খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তির আল্টিমেটাম
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। ছল-চাতুরি করে কোনো লাভ। পরিবার থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে মুক্তির কথা বলা ছিল। একইভাবে চিকিৎসার জন্য তার বাইরে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা এবং মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই দাবি জানান। তিনি আরো সরকার বেমালুম মিথ্যা কথা বলছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম। বেলা ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন। সমাবেশ শুরুর সময় বিজয়নগর নাইট এঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এ সময় নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে টিকিৎসার জন্য প্রেরণের লক্ষ্যে মুক্তির দাবি করে শ্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আশা করে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। মনে করেছিলেন একটি সুরাহা হবে। অথচ, উনি ওখানে থাকতেই বাংলাদেশের প্রতি স্যাংশন জারি করলো আমেরিকা। এই ভিসানীতি দেশের জন্য সম্মানের নয়। আজকে শুধু আমেরিকা নয়, বাংলাদেশের মানুষও এ সরকারকে স্যাংশন দিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, গতশনিবার দেশনেত্রীকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমি কখনও তার চোখে পানি দেখেনি। তিনি অনেক শুকিয়ে গেছেন। ঠিক কথা বলতে পারছেন না। আজকে দেশের গণতন্ত্র মুক্তির জন্য গৃহবন্দী হয়ে আছেন। ডাক্তার আমাকে বলেছেন, আপনাদের কিছু করার থাকলে করেন, তার শারীরিক অবস্থা ভাল না। আমি আবারও বলছি তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, তার কিছু হলে বিএনপির নয়, জনগণের ক্ষতি হবে, গণতন্ত্রের ক্ষতি হবে, দেশের বড় ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, কয়েকদিম আগে জার্মান রাষ্ট্রদূত আমাদের অফিসে এসে জানতে চেয়েছিলেন বেগম জিয়া কেমন আছেন। তিনি পৃথিবীর প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তাকে আমরা এভাবেই সম্মান করি। সারাবিশ্ব তাকে এভাবেই সম্মান করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে নেত্রী দেশের প্রয়োজনে গনতন্ত্রের জন্য গৃহিণী থেকে রাজপথে নেমেছেন। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে আজকে তাকে বিনা চিকিৎসায় আটক করে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছে। খালেদা জিয়ার বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা চালু করেছিলেন। এরপর চারটি নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। সরকার যখন দেখলো নিরপেক্ষ নির্বাচনে সিটি নির্বাচনে তাদের পরাজয় হলো তখন বুঝতো পারলো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা আর কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাই রাতারাতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করা হলো। সেদিনই খালেদা জিয়া বলেছিলো দেশে স্থায়ীভাবে সংঘাত সৃষ্টি হবে। হলোও তাই। ২০১৪ ও ১৮ সালে তাই হয়েছে। আজকে সারাদেশের মানুষ বলছে এ সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আজকে গণতন্ত্রকামী কোনদলই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না। তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা পরিকল্পিতভাবে ১৫ বছর ধরে শুধু বিএনপি নয়, দেশের মানুষকে অত্যাচার করে যাচ্ছেন। এরা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে আবারও একতরফা নির্বাচন করতে চায়। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে আন্দোলন স্তব্ধ করতে চায়।
মির্জা আব্বাস বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিএনপির কোন মাথা ব্যাথা নেই। কিছু সাবেক ও বর্তমান আমলা মিটিং করেছে, তারা নাকি এই সরকারকে রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করতে চায়। এখন আবার পুলিশের কিছু কর্মকর্তা নাকি বৈঠক করে যাচ্ছে, যেভাবেই হোক, বিএনপির আন্দোলন দমন করতে হবে। মিটিং আর গোপনে করবেন না, প্রকাশ্যে করেন। জয়ের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলে তার মায়ের কোন আফসোস নেই কিন্তু আমার আপত্তি আছে, এটাতো তার বাবার টাকা নয়, এ দেশের টাকা মেরে সে বিদেশ নিয়ে গেছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা প্রকৃতিকে জয় করতে পারে তারা এই স্বৈরাচারকে পতন ঘটাতে পারবে। আপনারা বৃষ্টির মধ্যে বসে ছিলেন। আপনারা পারবেন। বিচাপতিদের সমালোচনা করেন তিনি বলেন, অন্যদের মুক্তি দেন, অথচ কেন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন না। এর বিচার একদিন দেশের মানুষ করবে। তার বিদেশ চিকিৎসা নেয়া সাংবিধানিক অধিকার। কেন যেতে দিচ্ছেন না? আদালত আমাদের সাথে নির্দয় আচরণ করে যাচ্ছে। যে মামলার তারিখ পড়তো এক মাস পর, তার ডেট দিচ্ছে সপ্তাহ মধ্যেই। এতে কি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? না। পারবেন না। এখন আমাদের পিছনে যাওয়ার জায়গা নেই, এখন সামনে যেতে হবে। ডু অর ডাই। এর মাঝামাঝি কোন জায়গা নাই।
বেগম খালেদা জিয়াকে কেন রাজনৈতিকভাবে মামলা করা হয়েছে এমন প্রশ্নে রেখে ড. মঈন খান বলেন, তার মামলার কোন স্বাক্ষ্য, প্রমাণ ছিল না। আজকে বলতে হবে এই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। সরকার মনে করছে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে, গণতন্ত্র হত্যা করা যাবে। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। দেশের মানুষ বিএনপি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাথায় তুলে রেখেছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। ৫০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এই সরকার। বিএনপিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখে ভোট চুরি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য মুক্তি ভিক্ষা মনে করছে সরকার। এই বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার, অন্যায়ের কাছে কখনো নত করেননি। সরকার তার চিকিৎসা নিয়ে খেলা করে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, দেশের প্রত্যেকটি মানুষ প্রহর গুনছে কবে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করতে নেয়া হবে। নইলে দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, কয়েকদিন আগে বললো আমেরিকা যাবো না, কোনো কূল না পেয়ে এখন বলছে আমরা আমেরিকাকে স্যাংশন দিবে। প্রধানমন্ত্রী আপনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিবেন। আপনার আইনশৃংখলা বাহিনীই বলছে আমরাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছি। বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর লাইন করে নিজেকে সেভ করার জন্য, প্রশাসনকে নয়।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু
রিহ্যাব মেলায় গতকাল আশিয়ান সিটি’র ১৩ নং স্টলে ছিল ক্রেতাদের ভীড়।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২৬ নারী-পুরুষ ও শিশু
লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন গ্রেফতার
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ল
দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ
শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক
দৌলতদিয়ায় বড়দের আদলে ছোটদের জমজমাট নির্বাচন
বাজারে সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে: নূর
খতমে নবুওয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
প্রকৃত তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সংবাদ করুন: প্রেস সচিব
কুষ্টিয়ায় ভেড়ামারায় দুই প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা ও কারাদন্ড
‘চাঁদাবাজ দখলবাজরা জুলাই অভ্যূত্থানের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করছে’
মানিকগঞ্জে আগামীকাল তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ
আটঘরিয়ায় দলীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ
প্রত্যেক ধর্মের শান্তির বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে: ড. ইউনূস
গোয়ালন্দে নবাগত ইউএনও নাহিদুর রহমানের যোগদান