শেষ হচ্ছে না অল্প সময়
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এই সময়ে কখনো কেবিনে তো কখনো সিসিইউতে স্থানান্তর করা হচ্ছে তাকে। গতকাল শুক্রবার বিকেলেও বেগম জিয়াকে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে বিকেলে তাঁকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। এর আগেও গত দুই সপ্তাহে খালেদা জিয়াকে দুই দফায় সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।
তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা অবনতিশীল। বিশেষায়িত হাসপাতালে তার দ্রুত উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। অন্যত্থায় যেকোন সময় যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে। দল ও খালেদা জিয়ার পরিবারও সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
এটিকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের সদস্যরাও বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুততম সময়ে কোন দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া যায় সেবিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু আইনমন্ত্রীর বলা ‘অল্প সময়’ দুইদিন পার হয়ে গেলেও শেষ না হওয়ায় হতাশ বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে, এখন গৃহবন্দী রেখে তাকে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একটি মাত্র কারণ, তারা জানে যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি বাইরে থাকেন তাহলে জনগণের ¯্রােত নামবে, সেটিকে তারা বন্ধ করতে পারবেন না। এবং তাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি তার পরিবার থেকে যে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে আবেদন করা হয়েছে, সরকার সেটি বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবে।
খালেদা জিয়া পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে, তাঁর বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁকে বিদেশে নিতে চেয়ে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলতে পারে, এমনটাই আশা পরিবারের সদস্যদের। খালেদা জিয়ার পরিবারের ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে দ্রুত যাতে খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া যায়, সে জন্যই এ প্রস্তুতি। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর, এই চার দেশের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন।
বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তাঁর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এ কারণে তাঁকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে এবং কখনো কখনো তাঁকে সিসিইউতে নিতে হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া কিডনি, ফুসফুস, হৃদরোগ, লিভার জটিলতায় ভুগছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। লিভার সিরোসিসের কারণে শরীরে পানি জমে যাচ্ছে। এগুলো দু’এক দিন পরপরই বের করতে হচ্ছে। আর ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহে খনিজের অসমতা) হওয়ায় শরীরে দুর্বলতা রয়েছে। এগুলোর উন্নতির চেষ্টা চলছে। স্যুপ ও তরল জাতীয় কিছু ছাড়া তিনি তেমন কিছু খেতে পারছেন না। হাসপাতালের বিছানায় সারাক্ষণ থাকছে হচ্ছে ইনজেকশন ও স্যালাইনের ওপর। একা একা বিছানা থেকে নামতে পারছেন না, পারছেন না হাঁটা-চলা করতে। এমনকি কারো সাহায্য ছাড়া বাথরুমেও যেতে পারেন না। হাসপাতালে বেগম জিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকছেন ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।
দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। শেষ গত মার্চ মাসে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শেরপুরে জেল পলাতক হত্যা মামলার ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
মুসলিম জাগরণের অগ্রপথিক মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ আজ জন্মদিন
গত সাড়ে ১৫ বছর যারা শাসন করেছে, তারা দেশকে না সাজিয়ে নিজেদেরকে সাজিয়েছে: আমীরে জামায়াত
রাজস্থানে ৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি ৭০০ ফুট গর্তে আটকে থাকা শিশু
জকিগঞ্জে বালাউটি ছাহেবের ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে ভক্ত-মুরিদানের ঢল
‘অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা এই কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে’
বিমান হামলায় গাজায় একসঙ্গে ৫ সাংবাদিককে হত্যা
বান্দরবানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো নির্মাণের নির্দেশ
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সচিবালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে উপদেষ্টারা
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরায়েলের
ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা বাদ জোহর, অংশ নেবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সচিবালয়ের আগুন লাগা ভবনেই উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফের মন্ত্রণালয়
সচিবালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
চাঁদপুরে দুই উপজেলার মধ্যবর্তী সেতু ভেঙ্গে পড়েছে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাস মালিককে কুপিয়ে হত্যা
মোজাম্বিকে কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় নিহত ৩৩, দেড় হাজার বন্দির পলায়ন
কেনাকাটার সময় আমরা সাধারণত যে ভুলগুলো করি
মিরপুরে সাংবাদিকদের ২১ বিঘা জমি এখনও ইলিয়াস মোল্লাহর দখলে!
রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মিলন গ্রেপ্তার
ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার