হজ পালনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফরজ করছেন। আল্লাহতায়ালা কাবাঘরের স্থান নির্ধারণ করেছেন পাথুরে পাহাড় ও স্বল্প পানিযুক্ত একটি কর্ম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় তাদের জাগরণের ও দৃঢ়তার মাধ্যম হিসেবে। আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন বনি আদম যেন এ ঘরমুখি হয় এবং তাদের মনকে এদিকে কেন্দ্রীভূত করে ও এ ঘরের চারদিকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই- এ কথার স্বাক্ষ্য দেয়। সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য কাবা ঘর অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। এ ঘরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। গতকাল মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে এসব কথা বলেন।
তিনি পবিত্র কাবা ঘরের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তায়ালা চাইলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ও সুন্দরতম স্থানে কাবাকে প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। তিনি এ ঘরের পাথরগুলোকে বর্ণিল রং এ সুসজ্জিত করতে পারতেন। চাইলে তিনি নিজে আসমানী সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ করে কাবাকে জাকজমকপূর্ণ হিসেবে দৃশ্যমান করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ তার বান্দাদের নানা বিপদ-আপদের মধ্যে পরীক্ষা করেন। তিনি চান তারা নানা অভাব-অনটনের মধ্যেও তার ইবাদত করুক। তাই তিনি তাদেরকে দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত করেন। এসব কিছুই দেয়া হয়েছে তাদের মন থেকে সব ধরনের অহংকার ও গরিমা দূর করার এবং তাদেরকে বিনয়ী করে তোলার জন্য। তার দয়া ও ক্ষমা সহজতর করার উপায় হিসেবে। ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র এ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে এর মাধ্যমে মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এই ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা) অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময় (সূরা আল ইমরানের: ৯৬)। এ ঘরটিকে আমাদের জন্য ‘নিয়ামত’ বলছি এ জন্য যে, এ ঘরের সাথে স্মৃতিতে জড়িত প্রথম মানব এবং নবী হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত দুই লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বরের স্মৃতি এবং কিছু জান্নাতি বস্তু এখানে আল্লাহ নিদর্শন হিসেবে রেখেছেন। এ ছাড়া কিছু স্থানকে খাস করে দোয়া কবুলের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ঘর বরাবর ওপরে অবস্থিত বাইতুল মামুর। সেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফ করেন। যারা একবার তাওয়াফ করেন, তারা কিয়ামত পর্যন্ত দ্বিতীয়বার সুযোগ পাবেন না; কিন্তু মানুষ ইচ্ছা করলে বার বার কাবা তাওয়াফ করতে পারবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা প্রতিদিন বায়তুল্লাহর ওপর ১২০টি রহমত নাজিল করেন, এর মধ্যে ৬০টি রহমত শুধু তাওয়াফকারীদের জন্য, ৪০টি মসজিদুল হারামের মধ্যে নামাজ আদায়কারীদের জন্য এবং অবশিষ্ট ২০টি ওইসব (সৌভাগ্যবান) লোকের জন্য যারা (আবেগ ও ভালোবাসায়) বায়তুল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকে (বায়হাকি)। তাই আসুন আমরা যারা সমর্থবান রয়েছি তারা সুযোগ পেলেই আল্লাহ মননীত এ পবিত্র স্থানে উপস্থিত হয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করি এবং আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হই।
খতিব বলেন, বিশ্বের সমগ্র মুসলিম জাতির পিতা যার খান্দান থেকে সর্বশ্রেষ্ট মানব রাসূলে কারিম (সা.) এর আগমন তিনি হলেন হযরত ইব্রাহীম (আ.)। পবিত্র হজ ও কোরবানীর পরতে পরতে তাঁর স্মৃতি জড়িত। তিনি ছিলেন মুসলিম জাহানের নেতাগণের মধ্যে অন্যতম। আজ সারাবিশ্ব জুড়ে বিভিষিকা, ন্যায় নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের অভাবে সাধারণ জনগণের জীবন ওষ্ঠাগত। নেতাদের পাপের ফলে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত আজাব ও গজবে জনসাধারণ আষ্ঠে পিষ্ঠে যাচ্ছে। আমাদের উচিৎ নেতা নির্বাচনের সময় অবশ্যই লক্ষ্য করা, আমার পছন্দের নেতার মাঝে আল্লাহভীরুতা আছে কিনা, তিনি ধৈর্যশীল কিনা, হিংসা অহংকার মুক্ত কিনা, মোখলেস ও আবেদ কিনা, অন্যের কষ্টে তার হৃদয় কাঁদে কিনা, সহানুভূতিশীল কিনা। সর্বপরি সফল মুসলিম নেতাগণের বৈশিষ্ট তার মাঝে আছে কিনা। তাহলেই পুনরায় সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহল আমিন গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহর সাথে কোনো শরীক করা যাবে না। নফসে আম্বারার গোলামী করলে বদনসিব হবে। প্রকৃতির পুঁজা করা যাবে না। রাসূল (সা.) আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে। রাসূল (সা,) নি জের জন্য কিছু করেননি। দুনিয়ার সমস্ত ধনসম্পাদের লোভ দিখিয়েও দ্বীনের দাওয়াত থেকে তাঁকে বিরত রাখা যায়নি। আল্লাহর দেয়া দ্বীনকে আকড়ে ধরতে হবে। কোনো সঙ্কটে পড়লে সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছেই সমাধানের আর্জি পেশ করতে হবে। খতিব বলেন , ডেঙ্গু মশার প্রার্দুভাব দেখা দিচ্ছে। ডেঙ্গুর আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে। সচেনতার বৃদ্ধি করতে হবে। কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেল তাকে হাসপাতালে নেয়াসহ সার্বিক খোঁজ খবর নিতে হবে। খতিব বলেন, মানব জাতি আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি। সূর্যের মাধ্যমে পৃথিবীকে আলোক সজ্জা কওে দিয়েছেন। ধনীর সম্পদে গরিবের হক রয়েছে। এ জন্য আল্লাহ যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন। রাসূল (সা.) এর আদর্শ যারা অনুসরণ করবে তারাই মুত্তাকি। রাসূলের আদর্শকে যারা ভালোবাসবে আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামে হাদিস অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। পবিত্র কোরআনুল কারীমের পরেই হাদিসের স্থান । ইসলামী শরীয়তে আহকাম সাব্যস্ততায় দলিল হিসেবে হাদিসের স্থান দ্বিতীয়। মুসলমানের জন্য আবশ্যকীয় ফরজ বিষয় নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ অন্যান্য বিষয়ের বিধানাবলী ও বহু মাসয়ালা মাসায়েলের সমাধান হাদিসের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়েছে । এজন্যই ফকিহগণ বলেছেন, হাদিস তথা সুন্নাহ ব্যতিত ইসলাম অসম্পূর্ণ । কারণ পবিত্র কোরআন ও হাদিস তথা সুন্নাহের সমন্বিত বিধানই ইসলামী শরীয়ত।
খতিব বলেন, রাসূল (সা.) এর কথা, কার্য্য, বাণী ও মৌন সমর্থনকে ইসলামী পরিভাষায় হাদিস বলে। আল্লাহ তায়ালা কোরআন এবং হাদিস তথা সুন্নাহ উভয়ের উপর ঈমান আনা, বিশ্বাস স্থাপন ও আমল করার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন । অমান্যকারীকে পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী বলে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) এর অনুসরণ কর। (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত নং ৩৩)। অন্য আয়াতে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সা.) কোন বিষয়ের ফয়সালা করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার নেই । আর যে ব্যক্তি আল্লাহর (কোরআন) ও রাসূলের (হাদিস তথা সুন্নাহ) এর অমান্য করবে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। (সূরা আহযাব, আয়াত নং ৩৬)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, হে রাসূল (সা.) আপনার প্রভূর শপথ। যে পর্যন্ত তারা পরস্পরে বিরোধের বিষয়ে আপনাকে বিচারক হিসাবে মেনে না নিবে এবং আপনার ফয়সালা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করবে ততক্ষণে তারা মুমিন হতে পারবে না ।(সূরা নিসা, আয়াত নং৬৫)। উল্লেখ্য হাদিস না মানলে পবিত্র কোরআনকেও মান্য করা হয় না । আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর (হাদিসের )অনুসরণ করবে সে প্রকৃত অর্থে আল্লাহর অনুসরণ করবে। ( সূরা নিসা, আয়াত নং ৮০)। অতএব উল্লেখিত আয়াত ছাড়াও কোরআনের আরও বহু আয়ত দ্বারা প্রমাণিত হাদিস ঈমান ও ইসলামী শরীয়তের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাদিসকে কেউ অস্বীকার করলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে । কাজেই একজন মুসলমানের হাদিস অস্বীকার করার কোনই সুযোগ নেই। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ-অসাম্প্রদায়িকতার ওপর নাটক মঞ্চস্থ

বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ফ্রিজ উৎপাদকের দেশে রূপান্তরিত হলো বাংলাদেশ

রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে

বাখমুতে কিয়েভের হামলার চেষ্টা ব্যর্থ, ৭৮৫ সেনা নিহত

কুমিল্লার হোমনায় এক দড়িতে মা ও শিশু পুত্রের ঝুলন্ত লাশ

আফ্রিকান দেশগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ রাশিয়া: ল্যাভরভ

আফ্রিকান দেশগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ রাশিয়া: ল্যাভরভ

কাখোভকা বাঁধে হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত চান এরদোগান

‘আপনারা জানতেন’, বাঁধে হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর চায় রাশিয়া

সংলাপের কথা বলে সরকার জনদৃষ্টি ভিন্নদিকে ডাইভার্ট করতে চায় : মির্জা ফখরুল

টাঙ্গাইলে বিএনপির অবস্থান ধর্মঘট

এবার আইনজীবী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হলেন ইমরান খান

দুঃসহ তাপ প্রবাহের পরে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলে স্বস্তির বৃষ্টি

রাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নেয়া বিএনপির ১৬ নেতা বহিষ্কার

স্বস্তিকা, এসএস চিহ্ন নিষিদ্ধ করছে অস্ট্রেলিয়া

রাজশাহীতে বিদ্যুত অফিসের সামনে বিএনপির অবস্থান

সউদী-ইরানের নতুন করে বন্ধুত্ব কতটা শক্তিশালী হবে

বরগুনায় পেটে জোড়া লাগান জমজ শিশুর জন্ম, উন্নত চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেলে

নিপ্রোর পানিতে ভেসে যাওয়া মাইন বিপদের কারণ

লোহাগাড়ায় মাদকাসক্ত যুবকের আত্মহত্যা