প্রতিস্থাপন হয় ভারতের হাসপাতালে চার বছরে অর্ধশতাধিক কিডনি বিক্রি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২০ জুলাই ২০২৩, ১১:০৫ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম

প্রথম ঘটনাটি ২০১৯ সালের। আর্থিক অনটনে নিজের একটা কিডনি বেঁচে দেন আনিছুর রহমান। এজন্য তিন ভুয়া কাগজপত্রে ভারতে যান। নিজে কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে দেখেন ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যাপক চাহিদা। প্রলুব্ধ হয়ে দেশে ফিরে নিজেই নামেন কিডনি বেচাকেনার অবৈধ ব্যবসায়। এজন্য ভারতের কিডনি কেনাবেচার চক্রের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন একটি দালাল চক্র। অনলাইনে বিত্তশালী কিডনিরোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহ করে বৈধ ও অবৈধভাবে বিমানে বা স্থলপথে ভারতে পাঠাতেন তিনি। তার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি কিডনি কেনাবেচা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ। এ চক্রের ম‚লহোতা মো. আনিছুর রহমানসহ জড়িত পাঁচজনকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, আরিফুল ইসলাম ওরফে রাজিব, সালাউদ্দিন তুহিন, এনামুল হোসেন পারভেজ এবং সাইফুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে করা চুক্তির এফিডেভিট কপি উদ্ধার করা হয়েছে।

লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে সর্বহারা হচ্ছে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ। বিদেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রেতা জীবন বাঁচাতে ৪৫-৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি কিনেন। অথচ ওই টাকার ৪-৫ লাখ টাকা পায় প্রতারিত ডোনার। ৫-১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট এবং অন্যান্য প্রতারকদের মধ্যে। বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা পায় বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচার সিন্ডিকেট। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে ওই চক্র। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই, এমন মিথ্যা আশ্বাস দেয়। টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মণ্য হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে অসহায় মানুষগুলো।

চক্রটি চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। প্রথম গ্রæপ বিদেশে অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। ম‚লহোতা আনিছুর ঢাকায় বসে বিদেশে ডোনার পাঠানোর বিষয় তদারকি করে। চক্রের তৃতীয় দলটির সদস্য আরিফ এবং তুহিন প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এখানে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে বøাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। চতুর্থ গ্রæপটির হোতা ‘সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের’ মালিক সাইফুল ইসলাম প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারাকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

মোস্তাক আহমেদ বলেন, দেশের অভ্যন্তরে তারা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি বেচাকেনা নিয়ে কাজ করছিল। চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কিডনি নিয়েছে। এসব চক্র মোবাইলফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার কাজ করে আসছে। তারা একেক জনের সঙ্গে একেক ধরনের চুক্তি করে কিডনি প্রতিস্থাপন করতো। সেই টাকা কীভাবে ভাগ হতো? এমন প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাক আহমেদ বলেন, জানা গেছে- প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ টাকা চুক্তি হতো। সেই টাকার মধ্যে যিনি কিডনি দিতেন তিনি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেতেন। বাকি টাকা চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে বণ্টন হতো।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ফ্যাসিস্টের দোসর মহিববুর ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২ মামলা
উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতই সরকারের লক্ষ্য : রিজওয়ানা হাসান
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
রাহাত ফতেহ আলী খানের সম্মানে পাকিস্তান হাইকমিশনারের নৈশভোজ আয়োজন
এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি
আরও

আরও পড়ুন

শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা জনজীবন স্থবির

শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা জনজীবন স্থবির

খুবির নির্মাণকাজের গুণগতমান নিশ্চিত ও তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ উপাচার্যের

খুবির নির্মাণকাজের গুণগতমান নিশ্চিত ও তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ উপাচার্যের

নওগাঁ শহরের দেয়াল থেকে মুছে ফেলা হলো জয়  বাংলা

নওগাঁ শহরের দেয়াল থেকে মুছে ফেলা হলো জয় বাংলা

জাহাজে ছিল ৫ জনের লাশ, হাসপাতালে মারা গেলেন আরও ২ জন

জাহাজে ছিল ৫ জনের লাশ, হাসপাতালে মারা গেলেন আরও ২ জন

বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালইজড হাসপাতালে পুনরায় শুরু হলো বহুল প্রতীক্ষিত কিডনি প্রতিস্থাপন

বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালইজড হাসপাতালে পুনরায় শুরু হলো বহুল প্রতীক্ষিত কিডনি প্রতিস্থাপন

নওগাঁয় নতুন পুলিশ সুপার সাফিউলের  দায়িত্বভার গ্রহণ

নওগাঁয় নতুন পুলিশ সুপার সাফিউলের দায়িত্বভার গ্রহণ

দু’জনের ওপর ১২ কোটি মানুষের তথ্য সুরক্ষা কতটা যৌক্তিক: এনসিএসএ মহাপরিচালক

দু’জনের ওপর ১২ কোটি মানুষের তথ্য সুরক্ষা কতটা যৌক্তিক: এনসিএসএ মহাপরিচালক

ফ্যাসিস্টের দোসর মহিববুর ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২ মামলা

ফ্যাসিস্টের দোসর মহিববুর ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২ মামলা

নোয়াখালীর আমিশাপাড়াতে এনআরবিসি ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু

নোয়াখালীর আমিশাপাড়াতে এনআরবিসি ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু

নিউজিল্যান্ড দলে নতুন মুখ জ্যাকবস

নিউজিল্যান্ড দলে নতুন মুখ জ্যাকবস

জালিয়াতির নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের বেতন-ভাতা  ফেরত নেয়ার দাবি তুলেছে ‘সিলটি পাঞ্চায়িতের

জালিয়াতির নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের বেতন-ভাতা  ফেরত নেয়ার দাবি তুলেছে ‘সিলটি পাঞ্চায়িতের

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

বার্মিংহামের সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টারে কাতারের ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন

বার্মিংহামের সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টারে কাতারের ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন

উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতই সরকারের লক্ষ্য : রিজওয়ানা হাসান

উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতই সরকারের লক্ষ্য : রিজওয়ানা হাসান

খুঁটির জোর কোথায়?  আওয়ামী ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজ করে বিল নেয়ার অভিযোগ!

খুঁটির জোর কোথায়?  আওয়ামী ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজ করে বিল নেয়ার অভিযোগ!

দুমকী উপজেলা জমিয়তে হিজবুল্লাহ সভাপতির ইন্তেকাল

দুমকী উপজেলা জমিয়তে হিজবুল্লাহ সভাপতির ইন্তেকাল

সাদপন্থীদের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ

সাদপন্থীদের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ

মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিক গোপাল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিক গোপাল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছাগলনাইয়ায় ফসলি জমির মাটি কাটায় দুইটি এক্সেভেটর জব্দ

ছাগলনাইয়ায় ফসলি জমির মাটি কাটায় দুইটি এক্সেভেটর জব্দ

আব্দুল্লাহ শফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

আব্দুল্লাহ শফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড