সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন

বিচার বিভাগে ন্যায় বিচার-মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার যেন নিশ্চিত থাকে : শেখ হাসিনা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৮ জুলাই ২০২৩, ১১:৪২ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

দেশের বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে যে তারা ন্যায় বিচার পাবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের এই দেশে মানুষের ন্যায় বিচার, গণতান্ত্রিক অধিকার, আর্থ সামাজিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার; যেন নিশ্চিত থাকে। আমরা যখনই সরকারে এসেছি সব সময় চেষ্টা করেছি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কাজেই বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সেই সুযোগটা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর একে একে বাস্তবায়ন করে দিয়েছি। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারকসৌধের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারকসৌধ বঙ্গবন্ধুর প্রতিলিপিসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহিদ আইনজীবীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে তার কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করেছে এবং অনলাইনে মামলার কার্য তালিকা, রায় এবং মামলার বিবরণ রয়েছে। যার মাধ্যমে কেউ বিদেশে অবস্থান করেও তার মামলার বর্তমান পরিস্থিতি সহজেই জানতে পারবে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশে পরিণত করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তারা আইনী ব্যবস্থাকে একটি ‘স্মার্ট বিচার’ বিভাগে পরিণত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। বিচার বিভাগকে স্মার্ট করার পথে বেশ এগিয়ে থাকায় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষকরে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সরকার ভার্চুয়াল আদালত স্থাপন করেছে যা উল্লেখযোগ্যহারে মামলার বিশাল জট কমাতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দেশের সব আদালতে দরিদ্র ও অসচ্ছল বাদী-বিবাদীদের জন্য আইনি সহায়তা চালু করেছে।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকা-ের পর দেশে ফিরে আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানতাম আমার ভাগ্যে বোধহয় একই রকম ঘটতে পারে। কিন্তু আমি পরোয়া করি নাই। আমি উপরে আল্লাহ এবং নিচে জনগণ ভরসা করেই আমি ফিরে এসেছিলাম। এই বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা সৃষ্টি করে গেছেন। সে বাংলাদেশকে আমাদের গড়ে তুলতেই হবে। জনগণের সহযোগিতায় বাংলাদেশকে একে একে বিচারহীনতা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই আর্থ সামাজিক উন্নতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছি।

১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশের আদালত ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট’র উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি এটা আমার জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে না, জাতির পিতার কন্যা হিসাবে অনেক বড় পাওয়া। আজকে আমি এখানে উপস্থিত থেকে আপনারা যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই কাজটি করতে পেরে আমি সত্যি আনন্দিত। কারণ স্মৃতি চিরঞ্জীব। আসলে স্মৃতি আমাদের সম্পদ। স্মৃতি নিয়েই আমাদের চলতে হয়। স্মৃতি বড় বেদনায় স্মৃতি বড় মধুর। দুঃখভরা স্মৃতিও যেমন আমাদের আছে মধুর স্মৃতিগুলোও থাকে। সেই স্মৃতিকে চিরঞ্জীব করার জন্য আজকে যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন, সেইজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জাতির পিতার এই স্মৃতিকে ধারণ করেছেন। যেটা হয়ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা এই সত্যকে জানতে পারবে। যে সত্য মুছে ফেলা হয়েছিল একদিন। এটাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়। তিনি আরো বলেন, যখন কোনো ঘটনা ঘটে। পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকে তো আসে আমার কাছে বিচার চাইতে বা বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য। আমার শুধু মনে হয়, আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছে এবং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কতবার এসেছি এই হাইকোর্ট। মনে হয়েছে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। আমরা কি কোনোদিন বিচার পাব না। ৩৫ বছর লেগেছে এই বিচার পেতে। ৩৫ বছর পরেই আমরা এই বিচার পেয়েছি। সেটাও যখন আমরা সরকারে আসতে পেরেছি তারপর। এ সময় সরকার গঠন করার পর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করার বিষয়েও প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।

১৫ আগস্ট ঘটনার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সেনাপ্রধান কথা নেই বার্তা নেই অমনি ক্ষমতা দখল করেই আজকে থেকে প্রেসিডেন্ট হলাম, ব্যস প্রেসিডেন্ট হয়ে গেল। তারপর রাজনীতিতে নেমে গেল উর্দি পরে, উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ এবং দল গঠন করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে এই যে একটা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা; অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য নির্বাচনকে কলুষিত করা, নির্বাচনে যে কারচুপির কালচার সেটা কিন্তু ওই কারণেই হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখনই সরকারে এসেছি, আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি একটা রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ স্বাধীনভাবে তারা কাজ করবে। কাজেই বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সেই সুযোগটা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর একে একে বাস্তবায়ন করে দিয়েছি।
জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমের উদ্বোধনী বক্তৃতায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চয়ই সুখী হতাম, যেমন আমি পি জি হসপিটালে গিয়ে দেখি যে, এতজন ডাক্তারের নাম, যারা শহিদ হয়েছে। তাদের নাম লিখে ফলক করে রাখা হয়েছে। আমি সুখী হতাম বারের সদস্য ভাইয়েরা- যে যে সহকর্মীরা, যারা শহিদ হয়েছেন। এই সুপ্রিম কোর্টের গেটে এসে দেখতে পেতাম যে শহিদের নাম সেখানে লেখা রয়েছে, আমি সুখী হতাম।’ আপনারা আজকে সেই কাজটি করে দিয়েছেন। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজউদ্দিন ফকির প্রমূখ বক্তৃতা করেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নাম বদলে হলো ‘যমুনা রেলসেতু’
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পঙ্গু করে ফেলছে : শিক্ষা উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

কুষ্টিয়া চিনিকলসহ দেশের ৬ চিনিকল চালু হওয়ায় ভারতের দম্ভ খতম!

কুষ্টিয়া চিনিকলসহ দেশের ৬ চিনিকল চালু হওয়ায় ভারতের দম্ভ খতম!

নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর

নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর

৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা

আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা

নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা

নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা

খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো

খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো

কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু

কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু

বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার

যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার

আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন

আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়

গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়