আত্মহত্যা প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মানার বিকল্প নেই
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার প্রবণতা মহামারির রূপ ধারণ করেছে। আত্মহত্যা মহাপাপ এবং জঘন্যতম কবিরা গুনাহ। যারা ডিপ্রেশন, জেদ, নিঃসঙ্গতা ঘুচাতে কিংবা পার্থিব জীবনের দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে বাঁচতে আত্মহননের মতো ভয়াবহ পথে পা বাড়ায়, তারা যদি বুঝতো এর ভয়াবহ শাস্তির কথা তাহলে কোনোভাবেই এই পথে পা দিত না। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আত্মহত্যাকারীর পরকালীন কঠোর আজাবের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি জুলুমের বশবর্তী ও সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে খুব শীঘ্রই আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ। (সুরা: নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)। আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি হাদিসে এর কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে। জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি আহত হয়ে (ধৈর্য না ধরে) আত্মহত্যা করে। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারী)।
খতিব আরও বলেন, আগামীকাল ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে প্রতি দুই মিনিটে তিনজন অর্থাৎ ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানুষ আত্মহত্যা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সংখ্যাটি উদ্বেগজনক। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২০-এ কোভিড মহামারি শুরুর ১০ মাসে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১১ হাজারের বেশি মানুষ। নাউজুবিল্লাহ। গত ২৭ জানুয়ারি আঁচল ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্য মতে, দেশে দৈনিক গড়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। তন্মধ্যে অধিকাংশই মেধাবী শিক্ষার্থী। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠাসহ আত্মহত্যা প্রতিরোধে আধুনিক বিশ্বের গ্রহণ করা কোনো কর্মপন্থাই ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, ইসলাম নির্দেশিত কর্মপন্থা ও ধর্মীয় অনুশাসন না মানা। ইসলাম আত্মহত্যাকে মহাপাপ এবং ঘৃণ্য কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। রাসূল (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি যেই জিনিস দ্বারা আত্মহত্যা করে, কেয়ামতের দিন তাকে সেই জিনিস দ্বারাই শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে, সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে, সে দোজখেও সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে। (নাসাঈ)। অন্য আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আত্মহত্যাকারীর প্রতি প্রচ- রাগান্বিত হয়ে তার জানাজার নামাজ পর্যন্ত পড়েননি। সুতরাং আত্মহত্যা প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মানার বিকল্প নেই। এ মহাপাপ থেকে বাঁচতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা এবং সবরের আমল করতে হবে। সব ধরনের দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট এবং ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত, দুরূদ পাঠ, জিকির ও ইস্তিগফার করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তৌফিক দান করেন, আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মানবজীবনে অলসতা বড় এক অভিশাপ। ধংসাত্মক স্বভাব। ইহকাল ও পরকালে তার প্রভাব খুবই খারাপ এবং অনিষ্ঠকর। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। আলস্য জীবন মানুষের শুধু অবনতিই ডেকে আনে না উন্নতির পথে এক মহা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পরিবর্তে অবমাননাকর জীবনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। সুস্থ মানুষ অলসতার কারণে রোগাক্রান্ত এবং শক্তিধর ও সম্পদশালী ব্যক্তিরাও নিঃস্ব হয়ে যায়। অলসতা ও বেকারত্বের কারণে এক সময় মেধাবীরাও বিকারগ্রস্ত হয়ে পাগল রূপ ধারণ করে। আলস্যতা মানুষের জীবনের সব ধরনের বরকত নষ্ট করে দেয়। এমনকি (আল্লাহ মাফ করেন) আল্লাহর বিধান পালনে আলসেমীর কারণে মানুষের জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারেও হুমকি দেয়া রয়েছে পবিত্র কোরআনুল কারীমে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নামাজে আলসেমী মুসল্লিদের জন্য ওয়ায়েল দোজখ।(সুরা মাউন, আয়াত নং-৪ ও ৫)। এসব কারণেই ইসলামে অলসতা ও উদাসীনতার কোনো স্থান নাই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, মুমিনের ওপরে নির্ধারিত সময়ে নামাজ (আদায়ের জন্য) ফরজ করা হয়েছে সুরা নিসা, আয়াত নং-১০৩)। অলসতার কোনো অবকাশ নাই। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে অধিক উত্তম ও প্রিয়। তুমি ওই জিনিসে যতœবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে। আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। আর উৎসাহ-উদ্দীপনাহীন (অলস) হয়ো না।’ (মুসলিম : ৪৮২২)। অন্যত্র রাসূল (সা.) আরও বলেন, তোমাদের কেউ যখন রাতে ঘুমায় তখন শয়তান তার ঘাড়ের ওপর তিনটা গিরা লাগিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিরায় সে এই মন্ত্র পড়ে ফুঁ দেয় যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত; অতএব তুমি ঘুমাইতে থাক। বান্দা যদি রাত্রে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তাহলে একটা গিরা খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে তাহলে দ্বিতীয় গিরাও খুলে যায়। তারপর যদি তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সবগুলো গিরাই খুলে যায়। ফলে সকালবেলা সে অত্যন্ত সতেজ ও ঝরঝরে মেজাজের অধিকারী এবং কর্মদ্যোম থাকে। তার অনেক বড় কল্যাণ অর্জিত হয়। আর যদি ঘুম থেকে না ওঠে ও তাহাজ্জুদ না পড়ে তাহলে সে অলস ও মন ভারাক্রান্ত থাকে। অনেক বড় কল্যাণ থেকে সে বঞ্চিত থাকে।’ (বুখারি : ১১৪২; আবু দাউদ : ১৩০৬; ইবনে মাজা : ১৩২৯)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মৃত্যুকে একটি ধুসর রঙের মেষের আকারে আনা হবে। তখন একজন সম্বোধনকারী ডাক দিয়ে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তখন তারা ঘাড়-মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। সম্বোধনকারী বলবে, তোমরা কি একে চিনো? তারা বলবেন হ্যাঁ, এ হলো মৃত্যু। কেননা সকলেই তাকে দেখেছে। তারপর সম্বোধনকারী আবার ডেকে বলবেন, হে জাহান্নামবাসী! জাহান্নামীরা মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে, তখন সম্বোধনকারী বলবে তোমরা কি একে চিনো? তারা বলবে, হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। কেননা তারা সবাই তাকে দেখেছে। তারপর (সেটিকে) জবেহ করা হবে। আর ঘোষক বলবেন, হে জান্নাতবাসী! স্থায়ীভাবে জান্নাতে থাকো। তোমাদের আর কোনো মৃত্যু নেই। আর হে জাহান্নামবাসী! চিরদিন জাহান্নামে থাকো। তোমাদের আর মৃত্যু নেই। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তেলাওয়াত করলেন, তাদের সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে, যখন সব ফয়সালা হয়ে যাবে অথচ এখন তারা গাফিল (অলস ছিল), তারা অসতর্ক দুনিয়াবাসী-অবিশ্বাসী। (বুখারি ও মুসলিম)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে অলসতামুক্ত জীবন গঠন করার তাওফিক দান করেন। আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা