মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ
৩০ মে ২০২৩, ১১:২৬ পিএম | আপডেট: ৩১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসির মতবিনিময় সভায় মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। অপারেটরদের ইন্টারনেট মেয়াদ ও প্যাকেজ পদ্ধতির সমালোচনা করে বিটিআরসিকে মান বাড়ানোর দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রমনায় বিটিআরসির কার্যালয়ে ‘মোবাইল অপারেটরসমূহের সেবা (প্যাকেজ এবং ডেটার মূল্য) সংক্রান্ত’ এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলা হয়।
সভায় সরাসরি ও অনলাইনে বেশ কয়েকজন গ্রাহক যুক্ত ছিলেন। তাঁরা সেবার মান নিয়ে অসন্তোষের কথা জানান। উপস্থিত বেশির ভাগ গ্রাহক ছিলেন টেলিটকের।
বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে দাম বেঁধে দিতে হয় না বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর মইনুল ইসলাম জাবের। তিনি মোবাইল অপারেটরগুলোর বর্তমান প্যাকেজ-পদ্ধতিরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সেবার মান বাড়ানোর দিকে বিটিআরসির নজর দেওয়া উচিত।
মতবিনিময় সভায় বিটিআরসির একটি জরিপের ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক চান, তাঁদের কেনা প্যাকেজের অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী যেকোনো প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত হোক। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে শুধু সে ক্ষেত্রে অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যুক্ত হয়, যাকে বলা হয় ‘ক্যারি ফরোয়ার্ড’। জরিপে দেখা যাচ্ছে, এই নিয়মের পরিবর্তন চান গ্রাহকেরা। দেশে মোবাইল অপারেটরগুলো এখন ৩,৭, ১৫ ও ৩০ দিন মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতে পারে। এর বাইরে ‘আনলিমিডেট’ বা নির্দিষ্ট মেয়াদহীন কিছু প্যাকেজ রয়েছে, যার জনপ্রিয়তা কম এবং এগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ কিনলে অনেক সময় দেখা যায়, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ডেটা অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেউ যদি আগের কেনা প্যাকেজটি আবার কেনেন, তাহলে অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যোগ হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকের মেয়াদ শেষের আগে প্যাকেজ কিনতে মনে থাকে না। আবার অনেক গ্রাহক ভিন্ন প্যাকেজ কেনেন। তখন আর অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যোগ হয় না।
এ বিষয়ে কী নীতি হওয়া উচিত তা বিটিআরসির জরিপে গ্রাহকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে প্রায় ৮৮ শতাংশ গ্রাহক মেয়াদকালের মধ্যে যেকোনো প্যাকেজ কিনলে, অব্যবহৃত ডেটা যোগ হওয়ার নীতি চেয়েছেন। বাকিরা মেয়াদকালের মধ্যে একই পরিমাণের ভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজ কিনলে এবং মেয়াদের মধ্যে একই প্যাকেজ কিনলে, অব্যবহৃত ডেটা যোগ হওয়ার নীতির পক্ষে। উল্লেখ্য, বিটিআরসির উপস্থাপনায় এ ক্ষেত্রে আলাদা হার উল্লেখ করা হয়।
বেশিসংখ্যক গ্রাহক ইন্টারনেট প্যাকেজের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০টির মধ্যে রাখার পক্ষে। বেশির ভাগ গ্রাহক চান, ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ হওয়া উচিত তিনটি ৭ দিন, ৩০ দিন ও নির্দিষ্ট মেয়াদহীন (আনলিমিটেড) বিটিআরসি জানিয়েছে, মোবাইল ডেটার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার একটি খসড়া পরিকল্পনা তারা করেছে। এর জন্য অনলাইনে জরিপটি করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫৪৯ গ্রাহক অংশ নেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী।
সভায় বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি জানান, বেশিসংখ্যক গ্রাহক ইন্টারনেট প্যাকেজের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০টির মধ্যে রাখার মত দিয়েছেন। বেশির ভাগ গ্রাহক চান, ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ হওয়া উচিত তিনটি- ৭ দিন, ৩০ দিন ও নির্দিষ্ট মেয়াদহীন (আনলিমিটেড)।
গ্রাহকদের কাছে প্রশ্ন ছিল, ডেটার দাম কেমন হওয়া উচিত? জবাবে প্রায় ৫৩ শতাংশ গ্রাহক বলেন, প্রতি গিগাবিট (জিবি) ইন্টারনেটের দাম যেকোনো মেয়াদের জন্য সমান হওয়া উচিত। ২৭ শতাংশ গ্রাহক বলেছেন, ভিন্ন মেয়াদের জন্য ডেটার দাম ভিন্ন হওয়া উচিত; আর বাকিরা বলেছেন, স্বল্পমেয়াদি ডেটার দাম কম হওয়া উচিত।
ডেটা প্যাকেজের সর্বনি¤œ মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে প্রায় ৪৬ শতাংশ এবং ভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণের পক্ষে প্রায় ২১ শতাংশ গ্রাহক। বাকি গ্রাহকের অর্ধেক প্রতি জিবির জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ মূল্য এবং অর্ধেক ভিন্ন মেয়াদের ডেটার জন্য একই সর্বনি¤œ ও ভিন্ন ভিন্ন সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
অপারেটরদের মধ্যে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম টেলিযোগাযোগ সেবার ওপর উচ্চ হারে কর আরোপের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ১০০ টাকার মধ্যে নানা রকম কর ও ফি হিসেবে সরকারের কোষাগারে যায় ৫৪ টাকা।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ সভায় জানান, মতবিনিময় সভায় যেসব মতামত এসেছে, তা পর্যালোচনা করা হবে।
বিটিআরসির কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. মাহবুব-উল-আলম, গ্রামীণফোনের সিনিয়র পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন