চট্টগ্রামে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সভায় অভিমত

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া গ্রহণযোগ্য ভোট সম্ভব নয়

Daily Inqilab চট্টগ্রাম ব্যুরো

২৭ জুলাই ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

‘সরকার ক্ষমতায় থাকবে, প্রশাসন তাদের হাতে থাকবে, তারা রাতে হোক দিনে হোক ভোট করবে, আর অন্যদের কিছু সিট দেবে। আর বলবে তোমরা ভোটে আস, সেটা হয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য ভোট সম্ভব নয়।’ গতকাল নগরীতে এক আলোচনা সভায় এমন অভিমত উঠে আসে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে এ মতবিনিময় সভায় সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে সবার মতামত এসেছে। তবে ভোটের পদ্ধতি নিয়ে যথারীতি পরস্পরের বিরুদ্ধে মতও এসেছে।

সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি নিয়ে অনড় অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলাপের মাধ্যমে ভোটের পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। নগরীর মোটেল সৈকতে ‘দ্বৈত উত্তরণ: নির্বাচন ও উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় আসন্ন উত্তরণ- জনপ্রত্যাশা ও অংশীজনদের দায়িত্ব’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউএসএআইডি ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) এ সভার আয়োজন করে।

স্বাগত বক্তব্যে বিইআইর প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, শান্তিপূর্ণ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রয়োজন। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন খুবই জরুরি। মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু শান্তির জন্য আলোচনায় বসতে হবে। দেশ এখন যে পরিস্থিতিতে, তাতে সংঘাত কেউ চায় না। গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। সেটা ধরে রাখতে চাইলে শান্তির প্রয়োজন। অশান্তি শুধু অগ্রগতি থামায় না, সমাজকে ভেঙে দেয়। আমরা যথেষ্ট আত্মত্যাগ করেছি। আর বিধ্বংসী কিছুর প্রয়োজন নেই।

সভায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেউ ছিলেন না। মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মফিজুল হক ভূঁইয়া আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, গায়েবি মামলায় আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি। চট্টগ্রাম শহরে ১৬টি থানা। মামলা আছে ১ হাজার ২৭টি। আরো মামলা আছে। এসব মামলা প্রশাসন দিয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতো নেতার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা আছে। ডাক্তার শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলা আছে। এভাবে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আপনারা ভোট করতে চান। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত ভোট। কিন্তু ভোট কিভাবে হবে? গায়েবি মামলা মাথায় নিয়ে ভোট হবে? রাতের আঁধারে ভোট হবে? এই প্রশাসনের অধীনে? যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে তা দিতে সমস্যা কি? তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আপত্তি কোথায়? যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার শব্দে আপত্তি থাকে, তাহলে অন্য নাম দেন। অন্যের মতের প্রতি সহিষ্ণুতা থাকতে হবে। একজন আরেকজনকে সহ্য করতে না পারলে গণতন্ত্র হবে না।

পেশাজীবীদের মধ্যে কয়েকজনও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মো শফিকুল ইসলাম বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়নি। গত কয়েকটি নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা সবাই জানে। বিপরীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে সেগুলো গ্রহণযোগ্য হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করা কঠিন। একে অন্যকে দমনের নীতি থেকে বের হতে হবে। লিমিটেড ডেমোক্রেসিও উন্নয়ন, সবার জন্য এ উন্নয়ন হয় না। একটা অংশ সম্পদ লাভ করে। সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন হতে হবে।

ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাড. জহুরুল আলম বলেন, সরকার ক্ষমতায় থাকবে, প্রশাসন তাদের হাতে, তারা রাতে হোক দিনে হোক ভোট করবে, অন্যদের কিছু সিট দেবে। নির্দলীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য ভোট হবে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়বাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব প্রফেসর নসরুল কদির বলেন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অধিকার হরণ ও বাকস্বাধীনতা হরণ করে উন্নয়ন হয় না। মানুষ এখন নির্বাচন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। এখন ১০ শতাংশ ভোট পড়ছে, কদিন পর জিরোতে চলে আসবে। তারপর মাইনাস।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় যার টাকা নেই, সেই নেতা কি মনোনয়ন পাবেন? যে মনোনয়ন বাণিজ্য হয় তা কি একজন সৎ নেতার পক্ষে অতিক্রম সম্ভব? যারা সুষ্ঠু ভোটের কথা বলছেন তারা নিজেরা কি করেছেন সেটা ভুলে যান।

সভায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ভিন্ন, ভিন্ন মত এসেছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, নির্বাচন কিভাবে করব, রাতের নির্বাচন হলে আমরা যাব না। ঢাকা-১৭ আসনে কত ভোট কাস্ট হয়েছে? এভাবে হলে কেউ যাবে না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল বলেন, দেশ কি শুধু দুই দলের? অন্য কারও কি মতামত নেই? দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে, মাফিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। ভোটের কাঠামো পরিবর্তন দরকার।

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি কূটনৈতিকদের আমরা সকলে মিলে তোয়াজ করছি, যেন জনগণের কোনো প্রয়োজন নেই। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিদেশি কূটনীতিক নয়, আমার দেশের নির্বাচন এদেশের জনগণের চাওয়া অনুযায়ীই হতে হবে।

সভায় ১৪ দলের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির ভাইয়েরা কথা বলেছেন। কিন্তু ওনারা এখানে কথা বলছেন, অথচ সংসদে যেখানে বললে কাজ হতো, সেখান থেকে ওনারা বেরিয়ে এসেছেন। সংসদে ওনারা তত্ত্বাবধায়কের দাবির কথা বলতে পারতেন। নির্বাচিত হলে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনবেন, এটার ঘোষণা দিতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে ওনারা সংসদ থেকে বেরিয়ে চলে এসেছেন।

বিইআইর জ্যেষ্ঠ্য গবেষণা কর্মকর্তা সৈয়দা ফারহানা রেজার সঞ্চালনায় সভায় ডা. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচি, সাংবাদিক জসিম চৌধুরী সবুজ, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের উৎপল বড়–য়া, ১৪ দল নেতা নজরুল ইসলাম আশরাফী বক্তব্য রাখেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
আরও
Airtel Wecome Banner

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

আবারও  ভানুয়াতুতে  দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প

সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ