এস আলমের ৪ ব্যাংকের বেপরোয়া ঋণ
১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
আমানতকারীর ঝুঁকি কমানো এবং ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ঋণ দেয়া বন্ধে একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সীমা লঙ্ঘন করে আগ্রাসী ঋণ দিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পগ্রæপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ৪ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা ঋণ-আমানতের অনুপাতসীমা (এডিআর) নিয়ে জুনের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারে বা বিনিয়োগ করতে পারে। ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সীমা এক্ষেত্রে ৯২ টাকা পর্যন্ত। অনেক ব্যাংক এ সীমা লঙ্ঘন করে ১০০ শতাংশের বেশি ঋণ দিয়েছে। অর্থাৎ তারা ১০০ টাকার বিপরীতে ১০০ বা তার বেশি টাকা ঋণ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এস আলমের মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (শরিয়াহ শাখা) ঋণ দিয়েছে সর্বোচ্চ ১২৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইনি সীমার বাইরে বিনিয়োগ রয়েছে বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, গেøাবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ১০১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
অথচ দীর্ঘদিন থেকেই ঋণ পাচ্ছে না ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা। নানামুখী সঙ্কট দেখিয়ে অনেক ব্যাংক এই সময়ে ঋণ দিচ্ছে না। ঋণ বঞ্চিত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মতে, তারপরও কী করে এই ব্যাংকগুলোর ঋণ গেল আর তা কোথায় গেল তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে অনুৎপাদনশীল খাতে যেন অতিরিক্ত ঋণ না যায় সেই বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্ধারিত ঋণসীমা সম্পর্কে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ-আমানত অনুপাতের সীমা (এডিআর) নির্ধারণ করে দেয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এটি মানতে বাধ্য। যদি কোনো ব্যাংক এ সীমা লঙ্ঘন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পাশাপাশি যেসব ব্যাংক সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের ঋণ দেয়ার সীমা কমিয়ে দ্রæত এডিআর সমন্বয় করা দরকার।
সীমার বাইরে ঋণ দেয়া মানে আমানতকারী ঝুঁকিতে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ ব্যাংকগুলো বেশি ঋণ দিলো, কিন্তু তাদের আমানত নেই- এমন অবস্থায় সঠিক সময়ে তারা দায় পরিশোধ করতে পরবে না। যখন দায় পরিশোধে ব্যর্থ হবে তখন ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এতে মানুষ ব্যাংকে টাকা জমানো কমিয়ে দেবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, এডিআর বেড়ে যাওয়া মানে সবাই বেশি ঋণ দিয়েছে তা নয়। অনেক সময় আমানত ওঠালে ঋণের রেশিও বেড়ে যায়। আবার ব্যাংকের মূলধন আছে, অতিরিক্ত প্রভিশন রাখা আছে, এগুলো ব্যবহার করে। তাই এটা বিশ্লেষণ না করে সরাসরি কিছু বলা যাবে না।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ-আমানতের শৃঙ্খলার জন্য একটা সীমা বেঁধে দিয়েছে, যেন ব্যাংকগুলো এর মধ্যে থাকে। যারা সীমার চেয়ে বেশি ঋণ দেবে তাদের তারল্য সংকট তৈরি হবে। এখন কিছু ব্যাংক এ সীমার বাইরে আছে। তাদের মধ্যে কিছু ব্যাংক আগে থেকেই সমস্যাগ্রস্ত। অনেকের আমানত কমে গেছে। যেসব ব্যাংক এই সমস্যায় আছে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে (ক্লোজ মনিটরিং) রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকে সমন্বয়ক বসানো আছে। যেখানেই সমস্যা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই ব্যাংকে সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তারা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের কাজ করছেন।
আমানত ও বিনিয়োগে (ঋণ) কার কী অবস্থান
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪২৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ৭৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৯২ টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকলেও চারটি ব্যাংক এ সীমা লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আমানত ৪৫ হাজার ৯১ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাদের জমা আছে তিন হাজার ১১২ কোটি টাকা। আর বিনিয়োগ করেছে ৫৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইডিএফ থেকে অর্থায়ন করেছে ১৩১৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের (শরিয়াহ শাখা) আমানত ১৬২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের জমা আছে ৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি ঋণ দিয়েছে ২৪০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ব্যাংকটির এডিআর ১২৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গেøাবাল ইসলামী ব্যাংকের এডিআর ৯৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তাদের আমানত ১১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। বিনিয়োগ ১২ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।
ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানত ১৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা চার হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। তাদের বিনিয়োগ ২৩ কোটি ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তারা ইডিএফ থেকে অর্থায়ন করেছে ১৪২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র খামারিদের ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও অনেক ব্যাংকই ঋণ দিচ্ছে না। আবার নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হলে কোন ধরণের কাগজপত্র ছাড়াই মিলছে বড় অঙ্কের ঋণ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকে বিষয়গুলো বলে আসলেও কোন লাভ হচ্ছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নিউজিল্যান্ড দলে নতুন মুখ জ্যাকবস
জালিয়াতির নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের বেতন-ভাতা ফেরত নেয়ার দাবি তুলেছে ‘সিলটি পাঞ্চায়িতের
দেড় মাস পর আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
বার্মিংহামের সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টারে কাতারের ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন
উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতই সরকারের লক্ষ্য : রিজওয়ানা হাসান
খুঁটির জোর কোথায়? আওয়ামী ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজ করে বিল নেয়ার অভিযোগ!
দুমকী উপজেলা জমিয়তে হিজবুল্লাহ সভাপতির ইন্তেকাল
সাদপন্থীদের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ
মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিক গোপাল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
ছাগলনাইয়ায় ফসলি জমির মাটি কাটায় দুইটি এক্সেভেটর জব্দ
আব্দুল্লাহ শফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড
সৈয়দপুরে সাদপন্থি তাবলীগ জামায়াতের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ
স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা ফুয়াদ হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তার কারাগারে
বাংলাদেশে আইওটি ইকোসিস্টেম উন্মোচন করেছে ওয়ানপ্লাস
শীতার্তদের মাঝে উষ্ণতা ছড়ালো ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সড়কে ছয় লেনের কাজ এগিয়ে চলছে গাড়ি চলবে ১০০ কি.মি গতিতে
আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক
সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা
সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু