বেসরকারি খাতে যাচ্ছে পণ্য ডেলিভারি
১৪ জুলাই ২০২৩, ১১:২৮ পিএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারির দীর্ঘদিনের প্রথা বন্ধ হচ্ছে। বন্দরের শেড এবং জেটি থেকে কন্টেইনার ও পণ্য ডেলিভারি ব্যবস্থা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমোদন পেলে আগামী আগস্ট মাস থেকেই এই পদ্ধতি কার্যকর হবে।
প্রতিবেশি ভারতসহ পৃথিবীর কোন দেশের উন্নত বন্দরে কনটেইনার খুলে বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য ডেলিভারির নিয়ম চালু নেই। যদিও দেশের এই প্রধান সমুদ্রবন্দরে শুরু থেকে এই প্রক্রিয়ায় পণ্য ডেলিভারির প্রথা চালু রেখেছে। ফলে শেড থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে প্রতিদিন বন্দরে ছয় হাজারের বেশি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান আসা যাওয়া করছে। তার সাথে আসছে চালক, সহকারিসহ ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
বন্দরে প্রবেশের জন্য ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানগুলোকে সিরিয়াল পেতে বন্দরের বাইরে সড়কে অপেক্ষা করতে হয়। তাতে বন্দরকে ঘিরে সড়কে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। এ অবস্থায় চরম নিরপত্তা সংকটে পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর। কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি বন্দরের বাইরে হলে যেমন যানবাহন ও মানুষের চাপ কমবে তেমনি বন্দরকে ঘিরে আশপাশের সড়কেও যানজটের অবসান হবে। তাতে মহানগরীর বিরাট অংশের যানজট কমে যাবে। আর আমদানি-রফতানি কার্যক্রমও আরো গতিশীল হবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া বন্দরের অভ্যন্তরের অপারেশনাল কার্যক্রম নির্বিঘেœ সম্পন্ন করা যাবে।
বর্তমান পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এলসিএল কার্গো ডেলিভারি নিতে দেরি হলে ধারণক্ষমতার বেশি পণ্য জমে বন্দরে জটের সৃষ্টি হয়। শেডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দর ইয়ার্ডে বিঘিœত হয় আনস্টাফিং, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৪ সাল থেকে আইএসপিএস (ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি) কোড বাস্তবায়ন করে আসছে। এই কোড বাস্তবায়নে ইউএস কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিদলের একাধিক পরিদর্শনে ডেলিভারি কার্যক্রম বন্দরের বাইরে সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আনস্টাফিং কার্যক্রম সরানোর উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পণ্যবাহী কনটেইনার ডেলিভারি হয়। যার প্রায় ১০ শতাংশ পণ্য থাকে এলসিএল কনটেইনারের। প্রতিটি এলসিএল কনটেইনারে থাকে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য। যা বন্দরের অভ্যন্তরে খুলে আলাদা করে বিভিন্ন শেডে রাখা হয়। সেখান থেকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে ডেলিভারি করা হয়।
তবে আগস্ট মাস থেকে এমন এলসিএল কনটেইনার আর বন্দরের অভ্যন্তরে না খুলে বন্দরের চার নম্বর গেট থেকে দুই কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরত্বে বন্দর স্টেডিয়াম সংলগ্ন পুরাতন ‘এক্স’ এবং ‘ওয়াই’ নামের দুটি শেডে পাঠানো হবে। সেখান থেকে এলসিএল কার্গোর পণ্য খালাস হবে। প্রথম পর্যায়ে এলসিএল কনটেইনার ডেলিভারির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বে-কার্গো নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। বন্দরের সাথে তাদের পাঁচ বছরের একটি চুক্তি হয়েছে।
পাঁচ একর জমির ওপরে এক্স ও ওয়াই শেড দুটির আয়তন ১৮ হাজার ৯০৬ বর্গমিটার। বন্দরের বর্তমান ট্যারিফ অনুযায়ী এ থেকে ভাড়া আদায় করা হবে। বন্দরের পরিত্যক্ত এই শেড দুটি সংস্কার, সড়ক ও ইয়ার্ড নির্মাণসহ পুরো কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বে-কার্গো সেন্টার। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরুর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, বন্দর থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বন্দরের জায়গা ভাড়া নিয়ে শেড তৈরির কাজ প্রায় শেষ করেছে বে-কার্গো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বন্ডেড এরিয়ার সনদ পেলেই পুরোপুরি কাজ শুরু করবে তারা। এসব শেডে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা খুলে পণ্য খুলে ডেলিভারি দেওয়া যাবে।
বে-কার্গো সেন্টারের কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকারকদের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়েই এই পদ্ধতি চালু করা হবে। এ নিয়ে কারো কোন ভোগান্তি হবে না। প্রায় পাঁচ হাজার কনটেইনার ধারণ ক্ষমতার এই ইয়ার্ড এবং শেডে বছরে কমপক্ষে ৬০ হাজার কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। শুরুতে প্রতিদিন ৭৫ থেকে ১০০ কনটেইনার আনস্টাফিং করে ডেলিভারি দেওয়া যাবে।
আমদানিকারকেরা বলছেন, বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার থেকে পণ্য নামিয়ে তা ডেলিভারি দেওয়ার নিয়ম উন্নত কোন বন্দরে নেই। এমনভাবে পণ্য নামানোর কারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কন্টেইনার থেকে আমদানি পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল বন্দরের শেডে যত্রতত্র ফেলা রাখা হয়। তাতে পণ্য বিনষ্ট হচ্ছে। আবার শেড থেকে পণ্য চুরি ও লোপাটের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হলে বন্দরের অভ্যন্তরে যেমন শৃঙ্খলা ফিরবে তেমনি দ্রুত সময়ে পণ্য ডেলিভারি নেওয়াও সম্ভব হবে।
তবে বন্দরের পরির্বতে বেসরকারি খাতে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হলে তাকে খচর বাড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার যথা সময়ে আমদানি পণ্য বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল খালাস করা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা জটিলতায় কাঁচামাল ডেলিভারি নিতে গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ডেলিভারির সময় কমিয়ে আনার পাশাপাশি ট্যারিফ না কমালে বেসরকারিকরণ সুফল আনবে না বলে মনে করছেন এই খাতের শিল্প মালিকেরা।
বর্তমানে এলসিএল কার্গো খালাসে সময় লাগে ৭ দিন। এক দিনের মধ্যে কার্গো ডেলিভারি নিতে পারলে তৈরি পোশাক রফতানিতে লিড টাইম কমে যাবে। আনস্টাফিং, পণ্য ডেলিভারিসহ অন্যান্য খরচ যাতে বন্দরের বিদ্যমান ট্যারিফ অনুযায়ী হয় তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ধামরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
ঢাকা মহানগর মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবক আহত
কুমিল্লা জজকোর্টের ৩ পিপি-এপিপিকে সংবর্ধনা
চুয়াডাঙ্গার রেলস্টেশন এলাকা থেকে ১৪টি অবৈধ স্বর্ণেরবার উদ্ধার, আটক ৩
জাহাজে ৭ খুনের ঘটনার দ্রুত সুরাহা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘ছাত্র-জনতা সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়েছে’
পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই
‘ট্রানজিটের নামে দিল্লিকে দেয়া করিডর জনগণ মেনে নেয়নি’
বদলির ৩ মাস পরই পূর্বের কর্মস্থলে ফিরলেন শরীয়তপুরে সদর হাসপাতালের ক্যাশিয়ার বজলুর রশিদ
বগুড়ায় যথাযথ মর্যাদায় বড়দিন পালন
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার