ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
জাপানি বিনিয়োগ

কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে বাংলাদেশে

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৭ পিএম

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি ডিসেম্বরে : উতোশি নিশিমুরা
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বহুদিনের। ইতোমধ্যেই জাপান অনেক বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশে। এখন কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বাণিজ্যিক বন্দর করতে যাচ্ছে। জাপান বাংলাদেশে শিল্পায়ন বৃদ্ধি খুশির খবর কিন্তু সে শিল্পায়ন এবং উৎপাদন যদি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭ রাজ্য, নেপাল, ভুটানের বাজারজাতের জন্য হয় সেটা বিড়ম্বনার। কারণ বাংলাদেশের ভ‚মি অন্য কোনো দেশের ব্যবসায়ীক স্বার্থে ব্যবহৃত হবে এটা অপ্রত্যাশিত। দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরা বলছেন, জাপান মাতারবাড়ি শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন বাংলাদেশের জন্যই করতে হবে। বাংলাদেশের এতো বিপুল ভ‚মি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ যাতে লাভবান হয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা না হলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা সার্বভৌম দেশের জনগণ মেনে নেবে না। কারণ বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশের হাতের পুতুল হতে পারে না।

জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ চীনা বিনিয়োগের সাথে একটা ভারসাম্য তৈরি করবে। যেটা বৈদেশিক সম্পর্কের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে শুধু ডিপ সি পোর্ট নয়, তারা যেন এখানে শিল্পও গড়ে তোলে এবং বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু যেন বাংলাদেশই হয় বলে উল্লেখ করেন এই ক‚টনীতিক।

স্বাধীনতার পর থেকে জাপান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশর পরীক্ষিত বন্ধু দেশ। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করে দ্বিপাক্ষিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা ও কয়েকটি চুক্তিও করেছেন। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশ-জাপান বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে। একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) করার অপেক্ষায় আছি। অবশ্য জাপানে বসবাসকারী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে ফলপ্রসূ আলোচনা ও চুক্তি হলেও জাপান সরকার যেভাবে বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে। এর আগে গত মার্চে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ভারত সফর করে দেশটির বাজারকে টার্গেট করে বাংলাদেশে বড় ধরনের জাপানি বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। এরপর বাংলাদেশে ১২৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে জাপান সরকার। জাপানের বিনিয়োগ পরিকল্পনার মধ্যে ছিলÑ বাংলাদেশে একটি শিল্পাঞ্চল তৈরি। পাশাপাশি বন্দর তৈরিতেও বিনিয়োগ করা। শিল্পাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য তারা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানে বাজারজাত করবে। আর এজন্য তারা যোগাযোগ অবকাঠামোও গড়ে তুলবে। জাপান ১৩০ কোটি মানুষের আবাসস্থল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বঙ্গোপসাগর এলাকায় উন্নয়নে নজর দেবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে জাপান, যার মধ্যে আছে মাতারবাড়ি এলাকায় নতুন একটি বাণিজ্যিক বন্দর। এই বন্দরের সঙ্গে ত্রিপুরাসহ ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল সংযুক্ত হবে। তবে এই বন্দরের মাধ্যমে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বাজার ধরাই লক্ষ্য জাপানের। ওই বৈঠকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি জাপানের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির বিষয়টিকে আগামী বাংলাদেশের সঙ্গে চলতি বছরে স্বাক্ষরের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা সফররত জাপানের অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী উতোশি নিশিমুরা। তিনি বলেছেন, এলডিসি তালিকা থেকে বের হওয়ার আগেই ইপিএ চুক্তি হলে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে না। এখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ছে, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানের অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেছেন। অনেক পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে আমাদের মধ্যে। আমরা যমুনা সেতু, বিমানবন্দরসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগী। বাণিজ্য প্রসঙ্গে উতোশি নিশিমুরা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও ডিপ্লোমেসি বেড়েছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বাড়ছে। আগামী ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও আইসিটি খাতের উন্নয়ন বাড়াতে হবে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ অবশ্যই আমাদের জন্য সুখবর। তবে তা যেন ভারতের স্বার্থে বা ভারতকে লক্ষ্য করে না হয়।

সূত্র মতে, ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে জাপান সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দেশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতি ঘোষণা করেছিল। চীনে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, ‘বৈশ্বিক কারখানা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠা দেশটিতে দক্ষ কর্মীর অভাব ও সেখানে জাপানি বিনিয়োগকারীদের লাভের পরিমাণ কমে যাওয়ায় টোকিও এই উদ্যোগ নিয়েছিল। ‘চায়না প্লাস ওয়ান স্ট্র্যাটেজি’ এত ভালোভাবে কাজ করছে, বাংলাদেশ থেকে পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের চালান দ্রæত বেড়ে যায়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের চালান জাপানে ১৭৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ২০০৮ সালে জাপানের রিটেইল জায়ান্ট ফাস্ট রিটেইলিং তাদের ক্রেতাদের জন্য পোশাক নিতে ঢাকায় অফিস খোলে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপানে বাংলাদেশ প্রথম রপ্তানি করে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সূর্যোদয়ের দেশটি থেকে আয় ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই বছর রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। দীর্ঘদিন ধরে মানসম্পন্ন পণ্য ব্যবহার করে আসা জাপানের বাজারে রপ্তানির উচ্চতর প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের মান উন্নয়নের একটি প্রমাণ।

২০১৯-২০ সালে করোনা মহামারির সময়ও জাপানের বাজার বাংলাদেশিদের হতাশ করেনি। তখন বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে মারাত্মক সমস্যা সত্তে¡ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানে বাংলাদেশ ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। ২০২২-২৩ সালে দেশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৪০ দশমিক ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পায়। তখন রপ্তানি ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এর আগের অর্থবছরে তা ছিল ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাক রপ্তানি আরও বেড়ে যাওয়ায় আয় বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি আয় ১ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। দেশের পণ্য উৎপাদনকারীরা ২০৩০ সালের মধ্যে জাপান থেকে পোশাক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ১০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছেন। ২০১১ সালে জাপান রুলস অব অরিজিন শিথিল করে এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) থেকে নিটওয়্যার পণ্য আমদানিতে শুল্ক তুলে নেয়া শুরু করলে সেখানে পোশাকের চালান বেড়ে যায়। এটি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ স্বস্তিকর ছিল। কেননা, জাপান তার দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে অনেক বছর ধরে নিটওয়্যার পণ্যগুলোয় ১৭ শতাংশ শুল্ক দিয়ে রেখেছিল। তবে, ওভেন পণ্যগুলো দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে।

২০১৪ সালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক আসে। সে বছর জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ঢাকা সফর করে বাংলাদেশের জন্য ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট ইনিশিয়েটিভ’ চালু করেন।

সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোয় জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বিনিয়োগের উৎস হিসেবে সামনে এসেছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে জাপান থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বছরে ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় দেশে মোট এফডিআই ৩৮০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। মূলত তৈরি পোশাক, ইঞ্জিনিয়ারিং, কনস্ট্রাকশন, হেলথকেয়ার ও মোটরসাইকেল খাতে সরাসরি বিনিয়োগ এসেছে। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) তথ্য অনুসারে, এশিয়ায় জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, এটি এর মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। বর্তমানে প্রায় ৩৫০টি জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৪৫টি। সরকার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ডেডিকেটেড জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেট্রোর মতে, অটোমোবাইল, ভোগ্যপণ্য, আইটি, টেক্সটাইল ও রাসায়নিক খাতে জাপানি বিনিয়োগ আসবে। তবে চীন থেকে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রমাগত স্থানান্তরের ফলে বাংলাদেশ এখনো লাভবান হয়নি। ৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রায় ৩৩ হাজার ৫০টি জাপানি প্রতিষ্ঠান এশিয়াসহ অন্যান্য মহাদেশে যেতে শুরু করেছে। জেট্রোর জরিপ অনুসারে, ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ জাপানি প্রতিষ্ঠান আগামী ১ বা ২ বছরের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা অনেক বেশি। দেশটির ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। এটি এশিয়ায় সর্বোচ্চ।

জাপানে বসবাসকারী বাংলাদেশের ব্যবসায়ী বাদল চাকলাদার বলেছেন, জাপান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করে ওই দেশের অর্থনীতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। সেই সুযোগ বাংলাদেশরও রযেছে। তবে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ যেন হয় দেশের জন্য। অন্য কোনো দেশের স্বার্থে নয়। জেট্রোর জরিপে দেখা গেছে, উভয় দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রায় ৮৫ শতাংশ বাংলাদেশি ও জাপানি প্রতিষ্ঠান চায় তাদের নিজ নিজ সরকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই করুক। যাতে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশ শুল্ক সুবিধা পায়। যদিও একাধিক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বলছে, জাপানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা অন্যান্য দেশের পণ্যের কাছে বাংলাদেশি পণ্য গুরুত্ব হারাবে। কারণ, জিএসপির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক বাড়বে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।

এদিকে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-জাপান বাণিজ্যবিষয়ক সম্মেলনে ইপিএ চুক্তি চলতি বছরে স্বাক্ষরের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে এলডিসি তালিকা থেকে বের হওয়ার আগেই ইপিএ চুক্তি হলে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে না বলে উল্লেখ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ব্রিকসে বাংলাদেশ যোগ দিক বা না দিক; এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের বাণিজ্যিক সম্পর্কে যাতে ভাটা না পড়ে সেদিকে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাপান জি-৭ এর সদস্য, অন্যদিকে বাংলাদেশ আগস্টে ব্রিকসের সদস্য হতে পারে। তবে বাংলাদেশ যদি ব্রিকসের সদস্য হয় তাহলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে কী প্রভাব পড়বে এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটি মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। কিন্তু বাণিজ্যের জায়গা থেকে এ কথা হলফ করে বলা যায়, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের ভিত অনেক পুরোনো ও শক্তিশালী। কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের বাণিজ্যে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে; সেদিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা হবে।

দক্ষ জনশক্তির হাত ধরে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগোবে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের হাতে সম্পদ বলতে ছিল তাদের জনশক্তি। এর বাইরে জাপানের কিছুই ছিল না। সেই জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জাপান এতদূর এসেছে। এখান থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছু শেখার আছে।

জাপানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের বৃহৎ রফতানি বাজার জাপান। গত বছর জাপানে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করে উন্নয়নশীল দেশে উন্নত হবে। এক্ষেত্রে জাপানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে বিকাশমান একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হচ্ছে। এতে করে একদিকে বড় হচ্ছে ভোক্তা বাজার, অন্যদিকে বাড়ছে দক্ষ জনশক্তির সংখ্যা। জাপানের বিভিন্ন কোম্পানি চাইলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে।

‘আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশ-জাপানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও শিল্পের উন্নতি’ বিষয়ক এই সামিটের আয়োজন করে জেটরো। এ সময় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ূন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা এবং জেটরো প্রেসিডেন্ট কাজুশি নবুতানি বক্তব্য রাখেন।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে  ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস

এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,

এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার