এডিস মশার উপদ্রব আল্লাহর অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ
২১ জুলাই ২০২৩, ১১:৪২ পিএম | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত গজব ও আজাব থেকে নিজেদের রক্ষা করার নিমিত্তে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকারের পাশাপাশি বেশি বেশি ইবাদাত বন্দেগি ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। গুনাহ থেকে নিজেদের রক্ষার মাধ্যমে দুনিয়াবি আজাব ও আখিরাতের চিরস্থায়ী শাস্তি থেকে সর্বদা আল্লাহর নিকট পানাহ্ চাইতে হবে। ব্যক্তি থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকল ধরনের গুনাহ্ তথা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল আইন ও নীতি হবে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী। তাহলেই আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের মাধ্যমে আজাব ও গজব থেকে পরিত্রাণ পাব। গতকাল মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব মুফতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীতে কেন আজাব ও গজব প্রেরণ করেন সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করে আমাদের সতর্ক করেছেন, কিন্তু আমরা এ বিষয়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ভুলতে বসেছি। ক্রমান্বয়ে আমরা পবিত্র কোরআনের শিক্ষাকে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখছি। এমন কার্যকলাপের ফলেই একের পর এক আজাবের মধ্যে নিপতিত হচ্ছি আমরা। মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হতে হতে যখন সীমা অতিক্রান্ত করে, তখনই আল্লাহর তরফ থেকে শাস্তি নাজিল হয়। মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বালা-মুসবিত ক্রমশ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে, পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিণামে তিনি কৃতকর্মের শাস্তির স্বাদ তাদের ভোগ করাবেন, যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে (সূরা আর রুম : ৪১)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণেই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করে থাকেন (সূরা আশ শুরা : ৩০)। খতিব বলেন, বর্তমানে এডিস মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই শত শত মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। আপাত দৃষ্টিতে এটি একটি ভাইরাস হলেও নিঃসন্দেহে ইহা আল্লাহর অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ। তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ থেকে প্রেরিত গজব। যেমনিভাবে হযরত মুসা (আ.)-এর সময়ে ফেরআউনের কওমদের প্রতি আল্লাহ মশা, ব্যাঙ, পঙ্গপালের মাধ্যমে গজব নাজিল করেছিলেন। ঠিক তেমনি একটি গজব এডিস মশা। বিজ্ঞানের যুগে এসে হয়তো অনেকেই এসকল বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজবে, আল্লাহর আজাব ও গজবকে শুধুমাত্র প্রকৃতির বিরূপ আচরণ হিসেবে বিশ্লেষণ করবে। কিন্তু একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে আমাদের এই বিশ্বাস থাকতে হবে যে, নিশ্চয়ই এসব আল্লাহর ক্রুধের ফলে প্রেরিত আজাব। সময় থাকতে যদি ফিরে না আসি, নিজেদের সংশোধন না করি তাহলে অচিরেই আল্লাহর তরফ থেকে আরো ভয়াবহ শাস্তি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বর্ষার মৌসূমেও কেন অনাবৃষ্টি? তীব্র খড়ায় কেন ফসল নষ্ট হচ্ছে? রফতানি জাত ফসল বিনষ্ট কেনই বা হচ্ছে? মানুষের জীবন কেন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে? এসকল প্রশ্নের কেবল একটিই জবাব, আর তা হলো ক্রমশ আমরা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, যার ফলে নেয়াম থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ আল্লাহর রহমত কি না করতে পারে, হযরত মুসা (আ.)-এর কওম যখন তৃষ্ণার্থ ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় মরুময় প্রান্তরে প্রাণ হারানোর উপক্রম হয়েছিল, তখন আল্লাহর নির্দেশে কিভাবে পাথরের ভেতর থেকে বারটি সুপেয় পানির নহর প্রবাহিত হয়েছিল, দুনিয়ায় বসে মান্না ও সালওয়া নামক জান্নাতি খাবারের স্বাদ উপভোগ করিয়ে তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন যে, আল্লাহর ওপর ভরসা করলে তিনি কোনো না কোনোভাবে মানুষকে হেফাজত করেন। অপর দিকে আল্লাহর নাফরমানি করলে যতই নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকুক না কেন, যতটাই স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুক না কেন আজাব ও গজব থেকে পরিত্রাণের কোনোই উপায় নেই। সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। কেননা শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দেন আর না করলে ধীরে ধীরে বিপর্যয়ের চূড়া পৌঁছায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাপাক ইরশাদ করেন, আল্লাহ (উপদেশের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার জন্য) উদাহরণ দিচ্ছেন একটি জনপদের, (যার অধিবাসীরা) ছিল পুরোপুরি নিরাপদ, প্রশান্ত ও নিশ্চিন্ত। সেখানে সব দিক থেকে সহজেই তাদের জন্য আসত প্রচুর জীবিকা। এরপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। ফলে তারা যা করত সে কারণে আল্লাহ শাস্তি হিসেবে তাদের স্বাদ আস্বাদন করালেন, ক্ষুধা ও ভীতির (সূরা নাহল :১১২)। অপর এক সূরায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তোমার পূর্বে আমি অনেক জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি, কিন্তু তাদের অবাধ্যতার কারণে) অভাব অনটন আর দুঃখ-ক্লেশ দিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা বিনীত হয়। আমার শাস্তি যখন তাদের ওপর পড়ল তখন তারা বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করল না কেন? বরং তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেল, আর তারা যা করছিল শয়তান সেগুলোকে তাদের জন্য (খুব ভাল কাজ হিসেবে) সুশোভিত করে দিয়েছিল। তাদেরকে যে নসিহত করা হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন আমি তাদের জন্য যাবতীয় নিয়ামতের দরজা খুলে দিলাম; পরিশেষে, তাদেরকে যা দেয়া হলো তাতে তারা যখন আনন্দে মেতে উঠল, হঠাৎ করে তাদেরকে ধরে বসলাম। তখন (যাবতীয় কল্যাণ থেকে) তারা নিরাশ হয়ে গেল (সূরা আনআম : ৪২,৪৩,৪৪)। এসকল আয়াতসমূহের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্তির পরও যদি শুকরিয়া আদায় না করে উপরোন্ত গুনাহে লিপ্ত হয় তাহলে কতটা ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। বর্তমানে দৃশ্যমান প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ আমাদের গুনাহের দরুণ সংগঠিত হচ্ছে। দুনিয়াব্যাপী নানামুখী পাপাচারে সয়লাব। যখন আল্লাহর গজব ও আজাবের সম্মুখীন হই কেবল তখনই আমরা তাঁকে (আল্লাহকে) স্মরণ করি পরক্ষণে বিপদ কেটে গেলে আবার নাফরমানিতে লিপ্ত হই। এতে আল্লাহর ক্রোধ আরো বৃদ্ধি পায়। তাই আসুন নিজেদের গুনাহের জন্য আল্লাহর নিকট ইস্তেগফারের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করি। ইবাদাত বন্দেগির মাধ্যমে কলবকে পরিশুদ্ধ করি। সমাজকে গুনাহমুক্তকরণে সর্বদা সচেষ্ট থাকি। কেননা কেবল সৎ কাজ করলেই দায়িত্ব শেষ নয়, পাশাপাশি অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদানও ইমানী দায়িত্ব। সর্বপরি আল্লার ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলি। এর মাধ্যমে আমরা সকল ধরনের বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পেতে পারি। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, বিশ্ববাসীর জন্য হিজরি-১৪৪৫ সন হোক পাপ পঙ্কিল মুক্ত অনাবিল শান্তিময়। প্রতিটি মুসলিম মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে হোক ধন্য। পুণ্য পবিত্র ও সাচ্ছন্দময় হয়ে উঠুক সমস্ত মুমিন মুসলমানের জীবন। পবিত্র মুহাররমের মহিমায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক পারস্পরিক কলহ দ্বন্দ্ব, বিরোধ-বিবাদ, মারামারি-হানাহানি, সন্ত্রাসী-রাহাজানি, জুলুম-অত্যাচারসহ সর্বপ্রকার অপরাধ-অশান্তি। স্বর্গীয় বাতাস প্রবাহিত হোক ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। আর এই প্রত্যাশা পূরণে সকল শান্তিপ্রিয় মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসুক জোর কদমে। মহান আল্লাহর বিধান পালনে হউক সবাই আত্মপ্রত্যয়ী। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ্র রশ্মি (বিধান)কে মজবুত ভাবে আকঁড়ে ধর। পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। ( আল কোরআন )। তাই আরবি হিজরি সনের ১২ মাসের প্রথম মাস ‘মুহাররম’ থেকেই প্রত্যেকে নিজেকে অন্যায় অপরাধমুলক গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকি। একজন মুসলিম হিসেবে নিজের ইমান-আকিদা সংরক্ষণ, ফরজ ইবাদাতের পাশাপাশি এই পবিত্র মুহাররম মাসে আরও নফল ইবাদাত, আশুরার রোজা ও অধিক পরিমাণে তওবা ইস্তিগফারে সময় অতিবাহিত করি। সম্মানিত মাস মুহাররমসহ সারা বছর অনৈসলামি কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকি। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে তাওফিক দান করেন ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস