চট্টগ্রামে মেট্রোরেল বাদ দিয়ে ট্রেন চালুর প্রস্তাব
১৮ জুন ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০৯ এএম
মেট্রোরেলের বিকল্প হিসেবে চট্টগ্রামে সহজ ও সাশ্রয়ী গণপরিবহন ট্রেন চালুর পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। সংগঠনটি বলছে, মাত্র চারটি রুটে কয়েক জোড়া ট্রেন চালু করলে শহরতলীর সঙ্গে বন্দরনগরীর যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে। এখানে মেট্রোরেলের মত ব্যয়বহুল মেগাপ্রকল্পের আপাতত কোন প্রয়োজন নেই। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাথে শহরতলীগুলোর যোগাযোগ উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। সড়ক যোগাযোগের চেয়েও এক্ষেত্রে রেলওয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে পরিবেশ রক্ষা হবে, নগরীর কর্মক্ষমতা ও বাসযোগ্যতা বাড়বে। এতে আরও বক্তব্য রাখেন স্থপতি জেরিনা হোসেইন, শফিক হায়দার চৌধুরী এবং প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বন্দরনগরী সচল রাখতে পরিবহনখাতে সুচিন্তিত বিনিয়োগ- রেল ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তিকরণ’ শীর্ষক প্রস্তাবনা তুলে ধরেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রাক্তন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান। চট্টগ্রামে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মূল প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- দেশে আন্তঃনগর ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেও গণপরিবহন হিসেবে আঞ্চলিক রেলপথগুলো অবহেলিতই থেকে গেছে। চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও যানজটের আশানুরূপ সমাধান হয়নি। এ অবস্থায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। অথচ গণপরিবহনের একটি সহজ ও সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে রেল নিয়ে নীতিনির্ধারক মহলে কোনো আলোচনাই হয়নি।
কোলকাতা ও মুম্বাইয়ের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, কোলকাতায় প্রতিদিন ৩০০ ট্রিপে শহরতলীর সাত লাখ যাত্রী পরিবহন করে ট্রেন। মুম্বাইয়ে প্রতিদিন ৩৯৮ ট্রিপে সাড়ে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হয়। অথচ ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২ লাখ ৮৯ হাজার আর শহর থেকে তিন রুটে ট্রেন চলাচল করত ৬ থেকে ৮ জোড়া। প্রতিটি রুটে তখন প্রতিদিন গড়ে ১৪ বার ট্রেন আসা-যাওয়া করত। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-দোহাজারী, চট্টগ্রাম-সীতাকু-, এই তিন রুটে ট্রেনের ট্রিপ ছিল মোট ৪২টি। প্রতি ট্রিপে ৩৫০ জন করে দিনে ১৪ হাজার ৭০০ যাত্রী ট্রেনে চলাচল করত। কিন্তু ২০২১ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা হয়েছে ৫৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬০ জন। আর শহর থেকে এখন দুই রুটে ট্রেন চলা চল করে মাত্র পাঁচ জোড়া। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট ও চট্টগ্রাম-দোহাজারী, এই দুই রুট মিলিয়ে মোট ট্রিপ ১০টি। প্রতি ট্রিপে ৩৫০ জন করে দিনে মাত্র সাড়ে তিন হাজার যাত্রী চলাচল করে।
এ অবস্থায় দূরত্বভেদে প্রতি রুটে একটি বা সর্বোচ্চ দুইটি ট্রেন চলাচল, প্রতিটি ট্রেন ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে চালানো, প্রতি তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে স্টেশন স্থাপন এবং প্রতিটি মধ্যবর্তী স্টেশনে ট্রেন ২৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত থামানোর প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। এই রুট শহরতলীর হাটহাজারী, ফতেয়াবাদ ও নাজিরহাটকে যুক্ত করেছে। চট্টগ্রাম ও নাজিরহাটের মধ্যবর্তী স্থানে সর্বোচ্চ ৮টি স্টপেজ থাকতে পারে এবং সকালে ২টি ও বিকেলে ২টিসহ মোট ৪টি ট্রেন চালু করা যেতে পারে। এছাড়া এই রুট ভবিষ্যতে ফটিকছড়ি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
চট্টগ্রাম-দোহাজারি রুট শহরের সঙ্গে কালুরঘাট, মোহরা, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ ও দোহাজারীকে যুক্ত করেছে। বর্তমানে এই রুটে দিনে মাত্র দুইবার ট্রেন যাতায়াত করে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের এই রুটে এক ঘণ্টা ভ্রমণ সময় নির্ধারণ করে ১৫টি মধ্যবর্তী স্টেশন স্থাপন করা যেতে পারে। এই রুটেও সকালে দুইবার এবং বিকেলে দুইবারসহ মোট চারবার ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া এই রুট ভবিষ্যতে সাতকানিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
চট্টগ্রাম-সীতাকু--মীরসরাই রুটে এখন কোনো লোকাল ট্রেনই চলাচল করে না। অথচ এই ৪৫ কিলোমিটারের এই রুট ভাটিয়ারি, কুমিরা, সীতাকু- ও মীরসরাইকে যুক্ত করেছে। প্রস্তাবনায় এই রুটে এক ঘণ্টা ভ্রমণ সময় নির্ধারণ করে ১৩টি মধ্যবর্তী স্টেশন স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। নাজিরহাট, দোহাজারীর মতো এই রুটেও ৪ বার ট্রেন চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শহরের মধ্যেই নতুনভাবে চট্টগ্রাম-পতেঙ্গা বিমানবন্দর পর্যন্ত একটি রুট চালুর প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। তবে নৌবাহিনীর সংরক্ষিত এলাকার মধ্য দিয়ে এই রুট প্রস্তাব করা হয়েছে, সে জন্য তাদের অনুমোদনের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে সংগঠনটি।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- এই রুট চালু হলে মুল শহরের সঙ্গে বারিক বিল্ডিং, বন্দর, কাটগড় ও পতেঙ্গা যুক্ত হবে। এতে বিমানযাত্রীদেরও সুবিধা হবে। সকালে তিনবার এবং বিকেলে তিনবারসহ মোট ৬ বার ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া এই রুট ভবিষ্যতে আউটার রিংরোডের সমান্তরালে আনন্দবাজার হয়ে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সম্প্ররসারণ করা যেতে পারে বলে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম শহরে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। মেট্রোরেল চালু করার আগে প্রাথমিক সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় সরকার।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া
ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা
ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি ৯০ শতাংশ ভোট পাবে: ফজলুর রহমান
ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও
বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স
বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স
বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
`আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে'
সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২৬ নারী-পুরুষ ও শিশু
লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন গ্রেফতার
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ল
দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ
শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক
দৌলতদিয়ায় বড়দের আদলে ছোটদের জমজমাট নির্বাচন
বাজারে সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে: নূর
খতমে নবুওয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ