ঘুষ, চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির মুখে অনেকেই জনশক্তি রফতাানি খাত থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন। তাদের অভিযোগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ইদানিং তাদের মারাত্মকভাবে হয়রানি করছেন। ঘুষ বা চাঁদার দাবিতে এমন কি রিক্রটিং এজেন্সি মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশ রেমিট্যান্স নিয়ে গভীর সঙ্কটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উত্থাপিত লিখিত অভিযোগে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে আনীত অভিযোগে বলা হয়েছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগেই আসে জনশক্তি খাত থেকে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কট নিরসনে যখন সরকার হিমশিম খাচ্ছে; তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার চাঁদাবাজি, ঘুষ আর হয়রানিমূলক তৎপরতায় জনশক্তি খাত পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। যার ফলে সৃষ্ট রেমিট্যান্স সঙ্কটে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপ হতে পারে। এটাকে দেশের জনশক্তি খাতের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে দাবি করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত মার্চে সউদী আরবে কয়েকজন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক আটকের পর থেকে বিষয়টিকে চাঁদাবাজির হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা। সউদী আরবে অবস্থানরত কয়েকজনের জনশক্তি রফতানিকারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চললেও বাংলাদেশে এ খাতের বড় বড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মনগড়া ও উদ্ভট অভিযোগ তুলে হয়রানি করা হচ্ছে। নিজস্ব উদ্যোগে তদন্তের নামে তারা বিভিন্ন জনশক্তি ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে রীতিমত ঘুষ-চাঁদাবাজির মহোৎসব শুরু করেছেন। ঘুষ বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মানিল-ারিং ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন আইনে মামলা দেয়ার ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিবি নিজে বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় দেশের খ্যাতনামা ২৫ রিক্রটিং এজেন্সি মালিকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি গায়েবি মামলা করেছে। এ মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগকারী যেমন নেই, তেমনি সরকারি অনুমোদনও নেই।

অভিযোগে বলা হয়েছে, এসবির একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বড় বড় রিক্রটিং ব্যবসায়ীকে ফোন করে তার সাথে দেখা করতে বলেন। কেউ দেখা করতে গেলে তার বিরুদ্ধে উদ্ভট অভিযোগ তুলে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নানাভাবে হয়রানি করছেন। মোটা অঙ্কের টাকা দিলে এই হয়রানি থেকে রেহাই মিলছে। ডিএমপির ডিবির একজন অতিরিক্ত উপ কমিশনারের বিরুদ্ধেও একই ধরণের অভিযোগ উঠেছে। এর অংশ হিসেবে ২৫ জনশক্তি ব্যবসায়ীসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দেয়া হয়।

ডিবির এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সি-িকেট এই চাঁদাবাজি ও হয়রানিতে লিপ্ত। তারা এ কাজে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও একটি রিক্রটিং এজেন্সির মালিককে মাঠে নামিয়েছে। তিনিই ডিবির হয়ে হয়রানি মুখে থাকা ব্যবসায়ীদের সাথে নেগোসিয়েশেনের দায়িত্ব পালন করছেন। মোটা অঙ্কের ঘুষ বা চাঁদা দিলে সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন। একইভাবে সিআইডির কতিপয় কর্মকর্তাও স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নামে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। যার দায়িত্বে রয়েছেন একজন এএসপি। তিনি দেশের বড় বড় জনশক্তি রফতানীকারকদের অর্থাৎ রিক্রটিং এজেন্সি মালিকদের ফোন করে ডেকে নিয়ে সউদী আরবের ঘটনার সাথে জড়িত করা অথবা মানিল্ডারিংসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন।

মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে ওই ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যদের এনআইডি, ব্যাংক এ্যাস্টেটমেন্ট ও সম্পদের হিসেব নিকাশ নিচ্ছেন। আদালতের আদেশ ছাড়া যা নেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ী হয়রানির মুখে এক কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে পার পেয়েছে। এভাবে অন্তত ৩০ ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা করে ঘুষ দাবি করেছে চক্রটি।

অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তাদেরকে প্রতি পদে পদে হয়রানি পোহাতে হয়। সরকার যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়; তবে সম্মান নিয়ে এ ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনশক্তি রফতানি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এমন কোন কার্যক্রম সরকার বরদাশত করবে না। জনশক্তি রফতানিকারকদেও অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা হবে।