ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় সওজ’র প্রকৌশলী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে

০৭ জুলাই ২০২৩, ১১:০৭ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রকৌশলী মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. খায়রুল হক বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে এই মামলা হয়। মামলার আসামি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বর্তমানে কুষ্টিয়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। ইতিপূর্বে সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। আর তার স্ত্রী ডা. জোবাঈদা ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে প্রভাষক হিসাবে কর্মরত আছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দুদক থেকে ২০২২ সালের ২৩ জুন তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৬ আগস্ট পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এজাহারে আরো বলা হয়, সম্পদ বিবরণীতে মোস্তফা কামাল স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে দুই কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯২ টাকার সম্পদের হিসাব দেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে মোট তিন কোটি ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৭৩ টাকা সম্পদের তথ্য প্রমাণ মেলে। অর্থাৎ এখানে তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৯১ লাখ ১৩ হাজার ৮১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্ত্রীকে দানসহ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় হিসাব করলে দুদকের অনুসন্ধানে মোট সাত কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় এক কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ২৬৭ টাকা বাদ দিলে ছয় কোটি ৩৫ লাখ ৪ হাজার ৪৯৩ টাকার সম্পদের উৎস দেখাতে পারেননি তিনি। যা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে দুদকের কাছে প্রমাণিত হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়, একই সঙ্গে অবৈধ ওই সম্পদের মধ্যে আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার মায়ের দানকৃত ছয় কোটি ২০ লাখ টাকা তার আয়কর নথির ২০০১-২০০২ করবর্ষ থেকে ২০০৬-২০০৭ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শন করেছেন। উক্ত টাকা থেকে তিনি তার স্ত্রী ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদকে বিভিন্ন সময়ে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা দান করেন। যা তাদের উভয়ের আয়কর নথিতে গ্রহণ ও প্রদানের বিষয়টি প্রদর্শিত রয়েছে। তদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আবু হেনা মোস্তফা কামাল ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়কে স্থানান্তর, হস্তান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে বৈধতা দানের জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে প্রথমে তার মায়ের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে তা দান হিসেবে নিজের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন। এরপর উক্ত দান করা টাকার মধ্য থেকে তার স্ত্রী ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদকে দান করেন এবং স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন করেন। যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয়কে বৈধতা দানের চেষ্টা করেছেন তারা। যেখানে স্ত্রী হিসেবে জোবাঈদা তার স্বামীকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন। এ কারণে মামলায় ডা. জোবাঈদাকে প্রথম আসামি ও স্বামী মো. আবু হেনা মোস্তফা কামালকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট দুই কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৭৩১ টাকার সম্পদের তথ্য দেন ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদ। অনুসন্ধান বা যাচাইকালে তার নামে মোট দুই কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ৩১ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি চার লাখ ৪৪ হাজার ৩০০ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেন।
দুদক অনুসন্ধানে আরো দেখতে পায়, ডা. জোবাঈদার নীট সম্পদ, পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ চার কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে তার গ্রহণযোগ্য আয় এক কোটি ৫২ লাখ ১২ হাজার ৫৭ টাকা বাদ দিলে দুই কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা তার স্বামী আবু হেনা মোস্তফা কামাল থেকে দান সূত্রে প্রাপ্ত। তাদের উভয়ের আয়কর নথিতে উক্ত দান গ্রহণ ও প্রদানের বিষয়টি প্রদর্শিত রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আর কথা বলতে চাচ্ছি না, আমার আর ভালো লাগছে না। আমার কোন বক্তব্য নাই আমার এত টাকার মামলাও নাই, সম্পদও নাই, কিছুই নাই। আমার সব কিছু ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান