ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
হজ ব্যবস্থাপনা-২০২৩ : সউদী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ৪

পরিবহন নিয়ে মুয়াল্লিমদের স্বেচ্ছাচারিতা

Daily Inqilab ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

০৮ আগস্ট ২০২৩, ১১:০১ পিএম | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

সউদী এয়ারলাইন্স-এর বিশালকায় ফ্লাইটে জেদ্দা পৌঁছার পর আমাদের বলা হল, মুয়াল্লিমের নির্ধারিত বাসে আপনারা হোটেলে চলে যাবেন। পরে লাগেজপত্র প্রত্যেকের হোটেলের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। বুঝতে পারলাম, প্রত্যেক হাজীকে সউদী আরবে আগমন, অবস্থান ও পরে দেশে ফিরে যাওয়ার নিখুঁত ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে।

মুয়াল্লিম শব্দের অর্থ শিক্ষক। পূর্বে মনে করতাম, মুয়াল্লিমগণ হজের নিয়ম কানুন হাতে কলমে শিখিয়ে দেন। তাই তারা মুয়াল্লিম। আসলে এর অর্থ অন্যরকম ব্যাপক ও অর্থবহ। গোটা হজ ব্যবস্থাপনার গুরুদায়িত্ব পালন করেন সউদী সরকারের পক্ষে মুয়াল্লিমরা। ফলে সউদী আরবে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কোনো না কোনো মুয়াল্লিমের অধীনে চলে যেতে হয় প্রত্যেক হাজীকে। হাজীদের পাসপোর্ট জমা রাখা, যানবাহন ব্যবস্থাপনা, বিমান বন্দরে আনা-নেয়া, বিশেষ করে হজের মূল পর্ব মিনা, মুযদালিফা, আরাফাতে অবস্থানের তাঁবু, খাদ্য-পানীয়, পরিবহন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে মুয়াল্লিমদের মকতব বা অফিস। জানা যায়, প্রত্যেক মুয়াল্লিম অনূর্ধ্ব ৫ হাজার হাজীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে পারেন। প্রত্যেক মকতবের আলাদা নম্বর আছে। সেই নম্বর অনুযায়ী প্রত্যেক হাজীর হাতে একটি করে ডিজিটাল বেল্ট পরিয়ে দেয়া হয়। সেই বেল্টে হাজীর যাবতীয় তথ্য থাকে। ফলে এখন হজ করতে গিয়ে কেউ হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।

হাজীদের পরিবহনের জন্য যে বাস সার্ভিস তার সৌন্দর্য বাইরে থেকে যেমন দৃষ্টিকাড়া ভেতরেও মুকাইফ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। দূরের কাছের যাত্রীদের যাতায়াতের আধুনিক সুবিধাসহ মালমাল পরিবহনের মনোরম পরিবহন সউদী আরবের আধুনিকায়ন চিন্তার সাথে পুরোপুরি মানানসই, মানতে হবে।

সউদী মুয়াল্লিমদের সহযোগী আমাদের দেশীয় হজ এজেন্সীগুলোর মালিক বা প্রতিনিধিকে সউদীতে বলা হয় মুনাযযিম (ব্যবস্থাপক)। মুনাযযিমরা হাজী নিয়ে ব্যবসা করেন সত্য, কিন্তু মক্কায় তাদের দুর্গতি দেখলে করুণা হয়। মুনাযযিমরা কী ধরনের বিব্রত অবস্থার সম্মুখীন হন একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বুঝতে সক্ষম হবেন।

একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমাদের হোটেলে ৭ যিলহজ হাজীদের সমবেত করে মুনাযযিম দরদী কণ্ঠে বললেন, হজ পালনকালীন ৫ দিনের সকল দায়িত্ব সউদী মুয়াল্লিমদের ওপর ন্যস্ত থাকে। তাতে আমাদের তেমন কোনো ভ‚মিকা থাকে না। বাস্তবতা হচ্ছে, ৮ তারিখ সকালে মিনায় রওনা হওয়ার কথা থাকলেও ভিড় এড়াতে মুয়াল্লিমের গাড়ী আপনাদেরকে ৭ তারিখ দিবাগত রাতেই মিনায় নিয়ে যাবে। মিনায় ৮ যিলহজ জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও পরদিনের ফজর পড়ে আরাফাতে রওনা হওয়ার বিধান থাকলেও ৮ তারিখ দিবাগত রাতেই মুয়াল্লিমের গাড়ী আপনাদেরকে আরাফাতে পৌঁছে দেবে। যদি এ গাড়ী ফলো না করেন, নিজ দায়িত্বে যেতে হবে এবং বিপদে পড়বেন। ৯ যিলহজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান হজের মূল ফরজ। সূর্যাস্তের পরপর মাগরিবের নামায না পড়ে মুয়াল্লিমের গাড়ীতে বা পায়ে হেঁটে মুযদালিফায় প্রবেশ করবেন। হজের কঠিন পর্বটি এখান থেকে শুরু।

৯ তারিখ দিবাগত রাতে মুযদালিফায় পৌঁছেই যতই দেরি হোক মাগরিব-ইশা একসঙ্গে পড়তে হবে। রাত শেষে ফজরের নামায পড়ে অপেক্ষা করতে হবে। সূর্যোদয়ের পরপর আরাফাতের সীমানা অতিক্রম করে যেতে হবে বড় জামারায় পাথর মারার জন্য। সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপের পর কুরবানী, তারপর মাথা মুÐন করা, মক্কায় এসে কাবাঘরের যিয়ারত করা হজের অন্যতম প্রধান ফরজ। তাওয়াফ ও সায়ীর পর আপনাকে ফিরে গিয়ে রাত যাপন করতে হবে মিনার তাঁবুতে। পরবর্তী ১১ ও ১২ যিলহজও মিনায় রাত যাপন এবং ৩টি করে জামারায় পাথর মারতে হবে।

মুনাযযিম বুঝিয়ে বললেন, মুযদালিফা পৌঁছে দেয়ার পর ৯ তারিখ রাতেই মুয়াল্লিমের গাড়ী লা-পাত্তা হয়ে যাবে। কাজেই নিজ দায়িত্বে আপনাদেরকে মুযদালিফা থেকে জামারায় আসতে হবে। পাথর নিক্ষেপের পর মক্কায় হারাম শরীফে তাওয়াফে যিয়ারত ও সাফা-মারওয়ার সায়ী শেষে আবার মিনায় তাঁবুতে ফিরে যেতে হবে। বয়ষ্ক ও নারীদের জন্য পরিস্থিতিটি অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা মকতবে আপত্তি দিয়েছি। বলেছি, দেশে থাকতেই আপনারা পরিবহনের সম্পূর্ণ টাকা ব্যাংক মারফত নিয়ে নিয়েছেন। তারপরও পুরোপুরি সার্ভিস না দেয়ার কারণ কী। তারা কোনো সদুত্তর দেয় না। বলে, হুকুমাহ হুকুমাহ। হুকুমা মানে সরকার। কেউ কেউ বলে, সবাই তো স্পেশাল গাড়ী ভাড়া করে। তুমি এত চেচামেচি কর কেন। এই কথাগুলো কোথাও বলার বা অভিযোগ করার জায়গা নেই। মুয়াল্লিমদের এই স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিয়েই আমাদের হজ্বের মূল পর্বে প্রবেশ করতে হবে। কাজেই পরামর্শ হল, আলাদা স্পেশাল গাড়ী ভাড়া করতে হবে। সেই গাড়ী আজ রাত থেকে হজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সার্ভিস দেবে। তার জন্য মাথাপিছু ৮০০ রিয়াল করে দিতে হবে। ৪০ জনের কম হলে দিতে হবে ১০০০ রিয়াল করে। যারা স্পেশাল গাড়ী ভাড়া করবেন না, তাদের জন্য মুয়াল্লিমের গাড়ী আসবে। মিনা, আরাফাত ও মুযদালিফায় পৌঁছে দেবে। তারপর নাই হয়ে যাবে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান