বিভিন্ন জেলায় 'লাম্পি স্কিন' রোগে মরছে গরু
০৫ জুন ২০২৩, ১০:৫২ পিএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:০৪ এএম
সিলেটের বিশ্বনাথ ও শেরপুরের ঝিনাইগাতীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গবাদিপশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। গত কয়েক মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে কয়েকশ গরু।
‘লাম্পি স্কিন’ রোগে মৃত্যুহার কম হলেও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে দুগ্ধ ও চামড়া শিল্পে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশুর চামড়া অনেকটাই অকার্যকর হয়ে যায়। আবার গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। দেশের দুধ উৎপাদনকারী খামারগুলোয় এ রোগের প্রভাব পড়ছে। দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।
এদিকে দেশে গরুর ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ ছড়িয়ে পড়লেও এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, খুব সাধারণ চিকিৎসায় গবাদি পশুর এই রোগ সারানো সম্ভব। সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সংবাদদাতার পাঠানোর তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন-
বিশ্বনাথ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা সংবাদদাতা জানান, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গবাদিপশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। ভাইরাসজনিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক মাসে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক গরু মারা গেছে। কোরবানি ঈদের আগে গবাদিপশুতে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় মহা-দুশ্চিন্তায় আছেন গরুর মালিক ও কৃষকরা। কারণ কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে লাভের আশা খামারি, কৃষক ও গরু বিক্রেতাসহ এক শ্রেণির মানুষ দীর্ঘদিন ঘরে গরু মোটাতাজা ও লালন-পালন করে আসছেন। কিন্তু বিশ্বনাথে এ রোগের লক্ষণ অতিরিক্ত মাত্রায় দেখা দেয়ায় তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
গরুর লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) এটি একটি (ক্যাপ্রিপক্সভাইরাস) ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরমের সময় এ রোগ দেখা দেয়। এছাড়া মশা, মাছি, আটাইল ও কীটপতঙ্গা এবং খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এই রোগ ছড়ায়। এ রোগের লক্ষণ গরুর শরীর জুড়ে ছোট ছোট মাংসপিন্ডে বসন্তের মতো গুটি গুটি দেখা দেয়। এই রোগে গরুর ফুসফুসে ক্ষত, হার্ট অ্যাটাক, প্রচন্ড ব্যাথা ও শরীরের তাপমাত্রা একশ চার-পাঁচ ডিগ্রী থাকে। গরু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে গরু মারা যায়।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ্যনুসারে বিশ্বনাথে গরুর সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। এর মধ্যে অনুমান ছয় থেকে সাত হাজার গরু লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) আক্রান্ত। এর মধ্যে মৃতের সংখ্যা অনুমান পাঁচশ থেকে ছয়শ হবে। যেসব গরু গুলো মারা যাচ্ছে তার মধ্যে ক্রসের বাচ্চা গরু বেশি। প্রাণী সম্পদ অফিস বলছে, এ রোগের নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই। তারা পারাসিটামল ও এন্টিহিস্টাসিন দিয়েই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার লামাকাজি, খাজাঞ্চি, অলংকারি, রামপাশা, দৌলতপুর, দেওকলস, দশঘর ও বিশ্বনাথ ইউনিয়নের নদী-নালা, খাল-বিল, ডুবা ও পরিত্যক্ত জায়গায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মার যাওয়া গরু পড়ে আছে।
খাজাঞ্চি ইউনিয়নের গমরাগুল গ্রামের মাস্টার সুহেল মিয়া জানান, তার এলাকায় অসংখ্য গরু এ রোগে আক্রন্ত এবং মারা যাওয়া গরুর সংখ্যা ৫০%। অসহায় কৃষকরা বছর জুড়ে গরু লালন পালন করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গরুর শরীরে গোটা গোটা চাকা হয়ে মারা যাচ্ছে। প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে সঠিক কোনো চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শামিমা সুলতানা ইনকিলাবকে জানান, এটি ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এটি বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই লাম্পি স্কিনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং তা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়াচ্ছে। সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক না থাকায় সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই আক্রান্ত গরুকে মশা-মাছি থেকে দূরে রাখতে হবে।
লাম্পী স্কীন রোগে মারা যাচ্ছে গরু আতংকিত কৃষক ও খামারিগণ
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, শেরপুর জেলা (উত্তর)’এ লাম্পী স্কীন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গরু। দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কৃষক ও খামারিগণ। সম্প্রতি গারো পাহাড়ের ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও এ রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে উপজেলার সাড়ি কালিনগর গ্রামের কৃষক আলহাজ¦ শরীফ উদ্দিন সরকারের ১টি গাভী ও প্রতাব নগর গ্রামের ডা. আব্দুল বারীর একটি বাছুর গরুসহ বিভিন্ন গ্রামে অনেক গরু মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় ও এ রোগের ব্যাপকতার ও খবর পাওয়া গেছে। একটি বাছুর গরু আক্রান্ত হয়েছে মো. সাদা মিয়া, গ্রাম বন্দভাটপাড়া (মাটিয়া পাড়া) এ পর্যন্ত তার কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে চিকিৎসা বাবদ।
এছাড়া চাপা ঝুড়া গ্রামের আজমত আলীর গরু আক্রান্ত হয়েছে। বন্দভাট পাড়ার সোহবার উদ্দিন কাজির গাভি ও বাছুর মারা গেছে। তাছাড়া সাড়ি কালিনগর গ্রামের সোলায়মানের গরু আক্রান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, পাহাড়ি এলাকাসহ উপজেলার প্রায় বাড়িতেই আক্রান্ত হচ্ছে গরু। অপর দিকে শেরপুর উত্তরের শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ও ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের দাওয়াকুড়া গ্রামের কৃষক আবু সাইদের প্রায় ৩০-৩২ হাজার টাকা মূল্যের একটি বকনা বাছুর মারা গেছে। একই গ্রামের কৃষক আবদুল মতিনের প্রায় ৮০-৮২ হাজার টাকা মুল্যের একটি গাবিন গরু ও আন্ধারুপাড়া গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান মানিকের প্রায় ৫০-৫২ হাজার টাকা মূল্যের ১টি ষাঁড় বাছুর গরু মারা গেছে। রোগটি নালিতাবাড়ী উপজেলাসহ গোটা শেরপুর ( উত্তর ) ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক ও খামাড়িগণ। রোগ প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে আক্রান্ত এলাকা শেরপুর (উত্তর)’র উপজেলাগুলোর গবাদিপশুকে দ্রুত ভ্যাকসিন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইনিয়নের পলাশীকুড়া গ্রামের ক্ষদ্র খামারি কৃষাণী মরিয়ম বেগম ইনকিলাবকে বলেন, তার খামারে ১১টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দেড় বছর বয়সী ১টি ষাঁড় বাছুর গরু লাম্পী স্কীন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত তার প্রায় ৬ হাজার টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে। এমতাবস্থায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। ক্ষুদ্র খামারি কৃষক আন্ধারুপাড়া গ্রামের লালচাঁন মিয়ার ৩টি ষাঁড় গরু আক্রান্ত হলে চিকিৎসায় ১টি সুস্থ হলেও ২ ষাঁড় গরুর চিকিৎসা এখন ও চলছে। এছাড়া ওই এলাকার কৃষক রুহুল আমীনের ১টি, মুনসুর আলীর ১টি ও পলাশীকুড়া গ্রামের কৃষাণী আম্বিয়া খাতুনের ১টি গরুর চিকিৎসা চলছে। তারা বলেন, লাম্পী স্কীন রোগ যাতে আর না ছড়ায় তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে আক্রান্ত এলাকার গবাদিপশুদেরকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা দরকার।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাগণ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, লাম্পী স্কীন ডিজিস মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। তাই এই রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুকে আলাদা করে মশারীর ভেতর রাখতে হবে। পাশাপাশি আক্রান্ত হওয়ার আগেই সরকারি ভ্যাকসিন না পেলে নিজ উদ্যোগে বেসরকারি কোম্পানির ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে। তাহলে কৃষকের ক্ষতির সম্ভবনা কম।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আল মাসুদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের উপজেলায় ও ইদানিং লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু মাছির মাধ্যমে রোগটি ছড়ায় সেজন্য কৃষক ও খামারিদের আক্রান্ত পশু অবশ্যই মশারির নিচে রাখতে হবে যাতে মাছি বসতে না পারে। তারপর ও পশু সম্পদ বিভাগকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা
রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে