রাজস্ব আদায়ই এনবিআরের চ্যালেঞ্জ
০১ জুন ২০২৩, ১১:০৩ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা দুই মিনিটে তিনি বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শীর্ষক বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। উচ্চাভিলাষী এ বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হারের লক্ষ্য থাকছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ সরকারকে ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার বিপরীতে বেশ কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয় আইএমএফ। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এবারের বাজেটে। বিভিন্ন খাতে ও বিভিন্ন উৎস থেকে কর আদায় ও করহার বাড়ানো হয়েছে। এতে চাপে পড়বে দেশের সাধারণ মানুষ। তবে এরপরও এই লক্ষ্য অর্জন করা এনবিআরের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দিনশেষে লক্ষ্য পূরণের দায়িত্ব এনবিআরের। তবে যে লক্ষ্য পূরণ করবে তার কতটুকু সক্ষমতা আছে, সেটাও বিবেচনায় নেয়া উচিত। অর্থ মন্ত্রণালয় নিজেদের মতো একটি লক্ষ্য এনবিআরের জন্য নির্ধারণ করে দেয়। এক্ষেত্রে তাদেরকেই (অর্থ মন্ত্রণালয়) জিজ্ঞেস করা উচিত লক্ষ্যপূরণ হবে কিনা।
এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করেন, সক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিলে দিন শেষে রাজস্ব ঘাটতিই হবে, লক্ষ্যপূরণ হবে না। এবারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এনবিআর কাজ করবে কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জণ হবে না বলে ধারণা তাদের।
তবে এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণসহ অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের ভীড়ে আরেকটি চ্যালেঞ্জ উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের পরিসংখ্যান ও গবেষণা অনুবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই থেকে এপ্রিল) ৩৪ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ২৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছিলো দেশ। এবারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা আরও চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে খোদ এনবিআরের কর্মকর্তারাই মনে করেন এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশে কর জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। যা বিশ্বের প্রায় সব দেশের তুলনায় কম। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই হার বাড়াতে হবে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ।
এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, আইএমএফের শর্ত মেনে আগামী অর্থবছরে বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, যা এ বছরের লক্ষ্য থেকে ১৬ শতাংশ বেশি। কিন্তু চলতি বছরে রাজস্ব আদায়ে যদি ৩০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়, তাহলে আগামী অর্থবছরের লক্ষ্য অর্জনে এখনকার তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। এজন্য এনবিআরকে আগামী তিন বছরে অতিরিক্ত দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে।
করজাল বৃদ্ধিতে এনবিআরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির দায়িত্বশীল সূত্র। তারা জানান, কোন খাতে কত কর ছাড় আছে, কোন খাত যেতে পারে, তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কর জাল বাড়াতে বাড়িওয়ালা, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য, গাড়ির মালিক, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগকারীদের ওপর নজর বাড়িয়ে বাড়তি লক্ষ্য অর্জন করতে চায় এনবিআর। এ জন্য সিটি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করা হয়েছে।
শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপি অনুপাত দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়াতে এনবিআর একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। এতে দেখা গেছে, শুল্ক খাতে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ে শুল্ক অব্যাহতি পরিমাণ কমিয়ে আনা, শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস, বকেয়া শুল্ক আদায় কার্যক্রম জোরদার, আদালতে দ্রæত মামলা নিষ্পত্তি, নতুন শুল্ক আইন প্রণয়ন, শুল্ক আদায় প্রক্রিয়া অটোমেশন এবং কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কার্যকর করা হবে। আয়কর খাতে কর হার বাড়ানো, কর জাল স¤প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাদের অডিট কার্যক্রম শক্তিশালী করতে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) চালু, কর অঞ্চল স¤প্রসারণে কর আদায় বাড়ানো হবে। ভ্যাট খাতে আদায় বাড়াতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে ভ্যাটের আওতায় আনা, খুচরা পর্যায়ে ফাঁকি বন্ধে ইএফডি মেশিন স্থাপন, ভ্যাট অব্যাহতির পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস, ভ্যাট হারও পুনর্বিন্যাস এবং জাল বৃদ্ধিতে নতুন ৫টি ভ্যাট কমিশনারেট আগামী বছরের মধ্যে স্থাপন করা হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এনবিআরের সক্ষমতা বিবেচনায় আগামী বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী বলে মনে হয়। এ লক্ষ্যের ধারেকাছেও এনবিআর যেতে পারবে না। কারণ এখনও সংস্থাটিতে গুণগত পরিবর্তন আনা হয়নি। রাজস্বের লক্ষ্যপূরণে এনবিআর সবসময় সহজে কর আদায়ের পন্থা অবলম্বন করে। যেমন-সিগারেটের ভ্যাট বাড়িয়ে বা যেসব পণ্যে ভ্যাট আছে সেসব পণ্যের ভ্যাট বাড়িয়ে বা যারা কর দিচ্ছে তাদের উপর করহার বাড়িয়ে। পণ্যের ভ্যাট বাড়ালে স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। করজাল বৃদ্ধিতে এনবিআরের তেমন নজর লক্ষ্য করা যায় না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি
ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান
আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল
ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ
ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা
কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু
হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ
শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯
লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা
ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ
যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়