বিএনপি সংবিধান মেনে নির্বাচনে এলে সরকার সংলাপে রাজি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। বিরোধী দল (বিএনপি) নির্বাচনে এলে সরকার সংলাপে রাজি আছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা নয়। কারণ দেশের উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেআইনি ঘোষণা করেছেন। সে অনুসারে পরে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। তারা (বিএনপি) যদি সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তাহলেই কেবল সংলাপ হতে পারে। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের (বিডা) ভবনে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালমান এফ রহমান। এ সময় ব্রিটিশ মন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টনও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, বৈঠকে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করার জন্য বলেছেন। জবাবে আমি তাদের জানিয়েছি, দেশে একটা সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। বিগত সময়ে দেশে অনেকগুলো উপনির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়ে গেছে আমাদের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। সুন্দরভাবে তারা কাজ করেছে।

বিরোধী দলের (বিএনপি) সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলকে বলেছি যে আমরা সংলাপ করতে সব সময় রাজি আছি। তবে আগে বিরোধী দলকে সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এরপর নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা সংলাপ করতে রাজি আছি। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংলাপের সুযোগ নেই এ কথা আমরা যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলকে বুঝিয়েছি। তারা সেটা বুঝেছেন।

সালমান এফ রহমান আরো বলেন, বিরোধী দল (বিএনপি) এখন বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচনে আসবে না। কিন্তু এমনটা হলে আমরা তো কোনো সংলাপ করতে পারি না। সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বেআইনি করে দিয়েছে। এরপর আমরা সংবিধান সংশোধন করে ফেলেছি। এখন সেই বিষয়ে সংলাপ করার আর সুযোগ নেই।

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য আরো সম্প্রসারণ হবে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, বৈঠকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের এয়ারবাস ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে কথা হয়েছে। যুক্তরাজ্য যে ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) নামের নতুন বাণিজ্যনীতি ঘোষণা করেছে, সে বিষয়েও কথা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা খাতেও বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছে প্রতিনিধিদল।

নির্বাচন ও বাণিজ্যবিষয় ছাড়াও বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও কথা হয়েছে। এ বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল আমাদের বলেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা সংকট তারা ভুলে যাননি। এ সমস্যা সমাধানে জনমত অব্যাহত রাখা ও মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার বিষয়ে বলেছেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ১১ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টন বলেন, অর্থনীতির বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কাজ করতে চায় যুক্তরাজ্য। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের বাধাগুলো দূর করে পারস্পরিক সমৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উপ-ট্রেড কমিশনার আনা শটবোল্ট, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক পরিচালক ড্যান পাশা ও বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক উপপরিচালক খালিদ গাফফার। ##