বিলুপ্ত হলো ওয়াগনার গ্রুপ
১৪ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
বেসরকারী যোদ্ধাগ্রুপ ওয়াগনার পিএমসিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। কমার্স্যান্টের বিশেষ সংবাদদাতা আন্দ্রে কোলেসনিকভ পুতিনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, সংস্থার ভবিষ্যত সম্পর্কে একটি প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ান আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, ‘ওয়াগনার পিএমসি বিদ্যমান নেই’।
বেসরকারী সামরিক সংস্থাগুলিকে আইনীকরণ করা একটি জটিল বিষয় যা সরকার এবং সংসদ দ্বারা পরিচালনা করা উচিত, কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াগনার পিএমসি-এর মতো সংস্থাগুলি এই সময়ে রাশিয়ায় অস্তিত্বহীন, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন যে, রাশিয়ার বেসরকারী সামরিক সংস্থাগুলির বিষয়ে কোনও আইন নেই এবং তাই, ‘এমন কোনও আইনি সত্তা নেই’। ‘(ওয়াগনার) গ্রুপ বিদ্যমান, কিন্তু এটি বিচারিকভাবে অস্তিত্বহীন,’ প্রতিবেদনে পুতিনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘আনুষ্ঠানিক বৈধকরণ একটি পৃথক ইস্যু যা রাষ্ট্রীয় ডুমা (রাশিয়ান সংসদের নিম্ন কক্ষ) এবং সরকারের দ্বারা সমাধান করা উচিত। এটি একটি জটিল সমস্যা।’ প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস করেন যে, ওয়াগনার গ্রুপের বিতর্ক ‘রাশিয়ান সমাজের (সদস্যদের) জন্য খুবই সহজ এবং স্পষ্ট।’ ‘ওয়াগনারের সাধারণ সদস্যরা মর্যাদার সাথে লড়াই করছিলৃ তাই এটা খুবই দুঃখজনক যে তারা এই ইভেন্টে জড়িয়ে পড়েছে,’ পুতিন যোগ করেছেন। এদিকে, গত মাসে ওয়াগনার গোষ্ঠীর বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষেবাগুলি কমপক্ষে ১৩ জন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাকে আটক করেছে এবং ১৫ জনকে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যূত করেছে, বিষয়টির সাথে পরিচিত বেনামী সূত্রের বরাত দিয়েমার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
ডব্লিউএসজে একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘সেনাবাহিনী থেকে ওয়াগনারের প্রতি সহানুভূতিশীলদের উৎখাতের জন্য এসব কর্মকর্তাদের আটক বা বরখাস্ত করা হয়েছে, যাদেরকে আর বিশ্বাস করা যায় না।’ প্রকাশনা লিখেছে, বেশ কয়েকজন আটক কর্মকর্তার ওয়াগনারের সাথে সম্পর্ক ছিল। ডব্লিউএসজে দ্য মস্কো টাইমসের রাশিয়ান পরিষেবার রিপোর্টিং নিশ্চিত করেছে যে, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদস্থ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনকে আটক করা হয়েছে। দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস, ব্লুমবার্গ এবং রাশিয়ার স্বাধীন অনুসন্ধানী আউটলেট আইস্টোরিস অনুরূপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়ে যে, সুরোভিকিনকে হয় আটক করা হয়েছিল বা শুধুমাত্র জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এবং পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
ওয়াগনারের ২৩-২৪ জুনের বিদ্রোহের প্রায় তিন সপ্তাহ পরেও সুরভিকিনের হদিস এখনও অজানা। ডব্লিউএসজে-এর সূত্র জানায় যে, সুরোভিকিনকে ‘পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ’ করা হচ্ছে এবং তাকে আটক কেন্দ্রে রাখা হয়নি - যেখানে রাশিয়ান কারাগারের মনিটররা জেনারেলকে সনাক্ত করতে অক্ষম হয়েছে। সংবাদপত্রটি লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘কীভাবে বিদ্রোহের ফলাফলকে পরিচালনা করবেন তা সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে সুরোভিকিনকে মুক্তি দেয়া হতে পারে’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিখাইল মিজিনসেভ, লজিস্টিকসের দায়িত্বে থাকা সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী যিনি ওয়াগনারকে অপসারণের পর এপ্রিলে যোগদান করেছিলেন, আটকদের মধ্যে ছিলেন। সুরভকিনের ডেপুটি আন্দ্রেই ইউদিন এবং সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের উপপ্রধান ভøাদিমির আলেক্সিয়েভকেও আটক করা হয়েছে এবং তাদের মুক্তির পরে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্রেমলিন বা রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কেউই মন্তব্যের জন্য ডব্লিউএসজে-এর অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
‘বিদ্রোহী’ প্রিগোজিনকে খুন করিয়েছেন পুতিন? ইঙ্গিত মার্কিন জেনারেলের : ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান রুশ অলিগার্ক ইয়েভজেনি প্রিগোজিনকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের নির্দেশে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। আমেরিকা সেনার প্রাক্তন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জেনারেল রবার্ট আব্রাম বৃহস্পতিবার এই ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আর কখনও প্রিগোজিনকে প্রকাশ্যে দেখা যাবে কি না, সে বিষয়ে আমার গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।’
গত বছর কিয়েভ, ডনবাস-সহ ইউক্রেনের একাধিক অঞ্চল দখলের গুরুদায়িত্ব তারই বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু রুশ ধনকুবের প্রিগোজিনের ভাড়াটে যোদ্ধাগোষ্ঠী ওয়াগনারের ‘বন্দুকের নল’ গত মাসে ঘুরে যায় পুতিনেরই দিকে। রুশ প্রেসিডেন্ট সেই ‘বিদ্রোহ’ সফল ভাবে মোকাবিলার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল প্রিগোজিনের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে। গত কয়েক দিন ধরে তার নিখোঁজ থাকার ঘটনায় এ বার নতুন জল্পনা ছড়িয়েছে। তবে জেনারেল আব্রামের ধারণা, এখনও প্রিগোজিনের বেঁচে থাকার সম্ভবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘এমনও হতে পারে, গোপন জেলখানায় বন্দি রাখা হয়েছে ওয়াগনার প্রধানকে।’
জুন মাসে ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেন সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকার দখল নিয়েছিল। এর পর তারা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উদ্দেশে অভিযান শুরু করে। কিন্তু সে সময় পুতিন দ্রুত নিজের অনুগত রুশ সেনাকে সামনে রেখে ‘বিদ্রোহীদের’ নিরস্ত করেছিলেন। প্রিগোজিন সে সময় রাশিয়া থেকে বেলারুশে চলে গিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল। পুতিন ঘনিষ্ঠ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দাবি করেছিলেন, তিনিই মস্কোর সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনীর সমঝোতা করিয়েছেন।
আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি তরফে সে সময় শোনা গিয়েছিল, সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী প্রিগোজিনকে বেলারুশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ লুকাশেঙ্কো দাবি করেন, তার দেশে প্রিগোজিন নেই। ক্রেমলিনের তরফেও জানানো হয়, ওয়াগনার প্রধান কোথায় তারা জানে না। প্রিগোজিন বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে জেনারেল রবার্টের বক্তব্যে ধোঁয়াশা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি, আমেরিকার সামরিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর জি স্টাডি অফ ওয়ার’ মঙ্গলবার দাবি করেছে, ক্রমশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা প্রিগোজিনকে ফাঁদে ফেলতেই ওয়াগনার যোদ্ধাদের একাংশের সাহায্যে ‘বিদ্রোহের চিত্রনাট্য’ তৈরি করেছিলেন পুতিন!
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিস্তৃত পরিসরে অস্ত্র রয়েছে রাশিয়ার : নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার হাতে বিস্তৃত অস্ত্র রয়েছে, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো রাশিয়ার চ্যানেল ওয়ানকে বলেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বিগ গেম টিভি শো চলাকালীন, কূটনীতিক বাল্টিক অঞ্চলের পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, যা সম্প্রতি পর্যন্ত ইউরোপের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ অঞ্চল ছিল।
‘প্রথমে, তারা (ন্যাটো০ সেখানে আকাশপথে টহল দেয়ার জন্য চারটি বিমান মোতায়েন করেছিল,...তারপরে তাদের এক ডজন। তারপর তারা গুদাম তৈরি করে, অবকাঠামোর বিকাশ অব্যাহত রাখে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ কৌশলগত দল মোতায়েন করেছিল,’ গ্রুশকো বলেন, ‘এখন তারা এই ব্যাটালিয়ন আকারের গ্রুপগুলিকে ব্রিগেড দিয়ে প্রতিস্থাপন করার বিষয়ে আলোচনা করছে, তাই বাল্টিক অঞ্চল এবং পোল্যান্ডের অঞ্চলে তিনটি ব্রিগেড থাকবে।’ ‘এটি এ অঞ্চলের সমগ্র পরিস্থিতির একটি কঠোর পরিবর্তন, এবং এর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ সামরিক-প্রযুক্তিগত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন,’ তিনি বলেছিলেন, ‘এটি একটি ভাল জিনিস যে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের সম্পূর্ণ পরিসর আমাদের হাতে রয়েছে।’ ‘এটি একটি অসমমিত প্রতিক্রিয়া হবে। তবে আমাদের সম্পদ বিতরণের কোন উপায়টি সর্বোত্তম তা সিদ্ধান্ত নেয়া সামরিক বাহিনীর উপর নির্ভর করে,’ গ্রুশকো যোগ করেছেন।
জাপোরোজিয়েতে ইউক্রেনের গোলাবারুদ ডিপো ধ্বংস : রাশিয়ান সৈন্যরা জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের পিয়াতিখাটকি গ্রামের কাছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি গোলাবারুদ ডিপো ধ্বংস করেছে এবং এ অঞ্চলে একটি শত্রু কামিকাজে ড্রোন গুলি করেছে। রাশিয়ান সেনাবাহিনীর স্টর্ম জেড ব্যাটালিয়নের কমান্ডার আলী (কল সাইন) তাসকে বলেছেন।
‘জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের পিয়াতিখাটকির জনবহুল এলাকার কাছে, রাশিয়ান সৈন্যরা ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি গোলাবারুদ ডিপো ধ্বংস করেছে এবং প্রতিপক্ষের একটি কামিকাজে ড্রোনকে গুলি করে নামিয়েছে।’ স্টর্ম জেড কমান্ডার বলেছেন যে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী এই সপ্তাহের শুরুতে জাপোরোজিয়ে এলাকায় পাঁচটি লেপার্ড ট্যাঙ্ক এবং আটটি ব্র্যাডলি পদাতিক যুদ্ধের যান সহ ২০০ জনেরও বেশি সৈন্য এবং ২০টিরও বেশি ভারী ট্যাঙ্ক হারিয়েছে। সূত্র : এপি, তাস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আলবেনিয়ায় ভুয়া ভিসার নামে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও
ধামরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
ঢাকা মহানগর মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবক আহত
কুমিল্লা জজকোর্টের ৩ পিপি-এপিপিকে সংবর্ধনা
চুয়াডাঙ্গার রেলস্টেশন এলাকা থেকে ১৪টি অবৈধ স্বর্ণেরবার উদ্ধার, আটক ৩
জাহাজে ৭ খুনের ঘটনার দ্রুত সুরাহা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘ছাত্র-জনতা সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়েছে’
পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই
‘ট্রানজিটের নামে দিল্লিকে দেয়া করিডর জনগণ মেনে নেয়নি’
বদলির ৩ মাস পরই পূর্বের কর্মস্থলে ফিরলেন শরীয়তপুরে সদর হাসপাতালের ক্যাশিয়ার বজলুর রশিদ
বগুড়ায় যথাযথ মর্যাদায় বড়দিন পালন
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই