প্রশাসনে বাড়ছে ক্ষোভ
১৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রশাসনে দলবাজ কর্মকর্তার জয়জয়কার। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হলেও দলবাজির কারণে পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র (পদোন্নতি না পাওয়া) কর্মকর্তাদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছেন। পদের কারণে জুনিয়রদের আদেশ-নির্দেশ পালন করতে হচ্ছে সিনিয়রদের। এতে পদোন্নতি বঞ্ছিত সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বাড়ছে। জানা গেছে, নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে নতুন করে ২৮ জন দলবাজকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান ইনকিলাবকে বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা দলবাজ হওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে সিনিয়রদের কাজ করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মতারা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। দায়িত্ব পালনে অনীহার সৃষ্টি হয়। এতে প্রশাসনের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।
প্রশাসনে জুনিয়ার কর্মকর্তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছেন সিনিয়র কর্মকর্তারা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা হচ্ছেন এক ও দুই ব্যাচের জুনিয়র। অথচ তাদের অধিনস্থ অধিদপ্তরের ডিজি এবং মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিবরা সরকারের গুরুত্বর্পূণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন সিনিয়র কর্মকর্তারা। সিনিয়র কর্মকর্তারা পদোন্নতি না পাওয়ার কারণে প্রশাসনে ক্ষোভ বাড়ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব কামরুল হাসান ১১ ব্যাচের কর্মকর্তা হলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. মিজানুর রহমান নবম ব্যাচের কর্মকর্তা।
এদিকে প্রশাসনে যুগ্মসচিবের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৪৩০। বর্তমানে কর্মরত আছেন ১ হাজার ১১৩ জন। এ অবস্থায় আরও ৫৫০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শূন্যপদ না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অধিকাংশকে ইনসিটু রাখা হবে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২ নভেম্বর ১৭৫ জনকে যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এছাড়া উপসচিব পর্যায়ে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৮৩০। কর্মরত আছেন ১ হাজার ৩১৫ জন। এ পদেও পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে প্রশাসনে শূন্যপদ না থাকলেও যুগ্মসচিব ও উপসচিব পদে বড় ধরণের পদোন্নতি। আগে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি হবে। এজন্য সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) কয়েকটি সভা হয়েছে। আরও কমপক্ষে একটি সভায় এ পদোন্নতি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, প্রশাসনে একাধিক ব্যাচের কর্মকর্তা কাজ করেন। ব্যাচের সবাই পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন না। অনেক কর্মকর্তার বিভাগীয় মামলাসহ নানা কারণে অনেকে পদোন্নতি হয় না।
প্রশাসনে উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব করার জন্য নিয়মিত হিসাবে বিসিএস ২২তম ব্যাচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ২৮২ জন। নিয়মিত ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাচের বঞ্চিত আরও ৭৬ কর্মকর্তার নাম যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮তম ব্যাচের ৬ জন, ২০তম ব্যাচের ৪১ এবং ২১তম ব্যাচের ২৯ জন এ তালিকা রয়েচে। প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের ২০৭ কর্মকর্তার নামও পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়েছে। সবমিলিয়ে সংখ্যা অনেক ৫৬৫ জন। তবে শেষ পর্যন্ত সব যাচাই-বাছই শেষে ২৩০ থেকে ২৩৫ জনের পদোন্নতি হতে পারে। বাকিরা পদোন্নতি থেকে বাদ পড়তে পারেন।, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্র ২৮২ জন। এর মধ্যে ২৪৩ জন প্রশাসন ক্যাডারের এবং ইকোনমিক ক্যাডার থেকে একীভূত হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে এসেছেন ৩৯ জন। অপরদিকে উপসচিব পদে ২৯ ব্যাচের তথ্য নিয়ে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ব্যাচের কর্মকর্তাদের যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের এ ব্যাচে কর্মকর্তা ১৮৯ জন। এছাড়া উপসচিব পদে বিভিন্ন ব্যাচের পদোন্নতিবঞ্চিতদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। উপসচিব পদে পদোন্নতি চূড়ান্ত করতে আরও সময় লাগতে পারে।
প্রশাসনে পদোন্নতির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব আর সদস্যসচিব জনপ্রশাসন সচিব। সদস্যরা হলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, অর্থসচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব এবং কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল। পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, শৃঙ্খলা, দুর্নীতিসহ সামগ্রিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সুপারিশ দেয় এসএসবি। সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এসিআরের মন্তব্য, ভাবমূর্তি, কর্মদক্ষতা ও সরকারের প্রতি আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন এসএসবির একাধিক সদস্য।
এ ছাড়া কর্মকর্তার রাজনৈতিক মতাদর্শ, নিকটাত্মীয়দের কেউ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী কি না, তা-ও বিবেচনায় নেওয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় এসএসবির কোনো সদস্যের আস্থাভাজন হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। তবে সচিব হতে হলে অবশ্যই সরকার প্রধানের সম্মতি থাকতে হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে দুই থেকে তিন ব্যাচ জুনিয়র সচিবের অধীনে দপ্তরপ্রধান হিসেবে কাজ করছেন অনেক কর্মকর্তা। কিছু মন্ত্রণালয়ে সচিবের সিনিয়র কর্মকর্তা আছেন অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় পদবিযুগ্মসচিব (উন্নয়ন) ড. মো. রফিকুল ইসলাম খান সিনিয়র আর তার সচিব হচ্ছেন জুনিয়র। স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান বিসিএস ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা। তাঁর বিভাগের অধীনস্থ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) সাহান আরা বানু নবম ব্যাচের। অর্থাৎ মহাপরিচালকের চার ব্যাচ জুনিয়র হলেন সচিব। একইভাবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) ড. মুশফিকুর রহমানও ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা। তাঁর অধীনে একই দপ্তরে মহাপরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) পদে আছেন তিন ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তা প্রণব কুমার ঘোষ। সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনিক কারণেই তাঁদের নানা দিকনির্দেশনা দেন জুনিয়র কর্মকর্তারা। এছাড়াও প্রশাসনে ডজন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এমন কর্মকর্তা বিদ্যমান রয়েছে। ব্যাচ বিবেচনায় জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে কাজ করা নিয়ে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোর নিয়মিত বৈঠক ও আন্তমন্ত্রণালয় সভায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বিসিএস একাদশ ব্যাচের। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সচিবের ছয় ব্যাচ সিনিয়র। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীনও সচিবের সিনিয়র। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে সচিব মশিউর রহমানের তিন ব্যাচ সিনিয়র পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) এমডি মুহম্মদ মউদুদুর রশীদ সফদার। বস্ত্র ও পাট রসচিব আব্দুর রউফ একাদশ ব্যাচের হলেও তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী নবম এবং পাট অধিদপ্তরের ডিজি ড. সেলিনা আক্তার দশম ব্যাচের। শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা দশম ব্যাচের। চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) আরিফুর রহমান অষ্টম ব্যাচের।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের ডিজি ফরিদা পারভীন অষ্টম ব্যাচের। একইভাবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলম ত্রয়োদশ ব্যাচের হলেও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের ডিজি (গ্রেড-১) এ কে এম হুমায়ুন কবীর এবং অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দশম ব্যাচের। এ ধরনের নজির আরও আছে। খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন একাদশ ব্যাচের হলেও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. শাখাওয়াত হোসেন দশম ব্যাচের। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব কামরুল হাসান ১১ ব্যাচের কর্মকর্তা হলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. মিজানুর রহমান নবম ব্যাচের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধিদপ্তরে ডিজি ইনকিলাবকে বলেন, দুই ব্যাচ জুনিয়র যখন সচিব করা হয়। তখন মনে হয়েছিল চাকরি ছেড়ে দেই। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে পরিচিতি সভায় নতুন সচিব সবার সামনে তাকে অত্যন্ত সম্মান জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুস সবুর মন্ডল ইনকিলাবকে এসএসবির বেশ কয়েকটি সভা হয়েছে। আরো দু-একটি সভা হতে পারে। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি হচ্ছে। তা চূড়ান্ত হয়ে আছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে নিখোঁজ দুই কিশোরের মরদেহ উদ্বার
পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ড্রোন হামলা, নারীসহ ৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় নয়: আসিফ মাহমুদ
ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু
অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
হাসিনাকে ভারত কি ফেরত পাঠাবে, আলজাজিরার প্রতিবেদন কি বলছে
সচিবালয়ে সেনাবাহিনী-বিজিবি মোতায়েন
কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?
সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ
সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই