আঞ্চলিক পণ্য পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দু হবে চট্টগ্রাম বন্দর
২২ আগস্ট ২০২৩, ১১:২২ পিএম | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম
চট্টগ্রাম বন্দর স্মার্ট বন্দরের পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেছেন, লক্ষ্য এখন আঞ্চলিক পণ্য পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া। তিনি বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য চাহিদা আঞ্চলিক যোগাযোগের ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব এবং বন্দরকেন্দ্রিক উন্নয়ন চিন্তায় চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সরকারও বন্দরের ধারাবাহিক উন্নয়নে তৎপর। চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।
তিনি গতকাল মঙ্গলবার বন্দর ভবনে চেয়ারম্যানের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মত চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে এ মতবিনিময় সভায় মিলিত হন তিনি। এ সময় বন্দরের সদস্য শহীদুল আলম, সচিব মো. ওমর ফারুক এবং পরিচালক মমিনুর রশিদসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো ইউরোপের সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বহির্নোঙরের আওতাবৃদ্ধি, ভিটিএমআইএস, ডিজিটালাইজেশন কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অত্যাধুনিক কী-সাইড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের মত উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এ ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ১১ বা সাড়ে ১১ মিটার গভীরতার জাহাজ জেটিত ভেড়ানো সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাঙালি জাতির জন্য একটি সম্পদ। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের মোট বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কন্টেইনারজাত পণ্যের ৯৮ শতাংশ পরিবাহিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করছে ২৫০ বছর পুরোনো এই বন্দর। বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে কন্টেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অন-অ্যারাইভেল বার্থিং প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ^ অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে এর তেমন প্রভাব পড়েনি বরং কর্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে এবং কম রফতানিতে আমাদের আয় বেড়েছে। গেল জুন মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ রফতানি বেড়েছে। যার ৮৪ শতাংশ জুড়ে ছিল তৈরি পোশাক। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টিইইউএস। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ মেট্রিক টন। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২৫৩টি।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম শহরের অনেক বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। এ কারণে নদীর গভীরতা দিন দিন কমছে। অনেক বর্জ্য আমরা সরিয়েছি। এটি প্রাকৃতিক চ্যানেল। আগামী বছরের মধ্যে ১১ মিটার বা সাড়ে ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দর জেটিত ভেড়ানো সম্ভব হবে আশা করি। এর জন্য নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে দিন নেই, রাত নেই, কোনো হলিডে নেই। ২৪ ঘণ্টা সাত দিন সচল থাকে। আমাদের বন্দর সারাবিশ্বে সমাদৃত। বিভিন্ন দেশ ব্যাপক বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। আগামী তিন বছরে ৫-৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে আশাকরি। একইসঙ্গে নতুন প্রযুক্তি আসবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক দেশ আমাদেরকে অনুরোধ করে চট্টগ্রাম বন্দর যাতে তাদের সঙ্গে কাজ করে। বিশ্বের ১০০টি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের স্থান এখন ৬৪তম।
তিনি বলেন, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। জাহাজ ওখানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অচিরেই এটাকে পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যবহার করা হবে। আগামী মাসে অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ হবে। অক্টোবর মাস থেকেই বে-টার্মিনালের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক শেষ করতে পারবো বলে আশা রাখি। সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ডিসেম্বরে বন্দরের নতুন কেমিক্যাল শেড চালু করা সম্ভব হবে। পিসিটি পরীক্ষামূলক চলছে। বে-টার্মিনাল ও ব্রেক ওয়াটারের ডিজাইনের কাজ চলছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ১০-১২ হাজার কন্টেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। বড় জাহাজে পণ্য আনা হলে ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা পাবে।
সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমদানি করা পণ্য দ্রুততর খালাস ও রফতানিযোগ্য পণ্য দ্রুত জাহাজীকরণে ভবিষ্যৎ চাহিদাকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদী কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধাদি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নতুন নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করছে।
ইতোমধ্যে ৫৮৪ মিটার দীর্ঘ জেটিসহ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমান ও ভবিষ্যতে কন্টেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন হেভি লিফট জেটি, বে-টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রকল্পসমূহের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান সক্ষমতা বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ধামরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
ঢাকা মহানগর মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবক আহত
কুমিল্লা জজকোর্টের ৩ পিপি-এপিপিকে সংবর্ধনা
চুয়াডাঙ্গার রেলস্টেশন এলাকা থেকে ১৪টি অবৈধ স্বর্ণেরবার উদ্ধার, আটক ৩
জাহাজে ৭ খুনের ঘটনার দ্রুত সুরাহা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘ছাত্র-জনতা সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়েছে’
পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই
‘ট্রানজিটের নামে দিল্লিকে দেয়া করিডর জনগণ মেনে নেয়নি’
বদলির ৩ মাস পরই পূর্বের কর্মস্থলে ফিরলেন শরীয়তপুরে সদর হাসপাতালের ক্যাশিয়ার বজলুর রশিদ
বগুড়ায় যথাযথ মর্যাদায় বড়দিন পালন
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার