ঢাকা   বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৯ কার্তিক ১৪৩১

টিকিট পেতেই নাকানিচুবানি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৭ জুন ২০২৩, ১০:২৪ পিএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩, ১১:৪২ পিএম

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে গ্রামে ছুটছেন মানুষ
আবু জাফর মো: আওরঙ্গজেব একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানীর কর্মকর্তা। স্ত্রী-সন্তানদের এক সাপ্তাহ আগে গ্রামের বাড়ি রংপুর পাঠিয়ে দিয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গতকাল সকালে মহাখালি বাসস্ট্যাÐে যান। আগে অনেক চেষ্টা করেও রেল ও বাসের টিকেট পাননি। মহাখালি থেকে জানানো হয় রাস্তায় যানজট আগের রাতের গাড়ি এখনো বঙ্গবন্ধু সেতুতে আটকে রয়েছে। টিকেট নেই। তিনি বাইক ভাড়া করে ছুটে যান গাবতলী। সেখানেও দুই ঘন্টা চেষ্টা করে টিকেট পাননি। সেখান থেকে আসেন কল্যাণপুর। সেখানেও টিকেট পাননি। অতপর দূর সম্পর্কের আত্মীয়র মাধ্যমে একটি টিকেট সংগ্রহ করেন দ্বিগুন দাম দিয়ে। আওরঙ্গ বলেন, একটি টিকেটের জন্য যে কণ্ট করতে হলো তা বর্ননা করা আমার পক্ষ্যে দূরহ। বাসের টিকেট যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। শহীদুল নামের একজন জানালেন তিনি দুই দিন চেস্টা করে তিনগুন দামে বগুড়া যাওয়ার টিকেট পেয়েছেন। সোহেল আরমান নামের একজন জানান, রাজশাহীর টিকেট পেতে তাকে গাবতলী, কল্যানপুর ও মহাখালির বাস কাউন্টারে গিয়ে খুঁজতে হয়েছে। শুধু আওরঙ্গজেব, সোহেল আরমান, শহীদুল নন, হাজার হাজার ঘরে ফেরা মানুষকে গতকাল বাসের টিকেটের জন্য নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে। রাজধানী থেকে জেলা পর্যায়ের প্রতিটি রুটের বাসভাড়া দ্বিগুন-তিনগুব বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও টিকেট মিলছে না। গ্রামে ঈদ করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে মহাখালি ও সায়েদাবাদ এসেছেন এমন প্রায় ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা প্রত্যেকেই ১০ থেকে ১০টি বাস কোম্পানীর টিকেট কাউন্টারে গেছেন। এমনকি প্রচন্ড যানজটের মধ্যে মহাখালি থেকে গাবতলী, সায়েদাবাদ থেকে মহাখালি এবং পথে পথে বিভিন্ন বাস কাউন্টারে গিয়ে খোঁজখবর নেয়ার পর দ্বিগুন তিনগুন দামে টিকেট পেয়েছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেন চলতে তার নিজস্ব গতিতে। সিÐিকেট ট্রেনের টিকেট গিলে ফেলায় সাধারণ মানুষের ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে সিলেট মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও তীব্র যানজট তেমন হয়নি। যাত্রীদের কষ্ট করতে হয়নি। তবে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল গামী এবং ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ গামী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহন দঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সাভার –মানিকগঞ্জ, গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের তীব্র যানজট। একইসঙ্গে যাত্রীর তুলনায় সড়কে গণপরিবহন সংকট থাকায় মানুষ পায়ে হেটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি আতিকুল ইসলাম জানান, দুপুরের পর অনেক শিল্প কারখানা ছুটি হয়েছে। এতে যাত্রীদের চাপে কিছু যায়গায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী থেকে চন্দ্রা পল্লিবিদ্যুৎ পর্যন্ত তীব্র যানজট রয়েছে। অপরদিকে, চন্দ্রা আশুলিয়া রোডেও একই অবস্থা। এছাড়া, ঢাকাÐ-য়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী, বোর্ডবাজার হয়ে চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে সালনা পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সদরঘাটের নৌ পথে তেমন চাপ চোখে পড়েনি।
গতকাল সকালে ঢাকার সায়েদাবাদের সাকুরা পরিবহনের বাস কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই প্রতিবেদক। জহির উদ্দিন নামের একজন যাত্রী বাস কাউন্টারে আসেন। তিনি টিকিট বিক্রেতা মো. জাহিদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভাই, বরিশালের টিকিট আছে?’ জবাব, ‘ভাই, একটা টিকিট আছে। দাম এক হাজার টাকা। গাড়ি ছেড়ে যাবে বেলা সাড়ে ১২টায়।’ হুমায়ুন কবির মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার নোট জাহিদের হাতে তুলে দেন। জাহিদ তখন কম্পিউটারের সামনে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর জাহিদ হুমায়‚নের হাতে একটা টিকিট ধরিয়ে দেন। টিকিটে সব কম্পিউটারে লেখা। টিকিটের গায়ে কম্পিউটারে দাম লেখা ৬১৮ টাকা। একই দৃশ্য দেখা গেল এনা পরিবহণের কাউন্টারে। কম্পিউটারে টিকেটের গায়ে লেখা ৬২০ অথচ নেয়া হচ্ছে ১১শ টাকা।
সায়েদাবাদের আরো অন্তত ১০টি বাস কাউন্টারে সরেজমিনে দেখা গেছে, টিকিটের জন্য যাত্রীরা কাউন্টারে আসার পর বলা হচ্ছে, টিকিট সব শেষ। এই কথা শোনার পর হতাশ হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। কিছুক্ষণ পর ওই কাউন্টারের লোকজন বলছেন, দাম বেশি দিলে টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারবেন। যাত্রীদের অভিযোগ, সায়েদাবাদে যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করছে কোনো কোনো বাস কাউন্টার। একই দৃশ্য মহাখালি, গাবতলী ও কল্যানপুর বাস টার্মিনালে দেখা গেছে। দ্বিগুন তিনগুন দামে যাত্রীদের টিকেট ক্রয় করতে হচ্ছে। অথচ টিকেটের গায়ে তা লেখা থাকছে না।
গাবতলীতে তীব্র যানজট : ঈদে স্বজন-প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে কর্মস্থল ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরছেন লাখো মানুষ। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও গাবতলী হাটের কারণে রাজধানীর সড়কে যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। সিগনাল পড়লেই লেগে যাচ্ছে যানজট। টেকনিক্যাল থেকে গাবতলী পার হতে সময় লাগছে প্রায় ঘণ্টাখানেক। এত যানবাহনের চাপ সামাল দিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
সড়কে নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টা রোস্টার করে শ্যামলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে সড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করতে কাজ চলছে। কিন্তু এ মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা পশুর হাটের জনসমাগম, সঙ্গে ঘরমুখো মানুষের জটলা, ঈদযাত্রার পরিবহন ও পশুবাহী পরিবহন সামলাতে পুরো নাকানিচুবানি অবস্থা। গত রাত ৩টা থেকে যানবাহনের তীব্র চাপ বেড়েছে। বড় বাধা তৈরি করছে সড়কের বিকল হয়ে পড়া যানবাহনগুলো। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়, মাজার রোড, গাবতলী রজব আলী মার্কেট, গাবতলী আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল ও গাবতলী পর্বত সিগনালসহ প্রত্যেকটি পয়েন্টে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। একটি পয়েন্ট ক্লিয়ার করতে বাকি পয়েন্টে থমকে যাচ্ছে যানবাহন। প্রত্যেক পয়েন্টে থামছে যাত্রীবাহী বাস। এছাড়া কাউন্টারের সামনে সারি সারি গাড়ি পার্কিং করা অবস্থায় দেখা যায়।
হাজার হাজারো ঘরমুখো মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষা করে কর্দমাক্ত রাস্তায় হেঁটে সড়কেই ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করে উঠে পড়ছেন যানবাহনে। অনেককে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় কাঙ্খিত ও গন্তব্যের যানবাহনের জন্য। রাজধানী টেকনিক্যাল, মাজার রোড, রজব আলী মার্কেট এবং পর্বত সিগনালে যানবাহন ও হাটে আসা যাত্রীর চাপ অনেক বেশি।
ডিএমপির ট্র্যাফিক মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, টেকনিক্যালে চাপ রয়েছে। গাবতলী গরুর হাটের কারণে ঈদুল আজহায় সড়কে চাপ বেশি পড়ে। যদিও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার চাপ একটু কমই।
মিরপুর ট্র্যাফিক বিভাগের দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ঘরমুখো যাত্রীবাহী যানবাহন, নিয়মিত যানবাহন, পশুবাহী যানবাহন, পশু ক্রেতা-বিক্রেতার চাপ এবং সড়কের এপার থেকে ওপারে গরু-ছাগল ও মানুষের পারাপারের কারণে যানবাহনের গতি কমে গেছে। চতুর্মুখী চাপে হিমশিম ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্যরা। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি গাবতলী পর্বত সিগনালকে সচল রাখার জন্য।
অতিরিক্ত ভাড়ায়ও মিলছে না বাস : গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পরিবহন সংকটে পড়েছে ঈদে ঘরেফেরা মানুষ। ফলে অনেকেই পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
এর আগে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সকালে তেমন চাপ ছিল না। অনেক পরিবহনকে মহাসড়কের পাশে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডেকে তুলতে দেখা গেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, দুপুরের পর কারখানা পুরোদমে ছুটি হলে ঈদযাত্রার স্বাভাবিক এ চিত্র বদলে যেতে শুরু করবে, সড়ক-মহাসড়কে মানুষের ঢল নামবে। বিকেলের দিকে গাজীপুরের টঙ্গী, স্টেশন রোড, হোসেন মার্কেট, কলেজ গেট, বোর্ড বাজার এলাকার যাত্রীদের কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছাতে পরিবহন না পেয়ে তাদের পায়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
ময়মনসিংহের ত্রিশালের উদ্দেশ্যে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রওনা দিয়েছেন টঙ্গী বাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সকালে দোকানের কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দিতে গিয়ে দুপুর হয়ে গেছে। ঈদযাত্রার ভোগান্তি কথা চিন্তা করে আগেই স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। আগে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ত্রিশাল পৌঁছাতে পারতাম। এখন সেই ভাড়া হাজারের ঘরে গিয়ে ঠেকেছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও বাড়ি যাওয়ার বাস পাচ্ছি না। তাই দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে পায়ে হেঁটেই চান্দনা চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। সেখানে গিয়ে বাস ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হব।
হারিকেন এলাকার পোষাক কারখানার শ্রমিক বুলবুল আহমেদ বলেন, স্ত্রীসহ একটি কারখানায় কাজ করি। বাড়ি যাব তাই আগে থেকেই ব্যাগ গুছিয়ে সকালে অফিসে যাই। দুপুর ২টার মধ্যে অফিস থেকে বের হয়ে এলেও দেড় ঘণ্টা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বাস পাইনি। তাই পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছি, আমার মতো আরও অনেকেই হাঁটছেন। একসঙ্গে হাঁটতে ভালোই লাগছে।
টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, ঈদে পরিবহন সংকট থাকলেও একদমই যানজট নেই। অনেক যাত্রী রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। নির্বিঘেœ চলাচল করতে পুলিশ সদস্যরা সহযোগিতা করছেন।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে ভোগান্তি : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে বেড়েছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। ফলে সৃষ্টি হয়েছে যানজট ও গাড়ির ধীরগতি। এরসাথে যুক্ত হয়েছে গুড়ি গুড়ি টানা বৃষ্টি। এসবের সঙ্গে যুদ্ধ করে কয়েকদিনের জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করে ভোগান্তির যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঘরমুখো মানুষ ছুটছেন নিজ গ্রামের বাড়ি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টায় মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনের বাসস্ট্যান্ড, সেতু পূর্ব গোল চত্বর ও জোকারচর বাসস্ট্যান্ড ঘুরে ঘরমুখো মানুষের এমন ভোগান্তি চিত্র দেখা যায়। এছাড়া দূরপাল্লার মোটরসাইকেল আরোহীরা আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন হোসেন আলী। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশন বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। তাদের গন্তব্যে নাটোরের বনপাড়া এলাকায়। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে এই রেলস্টেশনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এদিকে বৃষ্টি ও অন্যদিকে বাস না পেয়ে চোখেমুখে যেন পড়ে হতাশা। তিনি বলেন, যানজটের কারণে বাস পাচ্ছি না। বৃষ্টিতে পরিবার নিয়ে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। দু’একটা বাস পেলেও সেগুলো থামে না ও যাত্রী উঠাতেও চান না। আবার দেখা যায় ভাড়া চায় জনপ্রতি ৫০০। শ্রমজীবি হয়ে এত টাকা কোথায় পাব। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকেই যাওয়ার চেষ্টা করতেছি।
নওগাঁর আত্রাইয়ের আব্দুস সোবহান বলেন, এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট। দুই লেনের সড়ক থাকায় প্রতিবছর এমন দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তারমধ্যে বৃষ্টি। এতে করে গাড়ি চালাতে বেগ পোহাতে হয় চালকদের। তবুও স্বজনদের সাথে ঈদ করার জন্য বাড়ি যেতেই হবে।
জানা গেছে, গত সোমবার রাত ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর পরপর দুই বার একটি পরিবহনের সঙ্গে আরেকটি পরিবহনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এছাড়া একটি পরিবহন বিকল হয়। এতে রাত ৩টার পর ১০ থেকে ১২ মিনিট, ৪টার পর প্রায় ১ ঘণ্টা ও ৫টা ৩০ মিনিট থেকে ৫টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সেতুতে টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়।
এরপর মাঝে মাঝে সেতুতে টোল আদায় বন্ধ হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনের দীর্ঘ লাইন, ধীরগতির আবার স্থবির হয়ে পড়ে যানবাহন। এতে করে ঘরমুখো মানুষগুলো চরম ভোগান্তি পড়ে। যাথে যুক্ত হয় বৃষ্টি। পরে বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধীরগতি যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে মহাসড়কের পরিবহনগুলো বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভুঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে চলাচল করায় বিভিন্ন অংশে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই সড়কের কালিহাতী উপজেলা কুচটি হতে এলেঙ্গা রেলক্রসিং, বঙ্গবন্ধু সেতুপুর্ব গোল চত্বর হতে গোবিন্দাসী পর্যন্ত ধীরগতিতে পরিবহন চলাচল করছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ (ওসি) জাহিদ হাসান বলেন, এলেঙ্গা থেকে সল্লা পর্যন্ত যানজট নেই। বৃষ্টির কারণে সল্লা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টোলপ্লাজা ও সেতুর ওপরে পরিবহনের চাপ রয়েছে এবং ধীরগতিতে চলাচল করছে।
সদরঘাটে ভিন্ন চিত্র : সড়ক ও রেলপথে ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চিত্র পুরোপুরি আলাদা। টার্মিনালে যাত্রীর উপস্থিতি এতটাই কম যে, নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে না লঞ্চগুলো। তবে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি হবে আজ। সে কারণে বিকেল থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মঙ্গলবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, টার্মিনালের পন্টুনে বাধা আছে দক্ষিণাঞ্চলগামী সারি সারি লঞ্চ। ২-৩টি লঞ্চে যাত্রীদের দেখা গেলেও বাড়তি কোনো চাপ নেই। যাত্রীর চাপ কম থাকায় লঞ্চ কর্মচারীদের তেমন কর্মব্যস্ততাও নেই।
ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের স্টাফ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমাদের যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে গত কয়েকদিনে যাত্রী বেশ বেড়েছে। গতকাল রাত থেকে ভালোই যাত্রী পাচ্ছি। বেশিরভাগ কেবিনগুলো আগে থেকেই বুকিং দেওয়া, এজন্য খালি যাচ্ছে না। এছাড়া ডেকেও ভালো লোক হচ্ছে। ভোলাগামী এক যাত্রী বলেন, লঞ্চে আগের মতো ভিড় নেই। যাত্রীও আছে কিন্তু অতিরিক্ত চাপ নেই। অন্য সময়ে কয়েক দিন আগেও টিকিট পাওয়া যেত না। আজ ঘাটে এসেই টিকিট নিতে পেরেছি। তাই আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। লঞ্চ ভাড়াও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভ‚ঁইয়া বলেন, আমাদের কিছু লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই রুটগুলোতে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তাই যাত্রীরা এখনো কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। যেহেতু ছুটি শুরু তাই যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে আশা করছি। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে লঞ্চ ঘাটেই ভিড়িয়ে রেখেছি।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষায় ‘জিরো কার্বন’-ভিত্তিক জীবনধারার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বাতিল হচ্ছে স্কুল ভর্তিতে গণভবন ও কলোনি কোটা
শেয়ারবাজারে কারসাজি: সাকিবের আয় ৯০ লাখ, জরিমানা ৫০ লাখ
পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন সভ্যতা গড়ার বার্তা ড. ইউনূসের
জলবিদ্যুৎ ভাগাভাগিতে দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড তৈরির প্রস্তাব ড. ইউনূসের
আরও

আরও পড়ুন

জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষায় ‘জিরো কার্বন’-ভিত্তিক জীবনধারার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষায় ‘জিরো কার্বন’-ভিত্তিক জীবনধারার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশে মৎস্যচাষের সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে খুবির সাথে যৌথ সহযোগিতার প্রস্তাব

বাংলাদেশে মৎস্যচাষের সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে খুবির সাথে যৌথ সহযোগিতার প্রস্তাব

বাতিল হচ্ছে স্কুল ভর্তিতে গণভবন ও কলোনি কোটা

বাতিল হচ্ছে স্কুল ভর্তিতে গণভবন ও কলোনি কোটা

শেয়ারবাজারে কারসাজি: সাকিবের আয় ৯০ লাখ, জরিমানা ৫০ লাখ

শেয়ারবাজারে কারসাজি: সাকিবের আয় ৯০ লাখ, জরিমানা ৫০ লাখ

আলেকজান্ডার-দৌলতখান নৌরুটে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে বিরোধের জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা!

আলেকজান্ডার-দৌলতখান নৌরুটে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে বিরোধের জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা!

বিএনপি ঘরানার হওয়ায় আওয়ামী সরকারের অমানবিক নির্যাতনের শিকার একটি পরিবার: রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি

বিএনপি ঘরানার হওয়ায় আওয়ামী সরকারের অমানবিক নির্যাতনের শিকার একটি পরিবার: রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি

শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনে যে পদ পাচ্ছেন

শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনে যে পদ পাচ্ছেন

দৌলতপুরে অস্ত্র ও গুলিসহ দুই যুবক আটক

দৌলতপুরে অস্ত্র ও গুলিসহ দুই যুবক আটক

সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চলবে ১৫ নভেম্বর থেকে

সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চলবে ১৫ নভেম্বর থেকে

ওসমানী-নগরে গৃহবধু হত্যাকারী গ্রেফতার

ওসমানী-নগরে গৃহবধু হত্যাকারী গ্রেফতার

ছাত্র আন্দোলনে নিহতের মিথ্যা তথ্যে স্বামীকে মৃত দেখিয়ে অর্থ ধান্ধায় স্ত্রীর মামলায় সিলেটে তোড়পাড় !

ছাত্র আন্দোলনে নিহতের মিথ্যা তথ্যে স্বামীকে মৃত দেখিয়ে অর্থ ধান্ধায় স্ত্রীর মামলায় সিলেটে তোড়পাড় !

রেগে চেয়ার ভাঙার শাস্তি পেলেন টপলি

রেগে চেয়ার ভাঙার শাস্তি পেলেন টপলি

সালথায় জমিজমা নিয়ে বিরোধে যুবককে ৩০ কোপ, দুই হাত-পা প্রায় বিচ্ছিন্ন

সালথায় জমিজমা নিয়ে বিরোধে যুবককে ৩০ কোপ, দুই হাত-পা প্রায় বিচ্ছিন্ন

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঝালকাঠিতে শুরু হয়েছে কৃষকের বাজার ‘স্বস্তি’

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঝালকাঠিতে শুরু হয়েছে কৃষকের বাজার ‘স্বস্তি’

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ইসরায়েল গাজায় মানবিক সাহায্য অবরোধের আইন লঙ্ঘন করেনি

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ইসরায়েল গাজায় মানবিক সাহায্য অবরোধের আইন লঙ্ঘন করেনি

পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন সভ্যতা গড়ার বার্তা ড. ইউনূসের

পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন সভ্যতা গড়ার বার্তা ড. ইউনূসের

আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন গ্রেফতার

আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন গ্রেফতার

চোটে ছিটকে গেলেন রাসেল, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেন জোসেফ

চোটে ছিটকে গেলেন রাসেল, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেন জোসেফ

তারাকান্দায় অজ্ঞান পার্টির নারী সদস্য গ্রেফতার

তারাকান্দায় অজ্ঞান পার্টির নারী সদস্য গ্রেফতার

টেস্ট দলে শান্তর জায়গায় শাহাদাত

টেস্ট দলে শান্তর জায়গায় শাহাদাত