গুমের ঘটনা তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের আহ্বান
২৭ মে ২০২৩, ১১:০৮ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
‘আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। অন্যদের মতো বাবার হাত ধরে আমিও হাঁটতে চাই। আমি বাবার ফিরে আসার পথ চেয়ে অপেক্ষায় আছি...’। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় আর কিছু বলতে পারেনি শিশু আরিয়ান। তার কথা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ। ক্লাবের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে বাবার সন্ধান চাইছে নিখোঁজ খালেদ হাসান সোহেলের ছোট্ট ছেলে।
একইভাবে বাবাকে ফেরত চেয়ে দশ বছর ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করে ১২ বছরের আদিবা ইসলাম হৃদি। তার যখন দুই বছর বয়স তখন তার বাবাকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারপর থেকে কোনো খোঁজ মেলেনি। প্রতিনিয়ত বাবাকে খুঁজে ফেরে সে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন গুম হওয়া বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের মেয়ে আদিবা ইসলাম হৃদি। বিশ্ব গুম বিরোধী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে মায়ের ডাক নামে একটি সংগঠন এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে অংশ নেন হৃদির মতো অনেক শিশু-কিশোর। সন্তানের খোঁজ চেয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছে অনেক মা-ও। সবার একটাই চাওয়া- রাষ্ট্র যেন অবিলম্বে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান দেয়। মায়ের ডাকের এ আয়োজনে অংশ নেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পাটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার বিগত এক দশক ধরে বিরোধী মতের মানুষের ওপর গুম, খুন, হত্যা ও নৈরাজ্য চালাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষকে গুম করেছে। আজও তাদের খোঁজ নেই। আয়না ঘরের নামে নির্যাতন সেল তৈরি করেছে। এ সমস্ত অবিচার বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে হবে। দাবি করেন গুম নিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনেরও। বলেন, এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
আলোকচিত্রী শহীদুল আলম বলেন, আমাকেও গুম করা হয়েছিল। রাতের অন্ধকারে আমাকে জোরপূর্বক তুলে নেয়া হয়েছিল। হাত, মুখ, চোখ বেঁধে ফেলা হয়। আমার পরিবার থানায় অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগও নেয়া হয়নি। কিন্তু সবাই আওয়াজ তোলায় বেশিক্ষণ রাখতে পারেনি। আমার সামর্থ রয়েছে আমি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারি কিন্তু সবাই পারে না। বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ এভাবে গুম হয় তাদের কথা বলার কেউ থাকে না।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার এখন বেশ বিপদে আছে। দেশের মানুষের সমর্থন নেই। ১৪ বছর যাবৎ গুম, খুন, গ্রেপ্তারসহ বিরোধী মতকে নানাভাবে দমন করছে। সারা দুনিয়ায় তাদের বদনাম হয়ে গেছে তারা একটি ফ্যাসিস্ট সরকার। তারা ভোটের বাক্স চুরি করে। দিনের ভোট রাতে করে। নির্বাচন যেন না হয় তার জন্য গুম খুন হত্যা নির্যাতন করে বিরোধীদের দমন করে নির্বাচনই হতে দেয় না। এ সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার দিন আসছে। আমরা জানতে চাই আমাদের স্বজনরা কোথায়। তাদের হিসাব না দিয়ে সরকারকে নির্বাচনী বৈতরি পার হতে দেয়া হবে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পাটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, বছরের পর বছর গুম ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে দাঁড়াতে হয়। বাবা হারানো শিশুদের গণমাধ্যমের সামনে কাঁদতে হয়। একটা সভ্য মানবিক দেশে এটা হতে পারে না। আমরা আমাদের শিশুদের কান্না দেখতে চাই না। কোনো মায়ের চোখের পানি আমরা দেখতে চাই না। তাই এসব মানুষকে অবলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে।
বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বলেন, ‹যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে।›তিনি গুমের ঘটনায় জড়িত সংস্থা, কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত এবং তাদের কাজের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানান।
নূর খান বলেন, ‹রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে যে এত গুমের ঘটনা নেই, অনেকেই স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে গেছেন। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তাদের কাছ থেকে এই ধরনের বিবৃতি, গুমের ঘটনায় জড়িতদের দায়মুক্তি দেয় এবং ন্যায়বিচার হুমকির মুখে ফেলে।› তিনি জানান, প্রায় ৬০০ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৩০০ জন ফিরে এসেছেন।
গুমের ঘটনা তদন্ত ও দায়ীদের বিচারে সরকারকে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন ও মানবাধিকার কর্মীরা।
নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের ছোটবোন ও ‹মায়ের ডাক› সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, মায়ের ডাকের ভুক্তভোগী পরিবার যতগুলো মামলা করেছেন, তার কোনো তদন্ত হয়নি। কোনো ধরনের বিচার হয়নি। আমরা বাধ্য হয়ে বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেছি। জাতিসংঘে এ নিয়ে কথা হলেও গুম হওয়া কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। সাধারণ মানুষ এখন বিচার চায়। যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা গুমের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে আমরা চিনি। অবিলম্বে এসব বন্ধ করুন। নইলে জনগণ আপনাদের বিচার করবে।
নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী কি এসব বাচ্চাদের কান্না শুনতে পান না? একবার ভেবে দেখেন- যদি আপনার পরিবারের কাউকে এমনভাবে রাস্তায় দাঁড়াতে হতো, তাহলে আপনার কেমন লাগতো। আমরা জানি আপনার সেই অনুভূতি নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক একটা আইন আছে-কেউ অপরাধ করলে তাকে কতক্ষণ আটকে রাখা যায় তা আপনাকে মানতে হবে। আপনি এগুলো করে আর পার পাবেন না। মানুষ জেগেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের বাচ্চাদের কান্না আপনাদের হাজার হাজার কণ্ঠের চেয়ে শক্তিশালী। যত বাধাই আসুক আমরা থামবো না। অবিলম্বে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গাঁজা সেবনের অভিযোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থীকে শাস্তি
উইন্ডিজ সিরিজে পাকিস্তান দলে ৭ পরিবর্তন, নেই আফ্রিদি
সুইজারল্যান্ডে গ্লোবাল এসএমই সামিট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩-২৫ এপ্রিল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসিম : সিলেটে কাইয়ুম চৌধুরী
ডার্ক ওয়েবে গ্রাহকের তথ্য বিক্রির অভিযোগ : সিটি ব্যাংকের ব্যাখ্যা
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ‘বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলন-২০২৫’ অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে বন্ধুর মৃত্যু
কর্মীদের বীমা সুরক্ষা প্রদানে ঢাকা ব্যাংক ও মেটলাইফের চুক্তি স্বাক্ষর
পাঠ্যবইয়ে নাম যুক্ত হওয়ায় আমার চেয়ে পরিবার বেশি খুশি: নিগার
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায় সম্মেলন- ২০২৫ অনুষ্ঠিত
শৈত্যপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার আভাস, বাড়বে রাত-দিনের তাপমাত্রা
বগুড়ায় শিবিরের সাবেক কর্মী সাথী ও সদস্যদের মিলন মেলায় রাফিকুল ইসলাম খান
ক্যাম্পাসভিত্তিক জুলাইয়ের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখার আহ্বান প্রেস সচিবের
শিবালয়ে নিখোঁজের ৫ দিন পর পদ্মায় ভেসে উঠলো বারেক মেম্বরের লাশ
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন: যাদের উপর থাকবে নজর
এবি পার্টির কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি
হ্যানয় গ্র্যান্ড মাস্টার্স-২ দাবায় ফাহাদের হার
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা : লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ
মানিকগঞ্জে নিখোঁজ সাবেক ইউপি সদস্যের মরদেহ উদ্ধার
পাঠ্যবই সংশোধনের আহ্বান বিএনপির