ঢাকা   বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৯ কার্তিক ১৪৩১
দায়মুক্তির তোড়জোর

খয়রাতি চালে দুদক কর্মকর্তার থাবা

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা

০৫ জুন ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:০৪ এএম

ভুয়া বরাদ্দ দেখিয়ে আত্মসাৎকৃত প্রায় ৬ হাজার মেট্টিক টন খয়রাতি চালে ভাগ বসিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তারা। দুই এমপি, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, চোরাই চালের ডিলার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর,কাল্পনিক প্রকল্পগুলোর কথিত সভাপতির মাঝে খয়রাতির চাল প্রথম ভাগবাটোয়ারা হয়। তবে জীব বিজ্ঞানে বর্ণিত প্রাণীর খাদ্য শৃঙ্খলের মতো শেষ ভাগটি বসিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। তারা অনুসন্ধান পর্যায়ে ভাগ নিয়েছেন। ভাগ বসাতে চাইছেন মামলার তদন্তকালেও। দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৭ সালে বরাদ্দকৃত ৫৮২৩ মেট্টিক টন খয়রাতি চাল (জিআর) আত্মসাৎ অভিযোগের অনুসন্ধান করে দুদক। দায়সারা এই অনুসন্ধানের পুন:অনুসন্ধান করা হয়। একাধিকবার ‘কয়েরি’জ শেষে চার বছর পর ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট মামলা হয়। দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের তৎকালিন সহকারি পরিচালক মো: হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে এ মামলা করেন। একই অফিসের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।
রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, রংপুর বিভাগাধীন গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা। এর অন্তর্গত ধর্মপুর, মথুরাপুর,গুমানিগঞ্জ, বিশ্বনাথপুর (চরপাড়া), গারামারা,আমবাড়ী, পুরন্দর, ঘোড়ামারাসহ কয়েকটি এলাকা। এখানকার কিছু এতিমখানা,লিল্লাহ বোর্ডিং, শিশুসদন, অনাথ আশ্রম, মুসাফিরখানার নামের ১৭৮টি ডিও লেটার ইস্যু করেন গোবিন্দগঞ্জের তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: আব্দুল হান্নান। এর বিপরীতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ২২৫৩ জন প্রকল্প সভাপতির অনুকূলে ৫৮২৩ মেট্টিক টন চাউল বরাদ্দ দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জহিরুল ইসলাম।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং অপরাধ উদঘাটনে সহায়ক তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গাইবান্ধা-৪ আসনের এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুকূলে জি.আর.চাল বরাদ্দের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট ৩৫টি প্রকল্পের তালিকা পাঠান। ২০১৭ সালের ৩ মার্চ ৬০টি, ২৫ এপ্রিল ২০১৭ সালে ১৬০টি, ২৮ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে ২১৫টি, ৪ মে ২০১৭ সালে ৫০টি, ৫ মে ২০১৭ সালে১৮০টি, ১৫ মে ২০১৭ তারিখে ৬০টি, ২০ মে ২০১৭ তারিখে ৬০টি, ২৩ মে ২০১৭ তারিখে ৬০টি, ২৭ মে ২০১৭ তারিখে ৩৭টি, ২ জুন ২০১৭ তারিখে ১২০টিসহ মোট ১৬৩৭টি প্রকল্প তালিকাসহ আধাসরকারি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা ৩২ (গাইবন্ধা-৪)এর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস বলে উল্লেখ করেন। চিঠিতে এমপি মুসলিম/হিন্দু ধর্মীয়অনুষ্ঠানের অনুকূলে খয়রাতি (জি.আর.) চাল বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ধর্মপ্রাণ এসব মানুষের স্থানীয় সহযোগিতায় মুসলিম/হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো কোনো রকমে চললেও তারা ধার-দেনা করেন।এদের সহযোগিতা করা আমার-আপনার সকলের দায়িত্ব।
একইভাবে ৩০৪ মহিলা আসনের (গাইবান্ধা-৪) এমপি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি ২৫ আগস্ট ২০১৬ তারিখে ৩০টি, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোছা: আকতারা বেগম ২৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে ৩০টি, ৭ মার্চ ২০১৭ তারিখে ৬০টি, ৮ মার্চ ২০১৭ তারিখে ৩০টি, ৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে ৫০টি, ২৭ এপ্রিল তারিখে ৪০টি, ৪ মে ২০১৭ তারিখে ৩০, ৭ মে ২০১৭ তারিখে ৫০টি, ১০ মে ২০১৭ তারিখে ১৩০টি, ২৪ মে ২০১৭ তারিখে ৩০টি, ১০ জুন ২০১৭ তারিখে ৫০টি, ১৬ জুন ২০১৭ তারিখে ৪০টিসহ মোট ৫৪০টি প্রকল্প তালিকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাছে পাঠান। ২ মে ২০১৭ মূলে ৪০টি এবং ১১ মে ২০১৭ তারিখে ৬০টি ২টি পত্রমূলে মোট ১০০টি প্রকল্পে বিপরীতে জি.আর. চাল বরাদ্দের জন্য গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এমপি’র ১৬৩৭টি, উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি‘র ৩০টি, ভাইস চেয়ারম্যান মোছা: আখতারা বেগমের ৫৪০টি এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ইউএন মো: আবদুল হান্নান ১০০টি সহ মোট ২৩০৭টি প্রকল্পের জন্য ২৩ জুলাই ২০১৬ থেকে ১৩জুন ২০১৭ তারিখ মধ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি আসে। এসব চিঠির বিপরীতে মন্ত্রণালয় ২২৫৩টি প্রকল্প অনুমোদন করে। এর ভিত্তিতে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর,মহাখালি, ঢাকা থেকে ২২৫৩টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/অনুষ্ঠানের অনুকূলে ৫৮২৩ মেট্টিক টন জি.আর. চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
রেকর্ড অনুযায়ী, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ১৩ জুন ২০১৭ তারিখের মধ্যে ১৯টি স্মারকপত্র মূলে বরাদ্দ দেয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ১৭/১১/২০১৬ তারিখে একটি চিঠি মূলে ১৯টি প্রকল্পের অনুকূলে ৩১ মেট্টিক টন এবং ১৮টি পত্রসহ ১৪ জুন থেকে ৩০ জুন ২০১৭ তারিখের মধ্যে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর ২২৫৩টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ৫৮২৩ মেট্টিক টন জি.আর.চাল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আবদুল হান্নান উপ-বরাদ্দ প্রদান করে। উক্ত ইউএনও অনুষ্ঠানের সভাপতির অনুকূলে ৫৮২৩ মেট্টিক টন চাল ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১৪১টি স্মারকপত্র মূলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের খাদ্যশস্য বিতরণের অধিযাচনপত্র দেন। এ প্রেক্ষিতে ইউএনও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে খাদ্য শস্য বিতরণে জন্য ২৮/০৬/২০১৭ থেকে ৩০/০৬/২০১৭ তারিখের মধ্যে গোলাপ বাগ এলএসডি থেকে ১৩৮টি ডিও’র বিপরীতে ৪ হাজার ৪১০ মেট্টিক টন চাল, মহিমাগঞ্জ এলএসডি থেকে ২৩টি ডিও মূলে ৮৩০ মেট্টিক টন চাল এবং কামদিয়া এলএসডি থেকে ১৭টি ডিও মূলে ৫৮৩ মেট্টিক টন সহ মোট ১৭৮ ডিও মূলে ২২৫৩ জন প্রকল্প সভাপতির অনুকূলে ৫৮২৩ মেট্টিক চাল প্রকল্প সভাপতি বরাবর সরবরাহের বন্টন আদেশ দেন। পরে ১৩৮টি ডিও’র বিপরীতে গোলাপবাগ এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মোজাম্মেল হক ৪৪১০ মেট্টিক টন, কামদিয়া এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার বর্মন ১৭টি ডিও’র বিপরীতে ৫৮৩ মেট্টিক টন এবং মহিমাগঞ্জ এলসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী আরজুমান নাহার ২৩টি ডিও মূলে ৮৩০ মেট্টিক টন চাল বিতরণ করেন।
নথিপত্রে দেখা যায়, মূলত: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের খয়রাতি চাল আত্মসাতের লক্ষ্যে ওয়াজ-মাহফিল ও নামযজ্ঞ আয়োজনের ভূয়া কমিটি সৃষ্টি করা হয়েছে। এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা চালের বিলি আদেশে তৃতীয় কপিতে প্রকল্প সভাপতিদের যে স্বাক্ষর রেখে চাল ডেলিভারি দিয়েছেন সেসব স্বাক্ষর একই ব্যক্তির হাতের। স্বাক্ষরের সঙ্গে প্রকল্প সভাপতিদের স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ৫৮ হাজার ২৩ মেট্টিক টন খয়রাতি চাল (যার তখনকার আর্থিক মূল্য ২২ কোটি ৩,২১.৫৯০ টাকা) বরাদ্দ নেয়া হয়েছে তা কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। চালের ডিলার মো: ফাইজুর রহমান চোরাই এসব চাল কেনাবেচা করেন বলে জানা যায়।
অভিযোগটি পর্যায়ক্রমে অনুসন্ধান করেন যথাক্রমে: দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক মো: রাকিবুল হায়াত (স্মারক নং-গাইবান্ধা/অনু ও তদন্ত-১/৩০৮২৮, তারিখ-১২/১০/২০১৭) এবং তৎকালিন উপ-সহকারি পরিচালক প্রবীর কুমার দাস। তিনি দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা (রংপুর সজেকার ই.আর. নং-২৮/২০১৭, তারিখ-২৯/১০/২০১৭ খ্রি:) দেন। সে সময় রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ছিলেন (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল আজিজ ভুঁইয়া। তিনি ফরোয়ার্ডিং দিয়ে পরিসমাপ্তির (সব আসামির দায়মুক্তি) সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে (স্মারক নং-০০.০১.৩২০০.৭২১.০১.০২৯, তারিখ-১৭/০৫/২০১৭ খ্রি:)।
প্রতিবেদনে তিনি স্থানীয় দুই এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, গাইবান্ধার তৎকালিন জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আব্দুল হান্নান,শীলব্রত কর্মকার, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একএম ইদ্রিস আলী, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান,প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা,ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথিত সভাপতিদের কোনো সম্পৃক্ততাই দেখান নি।
প্রতিবেদন কমিশনে এলে অনুমোদন না দিয়ে টিম গঠন করে পুন:অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো: জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে গঠিত টিমের অপর সদস্য ছিলেন উপ-সহকারি পরিচালক মো: নূর আলম।
পুন:অনুসন্ধানে উল্লেখ করা হয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে দেয়া বরাদ্দপত্রের শর্ত ছিলো ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি.আর.এর চাল বিতরণের আগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ, অস্তিত্ব এবং প্রাপ্তির যোগ্যতা যাচাই করবেন। অযোগ্য/অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান/অনুষ্ঠানে এ বরাদ্দ দেয়া যাবে না। বরাদ্দ প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পন্ন না হলে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ শাখাকে অবহিত করতে হবে।’ কিন্তু গোবিন্দগঞ্জের বরাদ্দপত্রে শর্ত পালন করা হয়নি। আরও বলা হয়, জিআর চাল বন্টনের নীতিমালা সংক্রান্ত পরিপত্রের ৯ ও ১০ ধারা মোতাবেক জিআর এর চাল বিতরণের বিবরণী ও মাস্টাররোল দাখিল ও সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বিতরণ বিতরণী ও মাস্টার রোল সংরক্ষণ না করেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার চাল বিতরণ ও সমন্বয় করেছেন। জাল কাগজপত্র সৃজনের মাধ্যমে ৫৮২৩ মেট্টিক টন চাল উত্তোলনপূর্বক কালোবাজারে বিক্রি করেন। প্রতিবেদনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, গোবিন্দগঞ্জ, ১৭ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার ১জন ওয়ার্ড কাউন্সিলের কমিশনারকে দায়ী করা হয়। একই সঙ্গে দ-বিধির ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ১৮টি পৃথক মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, পুন:তদন্ত প্রতিবেদনেও দুই এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, গোবিন্দগঞ্জ নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চোরাই চালের ক্রেতা-বিক্রেতা (ডিলার) মো: ফাইজুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা চেপে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া পুন:অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হলেও তাতে আসামি করা হয়েছে ১৬ জন ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৯ জনকে। অপর তিন আসামি হলেন, উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জহিরুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা: আকতারা বেগম ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মোছা: গোলাপী বেগম। তদন্তে আগত অন্যকারও সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেলে তাদেরকে আসামি করা হবে-মর্মে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। দুই এমপি (একজন সাবেক) ,উপজেলা চেয়ারম্যান,প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, তৎকালিন দুই জেলা প্রশাসক,ইউএনও, পুনর্বাসন কর্মকর্তা একএম ইদ্রিস আলী, চোরাই চালের ক্রেতাকে বাদ দেয়া হয়। এর ভিত্তিতে এখন জোর তদবির চলছে চার্জশিট দাখিলের।
দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অনুসন্ধান শুরুর পর থেকেই ওয়াজ-মাহফিল ও হিন্দুদের নামযজ্ঞের নামে খয়রাতি চালের ভুয়া বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাৎকারীরা নেমে পড়েন তদবিরে। প্রথম ধাক্কায় অনুসন্ধান থেকে নাম কাটাতে সক্ষম হন চালের ডিলার ফাইজুর রহমান। তাই প্রথম অনুসন্ধান প্রতিবেদনেই তার নাম বাদ দেয়া হয়। তখন দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ছিলেন আবদুল আজিজ ভুঁইয়া। মামলার পরিবর্তে পরিসমাপ্তির (দায়মুক্তি) প্রতিবেদন দাখিলের আগে লেনদেন হয় অন্তত: ৮০ লাখ টাকা। এর আে রেকর্ডপত্র সংগ্রহের সময়ও দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের লেনদেন হয় অন্তত: ৩০ লাখ টাকা।
একটি পক্ষের হয়ে তদবির করছেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন গোবিন্দগঞ্জের তৎকালিন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জহিরুল ইসলাম। তবে লতিফ প্রধানসহ কয়েকজন আসামিকে দায়মুক্তি পাইয়ে দেয়ার ঠিকাদারি করছেন দুদক অনু:তদন্ত-৩ এর পরিচালক শেখ মো: ফানাফিল্যাহ (রাজশাহী শাখা)। জানা গেছে,এক সময় তিনি রংপুর কার্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় সখ্যতা হয় আব্দুল লতিফ প্রধানের। এ সূত্রে তাকে ‘ঠিকা’ দেয়া হয়েছে কমিশন থেকে দায়মুক্তি পাইয়ে দেয়ার। এরই মধ্যে ‘কাজের বায়না’ বাবদ লতিফের সঙ্গে লেনদেন হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। বাকিটা কার্যসম্পাদনের পর।
তবে দুদকের এই কর্মকর্তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল লতিফ প্রধান বলেন, এটি বেশ কয়েকবারই অনুসন্ধান হয়েছে। মূল ঘটনা ঘটিয়েছেন সাবেক স্বতন্ত্র এমপি আবুল কালাম আজাদ। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার নাম ঢুকিয়ে দেয়া হয়। দুদক পরিচালক শেখ মো: ফানাফিল্যাহ এখন রংপুরের দায়িত্বে নেই। তবে তার সঙ্গে কোনো পরিচয় নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তবে এ বিষয়ে শেখ ফানাফিল্যার সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল ধরেন নি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
বেসরকারি অপারেটর দিয়ে পরিচালিত ২৪ ট্রেনের ইজারা বাতিল
তাপস ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
আরও

আরও পড়ুন

শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা

শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা

রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা

লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা

খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু

খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু

পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি

পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি

আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার

আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার

অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী

অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী

পার্লামেন্টে ক্ষমা

পার্লামেন্টে ক্ষমা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!

লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার

লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার

মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার

মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার

সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক

সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক

গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই

গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই

সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির

সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির

স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।

স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।

আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন

আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন

জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার

জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার

ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি

ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি

বিতর্ক পরিহার করতে হবে

বিতর্ক পরিহার করতে হবে