আমার স্বামী টোটালি আউট অব মাইন্ড ছিলেন এডিসি সানজিদা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে শাহবাগ থানায় মারধরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্টের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন। তিনি বলেছেন, এডিসি হারুন অর রশিদকে প্রথমে মেরেছিলেন তার স্বামী প্রেসিডেন্টের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক।
বেসরকারি চ্যানেল আইয়ের ইউটিউব চ্যানেলে গতকাল মঙ্গলবার প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে গত শনিবারের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন এডিসি সানজিদা আফরিন। সাক্ষাৎকারটি গতকাল বিকেলে প্রচার করা হয়।
অবশ্য বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্টের এপিএস আজিজুল হকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁকে একাধিকবার কল করা হয়েছে, খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে, তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
চ্যানেল আইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এডিসি সানজিদা বলেছেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তিনি বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। চিকিৎসক দেখাতে সহকর্মী হিসেবে এডিসি হারুনের সহায়তা নেন তিনি। হঠাৎ তার স্বামী আজিজুল হক কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেন। এডিসি হারুন ও তাঁকে মারধর করেন তার স্বামী।
সানজিদা আরো বলেন, তার স্বামীর সঙ্গে থাকা কয়েকজন অসৎ উদ্দেশ্যে দুজনের (এডিসি হারুন ও সানজিদা) ভিডিও করেন। তাঁদের হাত থেকে বাঁচার জন্য এডিসি হারুন থানা-পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে হারুনকে উদ্ধার করে।
ওই দিন সন্ধ্যায় তার স্বামী আজিজুল হক স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না বলেও দাবি করেন এডিসি সানজিদা। তিনি বলেন, সেদিন আমার স্বামী (আজিজুল হক) টোটালি আউট অব মাইন্ড (মানসিক অবস্থা ঠিক ছিল না) ছিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে সানজিদা আফরিন বলেন, তিনি অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। ল্যাবএইডের একজন চিকিৎসককে নিয়মিত দেখান তিনি। তবে ওই চিকিৎসক দেশের বাইরে আছেন। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তিনি বারডেমে একজন চিকিৎসক দেখাতে চান। হাসপাতালটির অবস্থান রমনা এলাকার মধ্যে হওয়ার কারণেই চিকিৎসক দেখাতে সহকর্মী এডিসি হারুনের সহায়তা চান। শাহবাগ থানার ওসির (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মাধ্যমে এডিসি হারুন একজন চিকিৎসকের সময় নেন (অ্যাপয়েন্টমেন্ট)। তবে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, ওই চিকিৎসক একটি কনফারেন্সে ব্যস্ত। রোগী দেখতে পারবেন না। বিষয়টি তিনি এডিসি হারুনকে জানান।
জরুরিভাবে চিকিৎসক দেখানো দরকার বলে বিষয়টি এডিসি হারুনকে জানান দাবি করে সানজিদা বলেন, স্যারকে বলি, অন্য কাউকে (চিকিৎসক) ম্যানেজ করা যায় কি না। স্যার আশপাশেই ছিলেন। স্যার বললেন, আমি এসে দেখি কাউকে (চিকিৎসক) ম্যানেজ (দেখানোর ব্যবস্থা) করা যায় কি না। বেশ কিছুক্ষণ পর স্যার আসেন। কয়েকজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে একজন ডাক্তারকে দেখাই।
চিকিৎসক বেশ কিছু পরীক্ষা করতে দেন জানিয়ে সানজিদা বলেন, ইনসিডেন্টের (ঘটনার) সময় আমি ইটিটি করাচ্ছিলাম। ইটিটি (শারীরিক পরীক্ষা) করাতে সময় লেগে যায় ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো। ইটিটির শেষ পর্যায়ে রুমের বাইরে হট্টগোল শুনতে পাই। হট্টগোল হচ্ছিল, চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছিল। প্রথম যে সাউন্ডটা শুনতে পাই, সেটা হলো স্যার (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছিলেন, ভাই, আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না।
সানজিদা আফরিন বলেন, প্রথমে ধারণা হয়েছিল, অন্য কারো সঙ্গে একটা ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই যে আমার স্বামী...উনি কেন গিয়েছেন, কী করছেন, কিছু জানি না। টোটালি আউট অব মাইন্ড ছিলেন। উনি উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। ওনার সঙ্গে বেশ কয়েকজন ছেলে ছিল। তাদের আমি চিনি না।
এডিসি হারুনকে তখন মারতে মারতে পরীক্ষাকক্ষে নেওয়া হয় জানিয়ে সানজিদা বলেন, রুমটার ভেতর নিয়ে আসার সময় তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) মারছিলেন। স্যার অনেকটা বাঁচার জন্য ইটিটি রুমের কোনায় গিয়ে দাঁড়ান। ওই সময় আনফরচুনেটলি (দুর্ভাগ্যবশত) আমার হাসব্যান্ড ওই ছেলেগুলোকে বলছিলেন, তোরা এই দুজনের ভিডিও কর।
সানজিদা আরো বলেন, আমি তখন ইটিটির পোশাকে ছিলাম। আপনারা জানেন যে ইটিটির পোশাক কী রকম থাকে। স্বাভাবিকভাবে পোশাকটি শালীন অবস্থায় ছিল না। আমি হাসব্যান্ডের সঙ্গে শাউট করছিলাম, এই রুমে তো কোনো ছেলে ঢোকার কথা নয়। আপনি ঢুকেছেন, এতগুলো লোক নিয়ে কেন ঢুকেছেন? তো আমি শাউট করছিলাম। তখন তিনি আমাকেও দুই–তিনটি চড় মারেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, আমার ড্রাইভার (গাড়িচালক) ছুটে আসে। মাঝখানে দাঁড়ায়। ড্রাইভারের ওপর দিয়ে আমার গায়ে হাত তোলা হয়।
সানজিদা আরো বলেন, একটা পর্যায়ে যাঁরা ভিডিও করছিলেন, একটা ছেলে। আমি হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। তার সঙ্গে হাতাহাতি, এমন একটা সিচুয়েশন (পরিস্থিতি) তৈরি হয়ে যায়। আমি কোনো অবস্থাতেই চাচ্ছিলাম না, ওই পোশাকে আছি, এই অবস্থায় ভিডিও হোক।
সানজিদা আরো বলেন, ইনটেনশন (উদ্দেশ্য) দেখে মনে হয়েছে, তারা দুজনকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে একটা ভিডিও করতে চাচ্ছেন। পরবর্তীতে তারা সেটি ইউজ (ব্যবহার) করবেন, একটি অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য।
এডিসি সানজিদার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের শিকার হওয়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, এডিসি সানজিদার সাক্ষাৎকার তিনি দেখেছেন। খুবই অবাক হয়েছেন।
শরীফ আহমেদ বলেন, আমরা গিয়ে দেখি, বিষয়টি পারিবারিক। তখন আমরা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করিনি। কাউকে মারধর তো প্রশ্নই আসে না। কারও ভিডিও আমরা করিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঢাবি সাদা দলে ভাঙন, পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা
রাইখালীতে পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা
বাঘায় রত্নগর্ভা হাসনা-হুদা দম্পতির ১২ সন্তান উচ্চ শিক্ষায় সফল
শহীদ জিয়ার মিঠাছড়া খাল খননে হাজারো কৃষকের ভাগ্য খুলেছিল ' - মীর হেলাল
ঝিনাইগাতীতে আইন শৃঙ্খলা কমিটিসহ ৪ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে ভিজিডির ৫১ বস্তা চুরি
গোলাপগঞ্জে মাদক সেবনের অপরাধে দুই জনকে জরিমানা ও কারাদণ্ড
ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন থেকে রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষা নেয়নি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ঢাকাকে উড়িয়ে আসর শুরু রংপুরের
নিজ জমিতে যাওয়া হলো না সিলেটে এক ব্যবসায়ীর : হামলা করলো যূবদলনামধারী ভূমিখেকো চক্র
প্রতারণার দায়ে অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে সমন জারি
রেকর্ড পুনরুদ্ধার করে শাহিদির ২৪৬, রেকর্ড গড়ল আফগানিস্তানও
‘ইসলাম প্রচার প্রসারে সউদী সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে’
টেলিটকের দুটি স্পেশাল ডাটা প্যাকেজের উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সরকার: প্রেস সচিব
এসিআই লিমিটেড ২০ শতাংশ নগদ এবং ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে
এবার ছাত্রদল সভাপতির পাশে দাঁড়ালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কোয়ালিফাইয়ারের বাধা টপকাতে চায় রংপুর
খুশদিলের শেষের ঝড়ে রংপুরের বড় সংগ্রহ
চোখের চিকিৎসায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ইস্পাহানী চক্ষু হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগ