ভারতে উগ্রবাদী বিজেপি সন্ত্রাসীদের হাতে সংখ্যালঘু মুসলিম নিধনের সংবাদ বারবার বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হওয়ার পরও এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য মোদি সরকার অনুতপ্ত না হয়ে মুসলিম নিধনের হোলিখেলায় মেতে উঠেছে। ভারতকে মুসলিমশূন্য করার ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না। ভারত সরকারকে মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় বিশ্বের মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতের পণ্য বর্জনসহ ভারতকে বয়কট করার কর্মসূচি নিতে হবে। ভারতে একের পর এক মুসলিম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

পীর সাহেব চরমোনাই : ভারতের হরিয়ানায় মসজিদ জ্বালিয়ে ইমাম হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, ভারতে উগ্রবাদী বিজেপি সন্ত্রাসীদের হাতে সংখ্যালঘু মুসলিম নিধনের সংবাদ বারবার বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হওয়ার পরও এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য মোদি সরকার অনুতপ্ত না হয়ে মুসলিম নিধনের হোলিখেলায় মেতে উঠেছে। ভারতের মোদি সরকারকে মনে রাখতে হবে ভারতবর্ষ মুসলমান শাসকগণ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে। মুসলিম শাসকগণ যদি মনে করতেন ভারতকে হিন্দু শূন্য করার তাহলে আজ মোদির ঔদ্ধত্য কোথয় যেত? মুসলমানগণ বরাবরই শান্তিপ্রিয়। ইসলাম সকলের জন্য শান্তি নিশ্চিত করেছে। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, উগ্রবাদী বিজেপি সরকার যদি মুসলমানশূন্য করার খেলায় মেতে উঠেন, তাহলে বিশ্বের দুইশ’ কোটি মুসলমান নীরবে বসে থাকবে না। ভারতের উগ্রবাদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে মুসলমানদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ-আন্দোলন গড়ে উঠলে ভারতের কিছু করার থাকবে না। ইসলামী আন্দোলনের আমীর আরও বলেন, উগ্রবাদী হিন্দুরা মুসলমানদের বিভিন্ন অজুহাতে হত্যা করছে। এখনও বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে মুসলমান বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। কয়েকমাস আগে জুনায়েদ ও নাসির নামে দুইজন মুসলিম যুবককে তাদের গাড়ির ভিতর জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। সম্প্রতি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) একটি শোভাযাত্রা চলাকালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মসজিদের ইমামসহ পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে এবং আগুন দিয়ে আঞ্জুমান জামে মসজিদটি জ্বালিয়ে দিয়েছে। গেরুয়া পতাকাধারী উগ্রপন্থিরা মুসলমানদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। দিল্লির অদূরে মুসলিম অধ্যুষিত নূহ ও গুরগাঁও এলাকায় মূলত প্রশাসনের প্রকাশ্য মদদেই সে দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চলছে। ট্রেনে আগুন দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। এভাবে হত্যা নির্যাতনের মাধ্যমে কসাই মোদির সরকার ধর্মনিরেপক্ষতার আসল চরিত্র প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, উগ্রবাদী হিন্দুরা চার্চ ভাঙচুর করে মুসলমানদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। মুসলিম যুবকদের জোর করে হিন্দু দেবতাদের নামে জয়শ্রীরাম সেøাগান দিতে বাধ্য করছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ভারতের এ ধরনের রাষ্ট্রীয় জুলুম বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ বরদাশত করতে পারে না। ভারত সরকারকে মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় বিশ্বের মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতের পণ্য বর্জনসহ ভারতকে বয়কট করার কর্মসূচি নিতে হবে। ভারতের ঔদ্ধত্য সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে। এছাড়া মুসলমানদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন : ভারতের হরিয়ানায় মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া ও ইমাম হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও যুগ্ম মহাসচিব ও বাতিল প্রতিরোধ পরিষদের সভাপতি হাজি জালাল উদ্দিন বকুল। এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, কয়েকমাস আগে জুনায়েদ ও নাসির নামে দুইজন মুসলিম যুবককে তাদের গাড়ির ভিতর জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল স্থানীয় উগ্রবাদী হিন্দুরা। সম্প্রতি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ( ভিএইচপি) এর একটি শোভাযাত্রা চলাকালে সামপ্রদায়িক দাঙ্গায় মসজিদের ইমামসহ পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে এবং আগুন দিয়ে আঞ্জুমান জামে মসজিদটি জ্বালিয়ে দিয়েছে। গেরুয়া পতাকাধারী উগ্রপন্থিরা মুসলমানদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। দিল্লির অদূরে মুসলিম অধ্যুষিত নূহ ও গুরগাঁও এলাকায় মূলত প্রশাসনের প্রকাশ্য মদদেই সে দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চলছে। ট্রেনে আগুন দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। নিজেরা চার্চ ভাঙচুর করে মুসলমানদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। মুসলিম যুবকদের জোর করে হিন্দু দেবতাদের নামে জয়শ্রীরাম সেøাগান দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ভারতের এ ধরনের রাষ্ট্রীয় জুলুম বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ বরদাশত করতে পারে না।মুলত ভারতকে মুসলিমশূন্য করার জন্যই মুদি সরকার বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম নিধন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বনেত্রীবৃন্দের হস্তক্ষেপ ছাড়া ভারত সরকার মুসলমানদের ওপর অত্যাচার জুলুম বন্ধ করবে না। ভারত সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় বিশ্ব মুসলিম ভারত সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।

নেতৃদ্বয় আরো বলেন, ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নিধনের সংবাদ বারবার মিডিয়ার শিরোনাম হওয়ার পরও কারো প্রতিবাদের তোয়াক্কা করছে না ভারতের মুদি সরকার। ভারত সরকারের ঔদ্ধত্য ভারতকে টুকরো টুকরো করে দিবে। ভারতীয় মুসলমানদের জান-মাল ও অধিকার সংরক্ষণে বিশ্ব নেত্রীবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পাটি : বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর আল্লামা ছরওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার এক যুক্ত বিবৃতিতে ভারতে দফায় দফায় মুসলিম নিধনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মুসমিলম হত্যাযজ্ঞ বন্ধে মুসলিম বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। নেতৃদ্বয় বলেন, ভারতে দিল্লির পাশ্ববর্তী হরিয়ানায় দাঙ্গার নামে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বরোচিত জুলুম ও হত্যাযজ্ঞ চলছে। মুসলিম সংখালঘু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি পোড়ানো হচ্ছে এবং বাড়ি ভিটা থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের দোসর বিজেপি প্রশাসনের ছত্রছায়ায়া এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বরোচিত জুলুম ও হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা। এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাইনবোর্ড টানিয়ে বরাবরই ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের দোসর আর এস এস ইসকন এর সাম্প্রদায়িক আস্ফালনের শিকার সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়। নেতৃদ্বয় বলেন, হরিয়ানায় দাঙ্গা বন্ধে এবং মুসলমানদের জানমাল, ইজ্জত রক্ষায় বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর এক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ওপর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। নেতৃদ্বয় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও কড়া প্রতিবাদ জানানোর জন্য অনুরোধ জানান।