ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

অনলাইনে সরকারের ক্রয়কার্যে দুর্নীতি বেড়েছে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

অনলাইন ভিত্তিক সরকারি ক্রয়কার্য (ই-জিপি) সম্পাদন হওয়ার ফলে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে দরপত্র ছিনতাই, জমাদানে বাধা দেওয়া এবং শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা বন্ধ হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে দুর্নীতি নির্মূলে যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। বরং দুর্নীতি আরো বেড়েছে। এমন তথ্য দিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গতকাল সোমবার ধানমন্ডিতে টিআইবির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। ‘বাংলাদেশে ই-সরকারি ক্রয় : প্রতিযোগিতামূলক চর্চার প্রবণতা বিশ্লেষণ (২০১২-২০২৩)’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন উপলক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন টিআইবির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট লোকজন ও ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে কাজগুলো দিয়ে থাকে। এতে দেখা যায়, একই প্রতিষ্ঠানের একাধিক দরপত্র জমা পড়ে। অন্য প্রতিষ্ঠানের দরপত্র পড়ার সুযোগ থাকে না। এর ফলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়। ই-জিপিতে নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের বাইরের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার যে আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি।
ই-জিপির ক্ষেত্রে যেসব দুর্নীতি হয় তুলে ধরা হয়- অনলাইনে সরকারি ক্রয়কার্যে শীর্ষ ৫ ভাগ ঠিকাদার মোট কাজের ২৬ ভাগ করছে এবং প্রতি বছরেই তাদের কাজের পরিধি বাড়ছে। অন্যদিকে নিচের দিকে ১০ শতাংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ কাজ করছে এবং প্রতিবছর তাদের হিস্যা কমছে।
সরকারি ক্রয়কার্যের এক-চতুর্থাংশ ক্রয়কার্যে সম্পন্ন হয় একটি মাত্র দরপত্রে। কেস স্টাডি হিসেবে কুষ্টিয়া জেলার হোসেনাবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন নির্মাণে দরপত্র কার্যক্রম উপস্থাপন করে টিআইবি। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণে একটি মাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালেক এন্টারপ্রাইজ একাই ২৫টি দরপত্র কেনে এবং কাজটি পায়, ইতোমধ্যে কাজটি সম্পন্নও করেছে। একক দরপত্রের মাধ্যমে দেওয়া কার্যাদেশের আর্থিক মূল্য ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ই-টেন্ডারিংয়ের সম্পাদিত কাজ ও পণ্যের ১৫ শতাংশ।
নির্দিষ্ট কিছু দরপত্র দাতা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা একক দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়কার্য সম্পাদন করে থাকে। সোনাইমুড়ি, বরগুনা ও দাগনভূঞা পৌরসভায় সর্বোচ্চ ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ একক দরপত্র পড়ে। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পড়ে ৬২ দশমিক ৭০ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশন, ৫৫ দশমিক ২১ শতাংশ।
টিআইবির গবেষণায় উঠে আসে, দরদাতাদের উন্মুক্ত দরপত্রে আগ্রহ কম। কারণ এ পদ্ধতিতে প্রতিযোগিতার চেয়ে নেগোশিয়েশনের সুযোগ থাকে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল নাগাদ দরপত্র জমা দেওয়ার হার বাড়ে। ২০১১ সালে যেখানে গড় দরপত্র জমা পড়ে দুটি। ২০১৫ সাল নাগাদ বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০১৬ সালে এর হার বেড়ে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে পৌঁছায়। ২০২১ সালে আরো বেড়ে ৩৫ অতিক্রম করে। এর মধ্যে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে জমা পড়ে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর সীমিত দরপত্র ৪৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
দরপত্র অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হওয়ার কারণে সরকারি অর্থ অপচয় হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব তুলে ধরে টিআইবির গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, সরকারি ক্রয়কার্যে চার শতাংশের নিচে দরপত্র জমা পড়লে তা অস্বচ্ছ কার্যক্রম বলে বিবেচিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের চারটির নিচে দরপত্র জমা পড়ে ৪৬ শতাংশ। আর চারটির বেশি জমা পড়ে ৫৪ শতাংশ।
বর্তমানে ২৫ কোটি টাকার নিচে টেন্ডারিং হয় অনলাইনে। বাকি টেন্ডার কার্যক্রম অনলাইনের বাইরে। অনলাইন বা ই-টেন্ডারের থাকা কার্যক্রম টেন্ডারের আওতায় আনা, প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা; সীমিত দরপত্র পদ্ধতি ঢেলে সাজিয়ে সরকারি ক্রয় সম্পর্কিত ২০০৬ সালের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা এবং প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য যোগসাজশ বন্ধসহ সাতটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে টিআইবি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা